আমি জানতে পেরেছি মিসেস অলিভারের সঙ্গে আমার মার পরিচয় আছে। এবং একটা সাহিত্যের ভোজসভায় তিনি মায়ের সঙ্গে মিলিত হন। সুতরাং আপনি যদি সময় করে আমার সঙ্গে দেখা করেন আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। আমি কিন্তু আপনার সুবিধামতো যে কোনো সময়ে দেখা করতে রাজি আছি। মিসেস অলিভারের সেক্রেটারি হাতির কথা বলেছিলেন। আমার মনে হয় এর সঙ্গে মিসেস অলিভারের পূর্ব আফ্রিকা যাওয়ার কোনো তাৎপর্য আছে। আমার এখন ভীষণ চিন্তা ও উদ্বেগ হচ্ছে। এই সময় যদি আপনি অনুমতি দেন আপনার সঙ্গে দেখা করার, তাহলে চিরকাল আপনাকে মনে রাখব।
আপনার বিশ্বস্ত
ডেসমন্ড বারটন কক্স
দ্বিতীয়বার চিঠিটা পড়ার পর এরকুল অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলেন, এ যেন হঠাৎই
কিছু যদি মনে করেন জর্জ, প্রশ্ন করে কী বললেন আপনি?
এরকুল পোয়ারো বললেন, মুখ ফসকে হঠাৎ বেরিয়ে গেল। এমন এক একটা ঘটনা আছে যদি একবার কোনো মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে তার থেকে রেহাই পাওয়া খুব মুশকিল। আমার কাছে এখন সেটা হাতিদের প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।
তিনি তার সেক্রেটারি মিস লেমনকে ডেসমন্ড কক্স-এর চিঠিটা দিলেন এবং বললেন, এই চিঠির লোকের সঙ্গে তার সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করতে।
তিনি তাকে বললেন, আমি এখন খুব ব্যস্ত নই। আগামীকাল সময় হতে পারে।
মিস লেমন তাকে মনে করিয়ে দিলেন যে এরমধ্যে দুটি সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করা আছে। তাসত্ত্বেও তিনি জানালেন আগামীকাল তার যথেষ্ট সময় আছে এবং তাঁর কথা মতন সে যেন ব্যবস্থা করে। পশুশালা বা চিড়িয়াখানার ব্যাপারে কি কিছু করতে হবে?
পোয়ারো বললেন, তার দরকার নেই। তবে হাতির ব্যাপারে সে যেন কিছু কথা না বলে। কারণ হাতিরা বিরাট জন্তু। অনেকটা জায়গা দখল করে নেয়। তার সাথে আলোচনার সময় সেই প্রসঙ্গ যে উঠবেই তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
জর্জ বলল, মিঃ ডেসমন্ড বারটন কক্স এসেছেন। পোয়ারো উঠে দাঁড়ালেন এবং কোনো কথা না বলে একটু সময় স্থির হয়ে রইলেন। তিনি হয়তো একটু নার্ভাস হলেন অথবা একটু অসুস্থতাবোধ হল। তবে বেশ ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সেটা ঢাকলেন এবং হাতটা বাড়িয়ে করমর্দন করলেন।
আপনি কি মিঃ এরকুল পোয়ারো?
পোয়ারো বললেন, আপনি ঠিক বলেছেন, আর আপনার নাম তো ডেসমন্ড বারটন কক্স। আপনি এখানে কেন এসেছেন এবং আপনার জন্য আমি কী করতে পারি বলুন?
ডেসমন্ড বারটন কক্স বললেন, ব্যাখ্যা করা খুব মুশকিল, অনেক কিছুই ব্যাখ্যা করা যায় না, তবুও অনেক সময় আছে আমাদের হাতে। এখন বসুন। ডেসমন্ড সামনে বসা মানুষটির দিকে সন্দেহের চোখে তাকালো। তার চেহারা হল ডিমের মতো মাথা এবং বড় গোঁফ। তিনি যেমন মনে মনে আশা করেছিল ঠিক সেইরকম নয়।
আপনি একজন গোয়েন্দা তাই তো? মানে আমি বলতে চাইছি লোকেরা আপনার কাছে আসে তাদের কোনো ব্যাপারে তদন্তের জন্য।
পোয়ারো বললেন, আমার জীবনে এটা একটা কাজ বলে মনে করতে পারেন।
আমার মনে হয় আপনি আমার সম্বন্ধে খুব বেশি জানেন না এবং কেন এসেছি তাও নয়।
কিছু কিছু জানি সব নয়, পোয়ারো বললেন। আপনি বলতে চাইছেন মিসেস অলিভার আপনাকে কিছু বলেছেন?
তিনি আমাকে শুধু বলেছেন তার এক ধর্মকন্যার সঙ্গে দেখা হয়েছে। তার নাম মিস সিলিয়া র্যাভেন্সক্রফট। তাই তো?
হ্যাঁ সিলিয়া আমাকে বলেছে। আমার মনে হয় মিসেস অলিভার আমার মাকে বেশ ভালো করেই চেনেন।
না, আমার ধারণা তারা পরস্পর পরস্পরকে ভালোভাবে জানেন। মিসেস অলিভার বলেছিলেন আপনার মায়ের সঙ্গে একটা সাহিত্যের ভোজসভায় দেখা হয়েছিল। এবং তার সঙ্গে মাত্র কয়েকটা কথা হয়, আপনার মা একটা বিশেষ ব্যাপারে তাকে অনুরোধ করেছিলেন।
ছেলেটি দারুণ ক্রুদ্ধ হয়ে বলল, তাঁর সেটা করার কোনো অধিকার নেই। আবার বলল মায়ের–আমি বলতে চাই
পোয়ারো শুনে বললেন, বুঝেছি। মায়েরা সব সময় চিন্তা করেন তাদের সন্তানদের জন্য। কিন্তু সন্তানেরা তা নিয়ে মাথা ঘামায় না। কি আমি ঠিক বলিনি?
হ্যাঁ আপনি সত্যি কথাই বলেছেন। কিন্তু আমার মা এমন একটা ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চায় যেটার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই নেই।
আপনি ও সিলিয়া র্যাভেন্সক্রফট দু-জনে খুব অন্তরঙ্গ বন্ধু। আপনারা দু-জনে পরস্পরের খুবই কাছের মানুষ। মিসেস অলিভার আপনার মার কাছ থেকে শুনেছেন আপনারা বিয়ে করার কথা ভাবছেন।
আমি আপনাকে আবার মনে করিয়ে দিতে চাইছি, যে ব্যাপার নিয়ে আমার মার কোনো সম্পর্ক নেই সেই বিষয় নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা উচিত নয় এবং চিন্তারও কোনো কারণ থাকতে পারে না।
মৃদু হেসে পোয়ারো বললেন, সব মায়েরাই একই রকমের হয়। আর আপনি বোধহয় আপনার মায়ের সঙ্গে খুব জড়িত।
ডেসমন্ড বলল, আমি তা বলব না। বরং আপনাকে আমি খোলাখুলি বলি উনি আমার সত্যিকারের মা নন।
তাই নাকি? এ কথা তো আমার জানা ছিল না।
ডেসমন্ড বলে আমি ওঁর দত্তকপুত্র। কারণ ওঁর একটি ছেলে ছিল এবং সে ছোটোবেলাতেই মারা যায়। তখন উনি দত্তক নিতে চান। এবং আমাকে দত্তক নেওয়া হয়। যদিও উনি আমাকে ওঁর ছেলের মতো করে মানুষ করেছিলেন কিন্তু সবসময় উনি বলেন আমি ওঁর ছেলে নই। আমাদের দুজনকে দেখতে একরকম নয় এবং চেহারার সঙ্গেও কোনো মিল নেই আর আমাদের চিন্তাধারাও কিন্তু এক নয়।