–ওর জন্য কি দরজা খোলা থাকতো?
–হা দরজা খোলা থাকতো, কার্পেটের নিচে চাবি থাকতো।
–আপনার মেয়ের নাকি বিয়ের সব ঠিক হয়ে গেছে?
হতে পারে। কারণ মেয়েরা বড় হয়ে গেলে আজকাল নিজের পাত্র নিজে ঠিক করে নিয়ে বিয়ে করে। ও হয়তো তাই করতো।
মিসেস বার্নার্ড জানালেন–আমি জানতাম, ছেলেটির নাম ডোনাল্ড ফ্রেসার। সে-ও হয়তো ভীষণ আঘাত পেয়েছে এই ঘটনায়। চমৎকার দেখতে। পোর্ট এ্যান্ড ব্রান্সকিল অফিসে ছেলেটি চাকরি করে। সপ্তাহে দুদিন সে এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা করতে।
–আপনি কি জানেন, কাল তার সঙ্গে আপনার মেয়ের দেখা করার কথা ছিল কিনা?
–না, ভারী সরল ও খেয়ালী মেয়ে ছিল। আমাকে খুব ভালোবাসতো।
-ওর মাকে ও ভীষণ বিশ্বাস করতো-খানিকটা দ্বিধাজড়িত কণ্ঠে মিঃ বার্নার্ড জানালো, আমার ওপর ভরসা করতো না। তাই আমাদের মধ্যে একটা বড় দূরত্ব ছিল।
-ওর ঘরখানা একবার দেখাবেন?
আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো এলিজাবেথের ঘরে। সবার শেষে আমি ছিলাম। জুতোর ফিতে খুলে যাওয়াতে আমি ওদের থেকে একটু পিছিয়ে পড়লাম। ঠিক সেই সময় ট্যাক্সি থেকে একটা মেয়ে নেমে এলো সোজা আমার কাছে। আমাকে প্রশ্ন করলো
–আপনি কে?
আমি চট করে জবাব দিতে পারলাম না। কারণ নিজের পরিচয় দেওয়া বারণ, আবার পুলিশের লোক বলে নিজেকে জাহির করা যাবে না। তাই চুপ করে রইলাম।
মেয়েটি বললো-বুঝেছি, আর বলার প্রয়োজন নেই।
আমি বিস্ময়ের সঙ্গে প্রশ্নের ধাপ কাটিয়ে তাকে প্রশ্ন করলাম–আপনি মিস বার্নার্ড, তাই না?
–হ্যাঁ, আমার নাম মেগান বার্নার্ড, ওর মতো মেয়ে হয় না। পুরুষ বন্ধু ওর ছিল না।
আমি সাংবাদিক বা পুলিশ নই জানতে পেরে আমাকে আবার প্রশ্ন করলো,–তাহলে আপনি কে? আমার বাবা-মা কোথায়?
–আপনার বাবা-মা আপনার বোনের ঘর দেখতে গেছে।
তারপর সে কি ভেবে আমাকে ইশারা করলো। আমি তার পেছনে পেছনে এগোলাম। আমরা রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকলাম। সে আমাকে দরজা বন্ধ করে দিতে বললো। দরজা বন্ধ করতে গিয়ে বাধা পেলাম। বাইরে থেকে দরজা ঠেলে পোয়ারো এসে ঢুকলো। এরপর আমি দরজা বন্ধ করে দিলাম।
পোয়ারো মেগানের সামনে এগিয়ে গেলো। মাথা ঝাঁকিয়ে স্মিত হেসে বললো-সুপ্রভাত মাদমোয়াজেল।
আমি মেয়েটির পোয়ারোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। দেখলাম তার ঠোঁটে এক তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো।
-আপনিই সেই বিখ্যাত ডিটেকটিভ পোয়ারো?
পোয়ারো বললো, মাদমোয়াজেল, আপনাদের এই নশ্বর পৃথিবীতে মৃত্যুর একটা আলাদা চেহারা আমি দেখেছি। আমি আপনার সব কথা শুনেছি। মানুষের মৃত্যুর পর তার সম্পর্কে সকলেই ভালো ভালো কথা বলে। অতএব আমি সেসব নতুন করে জানতে চাই না। আমি এমন একজনকে এখন চাই যে এলিজাবেথ বার্নার্ডকে জানে বা জানে সে মারা গেছে। এরকম কাউকে পেলে আমি হয়তো সত্যের মুখোমুখি হতে পারবো।
কয়েক মুহূর্ত নীরবতায় কেটে গেল। একসময় মেগান বলে উঠলো,-বেটি একটা বোকা, একটা অপদার্থ, একটা আস্ত গর্দভ।
মেগানের এ ধরনের মন্তব্য শুনে আমি বোকা বনে গেলাম। পোয়ারোর মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখতে পেলাম না।
মেগান তখনও বলে চলেছে, সে ভালো হলেই দোষ ছিল। তার চরিত্র সংশোধন করতে বলেছিলাম, কিন্তু তা করেনি।
–কিন্তু মাদমোয়াজেল, পোয়ারো বলল, আপনি হেস্টিংসকে বলেছেন আপনার বোনের কোনো ছেলে বন্ধু ছিল না। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং আপনার কথার উল্টোটাই সে ছিল।
-হ্যাঁ, সেটা ঠিকই বলেছেন, সে ভালোমন্দের ধার ধারতো না। কেউ একটু আদর করে কথা বললে একেবারে গলে যেতো। হৈ-হুল্লোড় পছন্দ করতো।
নিশ্চয়ই সুন্দরী ছিল, তাই না?
সকাল থেকে এই একই প্রশ্নের উত্তর পোয়ারো তিনবার জানতে চেয়েছিল, দুবারে কোনো জবাব পায়নি। এবারে কাজ হলো। মেগান তার বোনের একটা ছবি আমাদের দেখালো। আহামরি এমন কিছু নয়, তবে চমকে দেওয়ার মতো মুখ।
-আপনার সঙ্গে আপনার বোনের কোনো সাদৃশ্য নেই। পোয়ারো বললো।
–না, আমার চরম শত্রুও আমাকে সুন্দরী বলে না। হেসে জবাব দিল মেগান।
–আপনার বোন কি ধরনের বোকামি করেছিল? যদি তার বন্ধুটির সম্পর্কে আমাদের কিছু জানান?
-হ্যাঁ, ডন শান্ত স্বভাবের ছেলে। কোনো ঝুট-ঝামেলা পছন্দ করে না। বেটির কোনো ব্যাপারে সে নাক গলাতো না। তবে অতিরিক্ত হয়ে গেল…।
-তারপর? অতিরিক্ত হয়ে গেলে…।
-জানেন তো, অতিরিক্ত কিছু হলে বিশ বছরের পুরানো প্রেমেও ভাঙন ধরে। ডনের সঙ্গে বেটির বিচ্ছেদ ঘটেছে সেটা আমি অনুমানে বুঝতে পারি। ও যদি নিজেকে সংশোধন করতে তাহলে ডন দুমাসের মধ্যে তাকে বিয়ে করতো। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।
মেগান চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। পোয়ারোর কথা শুনে থমকে দাঁড়ালো।
–আপনাকে একটা কথা বলি। এই বলে পোয়ারো তাকে এ.বি.সি.-র বেনামী চিঠি পাওয়া থেকে এ্যান্ডোভারের খুন, দ্বিতীয় চিঠি সব ঘটনা বিস্তারিত জানালো।
মেগান আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞাসা করলো–আপনার কথা কি সব সত্যি? তাহলে আপনি কি বলেন ঐ বদ্ধ উন্মাদটা বোনকে খুন করেছে?
–হ্যাঁ, আমার ধারণা তাই। আপনি যদি আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেন। সব খুলে বলেন তাহলে আমাদের কাজের সুবিধা হয়। এখানে আসার গুরুত্বটা আপনি নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারেছেন।
–বেশ শুনুন, আগেই বলেছি, ডন শান্ত ছেলে। বেটিকে প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসতো। সে একটা চাপা স্বভাবের ছিলো। মনের মধ্যে সব কিছু চেপে রাখতো, মুখে প্রকাশ করতো না। বেটির বেপরোয়া চালচলনকে সে মেনে নিতে পারতো না। কিন্তু বেটির সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ ছিল না। ডনকে সে কোনোদিন বুঝতে চায়নি। কেবল বলতো, বিয়ের পর তো বন্দি হয়ে যাবো। তার আগে মনের সুখে ফুর্তি করে নিই। তার এই উচ্ছলতা আরো বেড়ে গেল জিঞ্জার ক্যাটে চাকরি পাওয়ার পর। অফুরন্ত সুযোগ, যাদের সঙ্গে ওখানে ওর আলাপ হতো, তাদের পেছন পেছন সে ছুটতো।…এইভাবে চলছিলো। তারপর শুরু হলো ভুল বোঝাবুঝি, দোষারোপ ইত্যাদি।