আমার ইচ্ছে না থাকলেও পোয়ালরার অনুরোধে জুলাইয়ের মাঝামাঝি আমাকে ইয়র্কশায়ারে যেতে হলো। কিছুদিন ওখানে কাটিয়ে তেইশ তারিখ বিকেলে ট্রেন ধরে আমি লন্ডনে ফিরে এলাম।
চায়ের কাপ নিয়ে সবে বসেছি এমন সময় পোয়ারো এগিয়ে এসে একটি খাম আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো।
–এটি এ.বি.সি.-র দ্বিতীয় চিঠি। পোয়ারো বললো, পড়ে দেখো।
লন্ডনে কিছুদিন না থাকার ফলে এই ব্যাপারটা প্রায় ভুলে গিয়েছিলাম। খামটা হাতে পেয়ে আমার মন নড়েচড়ে উঠলো। কাগজ, টাইপ সবই আগের মতো। কেবল চিঠির মধ্যেকার লেখাটা যা তফাত। এখানে একটা কথা চাবুকের আঘাতের মতো মনে হলো।
চিঠিটা এইরকম—
নমস্কার পোয়ারো মশাই।
ভালো আছেন তো? অবশেষে আপনি বিফল হলেন। এ্যান্ডোভারের খেলাটা দেখে নিশ্চয়ই হতবাক হয়েছেন তাই না? আপনার নিশ্চয়ই আফশোস হচ্ছে। বাজি রাখলে আপনার কাছ থেকে অনেকগুলো টাকা হাতিয়ে নেওয়া যেতো।
…অবশ্য আফশোস বললে ভুল বলা হয়। বাজি রাখার মতো সুযোগ হবে ভবিষ্যতে। গোয়েন্দাপ্রবর, একটুও বাড়িয়ে বলছি না। কলির সবে তো সন্ধে।
..আগামী পঁচিশ-তারিখ তাহলে বেক্সহিলে দুজনের দেখা হবে। সমুদ্রের ধারে খেলাটা দারুণ জমবে বলে মনে হয়।
…ভেবে আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে, জানেন। আপনি উৎফুল্ল হচ্ছেন না?
ইতি বশংবদ
এ.বি.সি।
আমি চিঠিটার আদ্যোপান্ত পড়ে মন্তব্য করলাম–এ যে দেখছি, আরকেটি খুনের হুমকি।
–সেই রকমই তো মনে হচ্ছে।
পরদিন সকালে আমরা হাজির হলাম স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে। গোয়েন্দা বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার স্যার লায়নেলের ঘরে আমাদের জরুরি আলোচনা হলো, সেখানে উপস্থিত ছিলো সাসেক্সের চিফ কনস্টেবল, এ্যান্ডোভারের ইনসপেক্টর গ্লেন, সুপারিনটেনডেন্ট কার্টার জ্যাপ, ইনসপেক্টর ক্রোম এবং বিশিষ্ট মনস্তত্ত্ববিদ ডঃ টম্পসন।
দ্বিতীয় চিঠিটায় হ্যাম্পস্টেড পোস্টাফিসের স্ট্যাম্প লাগানো আছে। দুটো মেলানো হলো। দেখা গেলো একজন লোকই পাঠিয়েছে দুটো চিঠি এবং একই টাইপরাইটার মেশিনে টাইপ করা হয়েছে। চিঠি পড়ে এটা বোঝা গেল যে পঁচিশে জুলাই বেক্সহিলে আর একটি খুন অনুষ্ঠিত হবে।
পোয়ারো বললো, আমার অনুমান, খুনীর নামের পদবীর প্রথম অক্ষর ব, এটা আমার অনুমান। মিসেস এ্যাম্বারের দোকানে গিয়ে এই চিন্তা আমার মাথায় প্রথম আসে। এখন দ্বিতীয় চিঠি পড়ে আমার অনুমান ঠিক সেটা আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি।
বরং একটা কাজ করো, স্যার লায়নেল বললো, বেক্সহিলের ব পদবীধারী লোকেদের নামের একটা তালিকা তৈরি করো। সিগারেট আর খবরের কাগজ বিক্রির ছোটো দোকানগুলোর ওপর কড়া নজর রাখার ব্যবস্থা করো। অজানা অচেনা কাউকে বেক্সহিলের ধারে-কাছে দেখলে তাকে সোজা ধরে নিয়ে এসে থানায় ভরে দাও তারপর জিজ্ঞাসাবাদ করো।
–মিসেস এ্যাম্বারের খুনের ব্যাপারে যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে তাদের মধ্যে পাত্রিজ ও রিডেল আছে। তারা যদি এ্যান্ডোভার ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তাদের গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হবো। গ্লেন বললো।
আলোচনা শেষ করে আমরা বাড়ির দিকে রওনা হলাম।
পথে যেতে যতে আমি বললাম, এবারের খুনটা হয়তো আটকানো যাবে।
পোয়ারো চিন্তিত মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো–যেহেতু শহরসুদ্ধ লোক এই পাগলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, তাই একথা তুমি বলছো। কিন্তু আমার তবু ভয় হচ্ছে।
-ভয়?
–হ্যাঁ, পাগলারা সব কাজ নির্দ্বিধায় করতে পারে। সেখানেই আমার ভয়।
বেশ আরামে ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎ পাশ ফিরতে গিয়ে ঘুম ভেঙে গেল। দেখি পোয়ারো উৎকণ্ঠিত মুখে বসে আছে। আমি ক্যালেন্ডারের দিকে তাকালাম। আজ পঁচিশে জুলাই। এখন সকাল সাড়ে সাতটা বাজে। বন্ধুর উদ্বেগ লক্ষ্য করে আমি শেষ পর্যন্ত জানতে চাইলাম–
–তোমার কি হয়েছে, পোয়ারো?
–যা হবার তাই হয়েছে। পোয়ারোর ঠোঁট কাঁপছে। আজ ভোরের দিকে বেহিলের সমুদ্রতটে একটি মৃতদেহ পাওয়া গেছে। মৃতের নাম এলিজাবেথ বার্নার্ড। সামানেই একটি কাফেতে সে ওয়েটারের চাকরি করতো। সে ঐ শহরে বাবা-মার সঙ্গে বাস করতো। ডাক্তারি রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, রাত সাড়ে এগারোটা থেকে একটার মধ্যে কাজটা করা হয়েছে। এবারেও একটা এ.বি.সি. গাইড পাওয়া যায় মৃতদেহের কাছ থেকে।
এরপর কুড়ি মিনিটে কেটে গেল। আমরা ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আমাদের সঙ্গে ছিলো অনেক খুনের সমাধান করে বেশ খ্যাতি লাভ করেছে সেই ইনসপেক্টর ক্রোম। যুবক বয়স। কিন্তু কথাবার্তায় বা চালচলনে একটা অহংকার লক্ষ্য করা যায়। বেশ কিছু নিজের কাজ সম্পর্কে জাহির করে বললো।-বেক্সহিলের খুনের ব্যাপারে কিছু জানার থাকলে আমি বলে দিতে পারি।
বেশ তো, মেয়েটার সম্পর্কে কিছু বলুন। পোয়ারো জানতে চাইলো।
-ওর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানার নেই। ক্রোম বললো, বয়স হবে প্রায় তেইশ বছর। জিজ্ঞার ক্যাট কাফেতে ওয়েটারের চাকরি করতো।
–তারা চেহারা?
–তাকে দেখিনি, অতএব বলতে পারবো না। ক্রোম কেমন বিরক্ত হয়ে জবাব দিলো।
মেয়েটি কিভাবে খুন হলো, সেটা কি আপনি জানেন?
–শাসরুদ্ধ করে তাকে খুন করা হয়। একটি বেল্ট যেটি তার নিজের কোমরে ছিল। সেই বেল্ট দিয়ে খুনী তার গলায় ফাঁস লাগায়।
–এই খবরটুকুর ওপর নির্ভর করে তদন্ত অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। পোয়ারো মন্তব্য করলো।