পোয়ারো এবার মুখ খুললেন। তিনি বললেন আমি যখন এসেছিলাম তখন বিশাল চেহারার একজন সৈনিক পুরুষকে দেখেছিলাম। তিনি কে?
মি. রেইলির কোনো রোগী হবে হয়তো। লিস্টটা একবার দেখতে হবে। বলেই মিস নেভিল ভেতরের ঘরে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে এল সে। হাতে একটা নোটবই দেখতে অনেকটা মি. মর্লের নোট বইয়ের মতো।
মিস নেভিল পড়তে লাগল দশটায় ন’বছরের মেয়ে বেটি হিথ, এগারোটায় কর্নেল অ্যাবারক্রমবি।
পোয়ারো নামটা শুনে চমকে উঠলেন। বিড় বিড় করে উচ্চারণ করলেন, অ্যাবারক্রমবি! সাড়ে এগারোটায় মি. হাওয়ার্ড রেইকস। বারোটায় মি. বার্নেস। এরা সবাই আজ সকালেরই রোগী। মি. রেইলির রোগী সংখ্যা এর থেকে বেশি হয়।
মি. রেইলির রোগীদের আপনি কি চেনেন?
হ্যাঁ, মোটামুটি সকলকে চিনি। এই ধরুন না মি. অ্যাবারক্ৰমবির কথা। তিনি মি. রেইলির পেশেন্ট ছিলেন। বহুদিন তাঁকে দেখিয়েছেন। আর মিসেস হিথ তাঁর ছেলেমেয়েদের দাঁতের কোনো সমস্যা দেখা দিলে আগে মি. রেইলির কাছে যেতেন। মি. রেইকস ও মি. বার্নেসের সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। তবে মি. মর্লের মুখে তাদের নাম শুনেছিলাম।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা মি. রেইলির সঙ্গে দেখা করতে যাব। মিস নেভিল, এবার আপনি আসতে পারেন। আমাদের সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ।
জ্যাপ পোয়ারাকে বললেন–একমাত্র অ্যামবেরিওটিস মি. মর্লের নতুন রোগী। এছাড়া সবাই পুরোনো। যত তাড়াতাড়ি পারা যায় তার সঙ্গে আমাদের দেখা করা উচিত। হয়তো চমকপ্রদ কোনো কু পেতে পারি তাঁর কাছে। তাঁকে আমরা প্রধান সাক্ষী হিসেবেও ধরতে পারি। কেননা একমাত্র তিনিই মি. মর্লেকে শেষ জীবিত দেখেছিলেন। তিনি বিদায় নেবার সময় দন্তচিকিৎসকের ভাবগতিক কেমন ছিল।
পোয়ারো বললেন তাহলে আপনি এই মৃত্যুর পেছনে কি কারণ থাকতে পারে তার স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন।
হ্যাঁ–তা জানি। কথা শেষ করে তিনি পোয়াবরার দিকে তাকালেন। দেখলেন তিনি চিন্তামগ্ন। বললেন–কি ব্যাপার? এত গম্ভীর হয়ে কি ভাবছেন মি. পোয়ারো?
স্মিত হেসে পোয়ারো বললেন–ব্যাপারটা হল, এত পুলিশ অফিসার থাকতে চিফ ইন্সপেক্টর জ্যাপের ডাক পড়ল কেন? এই ধরণের আত্মহত্যার তদন্ত তাকে ডাকা হয় না।
চিফ ইন্সপেক্টর জ্যাপ হো হো করে হেসে উঠলেন। তারপর বললেন–আমি সেই সময় কুইন শার্লট স্ট্রিটের কাছেই উইগমো স্ট্রিটের ল্যাভেন হ্যাঁমে ছিলাম। সেখানে একটা জালিয়াতি কেসের তদন্তে গিয়েছিলাম। এখান থেকেই আমাকে ফোন করা হয় এবং তদন্তের ভার দিয়ে ডেকে পাঠানো হয়।
পোয়ারো সন্দিহান কণ্ঠে বললেন কিন্তু আপনিই বা কেন?
এটার উত্তরও খুব সহজ। এটার কৃতিত্ব দেবো আমি অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্টকে। ডিভিশনাল ইন্সপেক্টর যখন জানলেন মি. ব্লাস্ট এখানে এসেছিলেন তাই তখন তিনি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। বুঝতেই পারছেন মি. ব্লাস্টের মতো ব্যক্তিত্ব। তাকে উপেক্ষা করা কারও সাধ্য নয়। আপনি নিশ্চয়ই জানেন ব্লাস্ট আর তার অনুগামীরা পাহাড়ের মতো বর্তমান সরকারকে আগলে রেখেছে। নিরাপদ, নিশ্চিন্ত রক্ষণশীল এক অর্থনীতি আর তাই অনেকেই চাইবেন তাকে সরিয়ে দিতে। আজ সকালে এখানে যদি তেমন কোন ঘটনা ঘটে থাকে তা দেখার জন্যে অনুসন্ধান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আমাকে।
পোয়ারো জ্যাপের কথায় সমর্থন করে বললেন–এ রকমই কিছু একটা আশঙ্কা ছিল আমার। আমার মনে হয় আসল শিকার ছিলেন অ্যালিস্টেয়ার ব্লাস্ট। অন্তত সেটাই হওয়া উচিত। হয়তো মনেরও অবতরণের প্রথম ধাপ। আমার স্থির বিশ্বাস, এর মধ্যে বিশাল অঙ্কের অর্থের গন্ধ আছে।
আমার মনে হচ্ছে এর মধ্যে আপনি অনেক দূর এগিয়েছেন।
হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন। বেচারি মর্লে এই ঘটনার নিমিত্ত মাত্র। তিনি কিছু জানতে পেরেছিলেন। তিনি ব্লাস্টকে সব বলে ফেলবেন এই ভয়টা কারও ছিল। তাই তাকে…..ঠিক তখনই মিস নেভিলকে ঘরে ঢুকতে দেখে পোয়ারো কথা থামালেন।
সে ঘরে এসে বলল–মি. রেইলি এখন দাঁত তোলায় ব্যস্ত। দশ মিনিটের মধ্যে তার কাজ শেষ হবে। তখন আপনারা এই ব্যাপারে আলোচনা করতে পারেন।
জ্যাপ বললেন ঠিক আছে, আপনাকে এখন এক ফাঁকে ছোকরা চাকর আলফ্রেডের সঙ্গেও কথা বলতে হবে।
এ দিকে অ্যালফ্রেডের মনে বদ্ধ ধারণা, যে এ সবের জন্য তাকেই দায়ী করা হবে। সে পনেরো দিন আগে মি. মর্লের কাজে যোগ দিয়েছিল। যেদিন থেকে সে কাজে এসেছিল সেদিন থেকেই তার সবকিছু ভুল হচ্ছিল। সব কিছুই ওলোটপালোট করে ফেলছিল। তাই মি. মর্লের কাছে বকুনিও শুনতে হয়েছে অনেক। এর ফলে নিজের প্রতি বিশ্বাসই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল অ্যালফ্রেডের।
পোয়ারো এবং জ্যাপ অ্যালফ্রেডের সঙ্গে দেখা করলেন। তাকে পোয়ারো বললেন–আজ সকালে যা যা ঘটেছে সব কথা পরিষ্কার করে বলো। তুমি একজন অন্যতম সাক্ষী। তোমার থেকে সব কিছু জানতে পারলে আমাদের খুব সুবিধা হবে।
এ কথায় অ্যালফ্রেড যেমন আনন্দ পেল তেমনি ভয়ও পেল। সে এর আগে চিফ ইন্সপেক্টর জ্যাপকে সব বলেছিল। তবুও সে বলার জন্য প্রস্তুত হল। সে মুখে কষ্টের ভাব এনে বলতে শুরু করল আজ সকালে আস্বাভাবিক কিছু ঘটেনি। অন্যান্য দিনের মতো আজও সকালে কাজ শুরু করেছিলেন মি. মর্লে।
বাড়িতে অচেনা কেউ এসেছিল?