–কিভাবে? ক্রোম হতভম্ব হয়ে প্রশ্ন করলো।
-এটা তো না বোঝার কিছু নেই, আমি বললাম। একনম্বরের বদমাস না হলে কেউ কখনো কারো গলায় বেল্ট জড়িয়ে দমবন্ধ করে মারতে পারে? আমি পোয়ারোর দিকে তাকালাম।
পোয়ারো আমাকে ইঙ্গিতে চুপ করতে বললো। আমি কথা না বাড়িয়ে থেমে গেলাম।
ওখানে পৌঁছানোর পর কার্টারের কাছে জানতে পারলাম, মেয়েটির বাবা এই ঘটনায় ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছে। তাই জিজ্ঞাসাবাদ আপাতত করা যাচ্ছে না।
-বাবা-মা ছাড়া মেয়েটির আর কোনো আত্মীয় আছে? পোয়ারো জানতে চাইলো।
-হ্যাঁ, এক বোন আছে। লন্ডনে থাকে। কোনো এক অপিসে টাইপিস্টের কাজ করে। আত্মীয়ের মধ্যে আর এক যুবক ছিল, যার সঙ্গে গতকাল রাতে ওর দেখা করার কথা ছিল। কার্টার জানালো।
সুযোগ বুঝে ক্রোম প্রশ্ন করলো, এ.বি.সি. গাইড থেকে কি কিছু পাওয়া গেছে?
-না, কেবল মৃতদেহের পাশে ওটি ভোলা অবস্থায় পড়ে ছিল। যে পৃষ্ঠা খোলা ছিল সেটিতে বেক্সহিলে যাতায়াত করার ট্রেনের সময় তালিকা ছিল। গাইডটা একেবারে নতুন। কাছাকাছি দোকানদারদের থেকে জানা গেছে এই বই এখান থেকে বিক্রি হয়নি।
-মৃতদেহটি আবিষ্কার করে কর্নেল জেরোম। প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে নজরে পড়ে এবং পাশের হোটেল থেকে থানায় ফোন করে সব কিছু জানায়। আমরা এত সকালে কারো সঙ্গে তখনও কথা বলতে পারিনি।
পোয়ারো ক্রোমকে সঙ্গে না নেওয়ায় সে মনে মনে একটু অপমানিত বোধ করে। একটু বাঁকা হাসি হেসে বললো–স্যার, আপনি বরং মিঃ পোয়ারোকে বেল্টটা দেখিয়ে দিন। ওটা নাকি ওঁর কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। দেখি, উনি কী এমন তথ্য আবিষ্কার করেন। আসলে বেল্ট থেকে হাতের ছাপ আপনি পাবেন না। ওটা সিষ্কের, চামড়ার নয়।
আমরা জিঞ্জার ক্যাট কাফেতে গিয়ে ঢুকলাম। ঐ কাফেটি চালনা করে মিস মেরিয়ান। সস্তাদামের কিছু কাপড় দিয়ে ঢাকা কতকগুলো বেতের চেয়ার ছাড়া আর কিছু নজরে পড়লো না। কেমন যেন চাকচিক্যহীন। আমরা কাফের মালকানর সঙ্গে দেখা করে আসার কারণ জানালাম।
জানেন, আমাদের কত ক্ষতি হলো, মিস মেরিয়ন রেগে কই। কোনো খদ্দেরই এই দোকানে ঢুকবে না।
আপনার দোকানে মিস বার্নার্ড কতদিন চাকরি করছে? ওর স্বভাব কেমন? ক্রোম জানতে চাইলো।
এখানে প্রায় বছর খানেক ও কাজ করছে। বেশ চালাক, কাজেকর্মে বেশ চটপটে ছিল। তবে ওর চরিত্র সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই। কারণ দোকান সামলে ও সব দিকে নজর দেওয়ার অবসর আমার হত না।
–মেয়েটি দেখতে কেমন ছিল?
পোয়ারোর প্রশ্ন শুনে মিস মেরিয়ান ও ক্রোম একসঙ্গে তার দিকে তাকালো।
মেরিয়ান তারপর চোখ ঘুরিয়ে বললো, ভালোই, খারাপ নয়।
-কাল কত রাতে সে এখান থেকে বেরিয়েছিল? ক্রোম প্রশ্ন করলো।
–ছটার সময় দোকানে ভীষণ ভিড় হয়। খদ্দেরদের ঝামেলা মিটিয়ে আমরা প্রায় দেড় ঘণ্টা দোকান খুলে রাখি। তারপর দোকান বন্ধ হয়। বার্নার্ড অন্যান্য দিনের মতো আটটা নাগাদ দোকান বন্ধ করে চলে যায়।
-কোথায় যাচ্ছে, আপনাকে বলেছিল?
–না।
–দোকানে থাকাকালীন বাইরের কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলো?
–না।
–ও কি আপনার মাস মাইনের কর্মচারী ছিল?
–হ্যাঁ, ও আর হিগলি।
–আমরা একটু হিগলির সঙ্গে কথা বলতে চাই।
–বেশ বলুন, তাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি, তবে বেশি সময় নেবেন না।
পঁচিশ বছরের এক যুবতী আমাদের সামনে হাজির হলো। চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ-
–তুমি মিস বার্নার্ডকে চিনতে?
-হ্যাঁ, আমি ভাবতেই পারছি না যে এভাবে ওর মৃত্যু হয়েছে। অত্যন্ত শান্ত ও মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে ছিল।
২. মিস বার্নার্ড সম্পর্কে
মিস বার্নার্ড সম্পর্কে নতুন কিছু মিস হিগলির কাছ থেকে জানা গেল না। মিস মেরিয়ানের কথারই পুনরাবৃত্তি হলো মিস হিগলির কণ্ঠে। তবে হিগলি জানালো যে মাত্র চার মাস বার্নার্ড কাজে যোগ দিয়েছে। এই অল্প সময়ের মধ্যে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তবে একটা যুবক তার পেছন পেছন ঘুরতো। ছেলেটির সঙ্গে ওর প্রেম ছিল। ছেলেটি নাকি কোনো রিসিভারের দোকানে কেরানীর পদে কাজ করে। ছেলেটি দেখতে ভালো এবং চটপটে।
ঘটনার রাত্রে বার্নার্ড কাউকে কিছু না বললেও এইরকম আভাস দিয়েছিল।
আমরা কাফে থেকে বেরিয়ে মৃতার বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম। মিঃ বার্নার্ড আমাদের বসার ঘরে নিয়ে গেলো। আমাদের সঙ্গে তার পরিচয় পর্ব শেষ করলাম। বার্নার্ডের স্ত্রী স্বামীর পাশে বসে কাঁদতে লাগলো। মিঃ বার্নার্ড তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলো। জানালো মেয়ের মৃত্যুতে ভীষণভাবে মুষড়ে পড়েছে।
মিঃ ক্রোম গলা ঝেড়ে নিয়ে নিজেকে তৈরি করলো। তারপর মিঃ বার্নার্ডের উদ্দেশ্যে বললো–আপনাদের এই বাড়িটা কি নতুন?
হ্যাঁ, আগে আমরা কেনিংটনে থাকতাম। সেখানে আমাদের ঢালাই-এর ব্যাবসা ছিল। ব্যাবসা ধীরে ধীরে মন্দা হয়ে যাওয়ায় সব বিক্রি করে দিয়ে এই সমুদ্রের তীরে এসে বসবাস শুরু করি। সমুদ্রের ধার আমার খুব প্রিয়।
কাল রাতে তো আপনার মেয়ে বাড়ি ফেরেনি, আপনার সেজন্য চিন্তা হয়নি?
–রাত নটার মধ্যে খাওয়া-দাওয়া সেরে শুয়ে পড়া আমাদের অভ্যাস–মিসেস বার্নার্ড জবাব দিলো। আমরা অন্যান্য দিনের মতো তাই করেছিলাম। পুলিশ সকালে না এসে জানালে আমরা কিছু জানতে পারতাম না। মেয়ে আমার এগারোটা নাগাদ ফিরতো।