আপনারা বাবা সম্পূর্ণ নিশ্চিত ছিলেন যে, সেই ঘটনার জন্য তিনিই দায়ী ছিলেন?
হ্যাঁ। সেই সময় এই সব রোগের চিকিৎসার জন্য একটা স্কুল ছিল। সেটা খুব জনপ্রিয় ছিল আর সেই স্কুলের প্রতি আমার বাবার বিশ্বাস ছিল। এখানে চিকিৎসা পর মানুষ তার স্বাভাবিক জীবন আবার করতে পারে। তবে তার প্রতি আত্মীয়স্বজন এবং বাড়ির লোকের সুনজর রাখা উচিত এবং দেখা উচিত যে, তারা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে কিনা, আমি মনে করি এর ফলে বহু ক্ষেত্রে সাফল্য আসতে পারে আবার অনেক ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যজনক হতে পারে। যে সব রুগিরা ভালো হয়ে বাড়িতে ফিরে আসে এবং পরে অসুখটা আবার দেখা দেয় এর ফলে তখনই বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটে থাকে। একটা কেসে আমার বাবা খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন এবং সেই কেসটা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই বন্ধুর সঙ্গে যে মহিলাটি বাস করতে এসেছিলেন তিনি কি আগে তাঁর সঙ্গে বসবাস করতেন? প্রায় সব কিছুই সুখে শান্তিতে চলছিল। হঠাৎ পাঁচ কী ছয় মাস পর তিনি ডাক্তারকে ডেকে পাঠান এবং ডাক্তার এলে মহিলা তাকে বললেন, আপনাকে ওপর তলায় নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছি কারণ আমি যা করেছি তা দেখে আপনি ক্রুদ্ধ হবেন। এবং পুলিশকে খবর দেবেন। এই অপ্রিয় কাজটা করতে আমাকে হুকুম করা হয়েছিল। হিলডিকয়ার চোখে আমি শয়তানের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছিলাম। সেইজন্যই এই নিষ্ঠুর কাজটা করতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমি জেনে গিয়েছিলাম, ওকে খুন করতেই হবে। এবং আমি জানতাম সেটা ঘটবেই। একটা চেয়ারের ওপর মহিলাটি মৃত অবস্থায় বসেছিলেন। তাকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল। শুধু তাই নয় মৃত্যুর পর তার চোখ দুটির ওপরও আক্রমণ করা হয়েছিল। তাকে একটা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে সে। মারা যায় কিন্তু তার মধ্যে কোনো অপরাধবোধের চিহ্ন ছিল না। কারণ তার ওপর যে আদেশ অর্পিত হয়েছিল সেটা পালন করা ছিল তাঁর কর্তব্য। শয়তানকে ধ্বংস করাই ছিল তার কর্তব্য।
পোয়ারো মাথা নাড়লেন খুব দুঃখের সঙ্গে।
ডাক্তার বলেই চললেন যে, ডরোথি প্রেস্টন গ্রে মাঝারি ধরনের মানসিক রুগি ছিলেন। তাকে যদি কারোর তত্ত্বাবধানে রাখা যেত তাহলেই তিনি ছিলেন নিরাপদ। তবে আমি বলতে পারি সাধারণত গ্রহণযোগ্য ছিল না সেই সময়। আমার বাবাও তখন এ-ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়ার কথা ঠিক বলে মনে করেননি। নার্সিংহোমে ভর্তি হয়ে বছরখানেক থেকে তিনি আবার আগের মতো হয়ে যান। তাঁর সঙ্গে থাকত একজন নার্স, যদিও তিনি নিজেকে একজন পরিচারিকা হিসাবে প্রতিপন্ন করতে চাইতেন তার কাছে। তিনি আবার নতুন করে বন্ধুত্ব পাতালেন এবং কিছুদিন পরে তিনি বিদেশে চলে যান।
হ্যাঁ, তিনি মালয়তে যান তার যমজ বোনের সঙ্গে থাকবেন বলে।
আবার সেখানে আর একটি বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছিল তাই না?
হ্যাঁ। একজন প্রতিবেশীর শিশু আক্রান্ত হয়। প্রথমে মনে করা হয়েছিল শিশুটির আম্মা তাকে আক্রমণ করেছিল। পরে আবার গ্রামের এক চাকরকে সন্দেহ করা হয় কিন্তু আবার দেখা যায় যে কোনো মানসিক কারণেই হোক, নিশ্চিন্তে বলা যেতে পারে শিশুটির প্রতি সেই আক্রমণের জন্য মিসেস গ্যারোই দোষী ছিলেন। আমার মনে হয় সেই জেনারেলের নামটা আমি ভুলে গেছি–
র্যাভেন্সক্রফট? বললেন পোয়ারো।
হ্যাঁ, হ্যাঁ জেনারেল র্যাভেন্সক্রফট তাকে ফেরত পাঠাতে রাজী হন এবং সেখানে চিকিৎসা আবার শুরু হয় তার। আচ্ছা এসব খবরই কি আপনি জানতে চেয়েছিলেন?
পোয়ারো বললেন, হ্যাঁ। এটা একটা আংশিক খবর যা আমি ও আপনি আগেই শুনেছি। আমি যেটা আপনাকে বলতে চাই তা হল যমজ বোনেদের ব্যাপারে। অপর যমজ বোন মার্গারেট প্রেস্টন গ্রের ব্যাপার কী? শত হলেও তিনি ছিলেন জেনারেল র্যাভেন্সক্রফট-এর স্ত্রী। আচ্ছা তিনিও কি সেই একই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন?
ডাক্তারি রিপোর্টে তাঁর সম্পর্কে কখনও কোনো অসুখের খবর পাওয়া যায়নি। কারণ তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ সুস্থ। আমার বাবা তাঁর বাড়িতে একবার কী দুবার গিয়েছিলেন এবং তার সঙ্গে কথাও বলেছেন। তার ব্যাপারে বাবা খুব আগ্রহী ছিলেন। কারণ তিনি দেখেছেন যমজ সন্তানদের মধ্যে যদি কারোর অসুখ করে বা মানসিক বিপর্যয় ঘটে তখন অপর যমজ শিশুটিরও সেই রোগ বা অন্য কোনো অসুখ হতে বাধ্য। অথচ সেই সময় স্বামী স্ত্রী দু-জনেই আন্তরিকতা ও আনুগত্যের মনোভাব নিয়ে তারা তাদের জীবনযাত্রা শুরু করেছিলেন।
আপনি বললেন, কেবল জীবন শুরু করেছিলেন। এ কথার অর্থ কী?
একটা বিশেষ উপলক্ষ্যে দুই যমজ সন্তানের মধ্যে বিদ্বেষের প্রশ্ন উঠতে পারে। আবার প্রথমে দু-জনের মধ্যে গভীর ভালোবাসার সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু পরে কোনো একটা ব্যাপারে পরস্পর পরস্পরের ব্যাপারে হিংসার পাত্র হয়ে উঠতে পারে। এবং সেই কারণটার উৎস হল দু-জনের মধ্যে ভাবাবেগের অভাববোধ। এবং সেই ধরনের কোনো ঘটনা থেকেই সৃষ্টি হতে পারে বিদ্বেষের।
আমার অনুমান এক্ষেত্রে সেটা ঘটতে পারে। জেনারেল র্যাভেন্সক্রফট সেই সময় ছিলেন যুবক ও সুপুরুষ। আর পেশাগত মর্যাদাও ছিল অনেক উঁচুতে। আমার ধারণা তিনি ডরোথি প্রেস্টন গ্রেকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। যমজ দুই বোনের মধ্যে সুন্দরী ছিলেন তিনি। তিনিও জেনারেলের প্রেমে পড়ে যান। এরই মধ্যে অপর এক যমজ বোন মার্গারেটের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। তিনি মার্গারেটকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এবং জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়া মাত্র তাকে বিয়ে করেন। ডলি যে তার বোনের বিয়েতে ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন সেটা বোঝা যায় যে, তখন তিনি মরিয়া হয়ে এ্যালিয়েস্টার র্যাভেন্সক্রফট-এর সঙ্গে প্রেম চালিয়ে যেতে থাকেন। সেই সঙ্গে জেনারেলের কাছে তার ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। ধীরে ধীরে তার রাগ, বিদ্বেষ কাটিয়ে উঠে অন্য আর একজনকে বিয়ে করেন এবং তাদের সুখী দম্পতি বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু প্রায়ই র্যাভেন্সক্রফটের কাছে গিয়ে থাকতেন, শুধু মালয়েতে নয় বিদেশের অন্য আর এক দেশেও জেনারেলের কর্মস্থলে গিয়ে থাকতেন তিনি। সেই সময় তিনি যথেষ্ট সুস্থ ছিলেন। তাঁর মধ্যে পাগলামোর কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। আমার বিশ্বাস এবং বাবাও সব সময় বলতেন লেডি র্যাভেন্সক্রফট তার যমজ বোনের প্রতি আগের মতোই অনুরক্ত ছিলেন। এমন কি আমার আরও মনে হয় ডলির চেয়েও মলি তার যমজ বোনকে মাঝে মাঝে দেখতে চাইতেন। কিন্তু জেনারেল সেটা চাইতেন না। আমার ধারণা এর পিছনে অবশ্যই কোনো কারণ ছিল। আর সেই কারণটা হল ডলির উপস্থিতিতে একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়া। পুরোনো প্রেমের কথা মনে পড়লে ডলি হয়তো জেনারেলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করতেন। আর জেনারেলের পক্ষে সেটা বরদাস্ত করা খুবই কষ্টকর বলে মনে হত। যদিও আমার অনুমান যে, তার স্ত্রীর মনে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে তার প্রতি তার যমজ বোনের আগের মতো সেই ঈর্ষা বা ক্রোধের মনোভাব আর নেই।