–ঠিক বলেছেন। তবে তাদের কেউই আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেনি। পোয়ারো বললো।
-আসলে কি জানেন মিঃ পোয়ারো, আমার মতো কর্তব্যজ্ঞান অনেকের নেই। সাক্ষ্য প্রমাণের ওপর নির্ভর করে খুনিকে ধরতে পুলিশের সুবিধা হবে বলেই আমি মনে করি। তিনি বলে চললেন, আমি যখন ওর দোকানে ঢুকলাম। তখন ঘড়িতে সাড়ে পাঁচটার ঘণ্টা পড়ে। আমি মাঝে মাঝেই ঐ দোকানে যেতাম। আমাদের মধ্যে ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক ছিলো।
–আচ্ছা, তার স্বামী যে তাকে খুন করবে বলে শাসাতো, সেটা কি আপনি শুনেছেন?
–ওর যে স্বামী আছে সেটা আমার অজানা ছিলো। আপনার মুখে এই প্রথম কথাটা শুনলাম।
–আচ্ছা, তাকে কোনোদিন চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন হতে দেখেছেন?
–না, যতদুর মন পড়ছে, ঐদিন তাকে অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক দেখেছিলাম।
আমরা দরজার দিকে ফেরার জন্য পা বাড়ালাম। হঠাৎ পোয়ারো থমকে দাঁড়িয়ে জানতে চাইলোআপনার কাছে কি এ.বি.সি. গাইড আছে? যদি দেন, তহলে লন্ডনে ফেরার সময়টা..
এতে এত দ্বিধা করার কি আছে? আপনার পেছনের শেলফে গাইডটা আছে। শুধু এ.বি.সি. নয় ব্রাড়শ থেকে শুরু করে ইয়ার বুক পর্যন্ত আপনি পাবেন।
আট পৃষ্টায় এ্যান্ডোভার ট্রেনের সময় দেখার আছিলা করে খানিকক্ষণ এলোমেলোভাবে ঘাঁটাঘাঁটি করে ওখান থেকে চলে এলাম।
এরপর আমরা চিনেমাটির বাসন প্রস্তুতকারী আলবার্ট রিডিলের সঙ্গে দেখা করলাম। বাড়ির বাইরে তার কারখানা। পোয়ারো তার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্য জানালো।
জবাবে লোকটি বললো–ঐ ব্যাপারে পুলিশকে যা বলার বলেছি। আপনারা বরং তাদের কাছ থেকে দরকার মতো জেনে নেবেন। আপনি ভাবলেন কি করে, যে যখন যা জানতে আসবে তার সঙ্গেই আমি কথা বলতে বসে যাবো। আমার কি কোনো সময়ের দাম নেই? এটা আপনারা ভাবলেন কি করে? রিডেল প্রায় ধমকের সুরে বললো।
তারপর তর্কের মধ্যে দিয়ে মিঃ রিডেল জানালো, গতকাল সন্ধে ছটার সময় যখন সে দোকানে গিয়েছিলো তখন বাইরে থেকে দরজা বন্ধ ছিলো, একটু ঠেলা দিতেই দরজা খুলে যায়। ভেতরে ঢুকে কাউন্টারে কাউকে দেখতে না পেয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে আসে। কোনো মৃতদেহ তার নজরে পড়েনি। তবে কাউন্টারে একটা রেলওয়ে গাইড তার নজরে পড়েছিলো।
পোয়ারো একের পর এক প্রশ্ন করে যেতে লাগলো।
বিরক্ত হয়ে রিডেল বললো, আমি এমন কি সন্দেহজনক কাজ করেছি, যার জন্য আপনারা আমার পেছনে লেগেছেন?
–অত ঘাবড়াবার কিছু নেই, পোয়ারো গম্ভীরভাবে বললো–সব জানবেন, খুব শীগগির জানবেন, আজ আসি।
ট্রেন ধরার তাড়া আছে আমাদের। তাই দেরি না করে ওখান থেকে চলে এলাম, প্রথম শ্ৰেণীর কামরায় আমরা কেবল দুজন।
পোয়ারো চোখ বন্ধ করে বললো, আমাদের ঐ অপরাধীটি লম্বায় সাড়ে পাঁচ ফুট। মাথার চুল কালো, বাঁ চোখটা একটু ছোটো, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে। কাঁধ বরাবর নিচের দিকে একটা তিল আছে।
আততায়ীর চেহারার বর্ণনা ওর মুখে শুনে আমি থ হয়ে গেলাম।
সে আবার বলতে থাকে–প্রকৃতপক্ষে আততায়ীর বিন্দুমাত্র পরিচয় আমার জানা নেই। সে কোনো সূত্র আমাদের জন্য রেখে যায়নি। এমনকি সিগারেটের ছাইও পাওয়া যায়নি। চালাক আছে লোকটা, কি বলো হেস্টিংস। তবে গাইডটা সে-ই ফেলে গেছে, এবং এর পেছনে একটা উদ্দেশ্য আছে। কিন্তু গাইডে হাতের ছাপ পাওয়া যায়নি। সে তার সম্পর্কে কিছু পরিচয় জানাতে না চাইলেও সে প্রমাণ করতে চায় যে সে ভীষণ চালাক। গাইড বুকটা তারই প্রমাণ। তবে ওর সম্পর্কে একটা ধারণা আমি মনে মনে তৈরি করেছি।
…যে দামী কাগজ ছাড়া কাগজ কেনে না, যে টাইপ করার সময় অতিরিক্ত যত্ন নেয়। নিজের ব্যক্তিত্ব বা নিজের শক্তি লোককে জাহির করে, তেমন লোকের বিবেকবোধ বা ন্যায়-অন্যায়ের বিচার থাকে না। সে শয়তান, বদ্ধ উন্মাদ, সে খুনী। আচ্ছা হেস্টিংস, তুমি কি অনুমান করতে পারো, সে কেন এ.বি.সি. গাইড, কেন এ্যাভোভার, আর কেনই বা মিসেস এ্যাম্বারকে বেছে নিলো? আসলে মিঃ পাত্রিজ ও মিঃ রিডেলকে খুনী সন্দেহ না করার কোনো কারণ নেই। খুনী হয়তো এ্যান্ডোভারের লোক নয়, এটা ভাবা নিষ্প্রয়োজন। এ্যান্ডোভারের লোকের কাছেও গাইড থাকে তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি।
-যদি তোমার অনুমান সত্যি হয়, আমি বলতে থাকি, তাহলে আমি একবাক্যে বলতে পারি ঐ মেদী রিডেলই হলো খুনী।
-না, সে সন্দেহের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে। লোকটা যেমন ভীতু তেমনি কাণ্ডজ্ঞানহীন। অমন লোকের পক্ষে খুন করা সম্ভব নয়। এখানে খুনী হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে পার্জিজকে। বেনামী চিঠি থেকে শুরু করে খুনের পরিকল্পনা করা সবই তার স্বপক্ষে যাচ্ছে। তবুও প্রমাণের অভাবে আমার কিছু করার নেই। হাত-পা বাঁধা, আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, খুনী এ্যান্ডোভারের লোক নয় এবং সে যে কোন লিঙ্গের মানুষ একথাও বলতে পারি না।
পোয়ারো চুপ করে রইলো, আমিও বোবা হয়ে রইলাম। আমি তাকে বারে বারে লক্ষ করলাম। বুঝলাম, সে এই ঘটনাটা প্রায় ভুলতে বসেছে। অমি চুপ করে বসে থাকতে না পেরে প্রসঙ্গ তুলতেই সে আমার দিকে এমনভাবে দৃষ্টি হানলো যে মুখ বন্ধ না করে কোনো উপায় নেই।
আমি আপন মনে ভাবতে লাগলাম, মিসেস এ্যাম্বারের খুনকে কেন্দ্র করে এ.বি.সি.-র যে চ্যালেঞ্জ তাতে সে হেরে গেছে বলেই হয়তো এই বিষয়ের আলোচনার সূত্রপাতেই ক্ষেপে ওঠে।