রেলওয়ে গাইডটা কোথায় ছিল সেটা কনস্টেবলের কাছ থেকে জানা গেল। সে বললো-মনে হয় লন্ডনে যাওয়ার ট্রেনের সময় খুনী ঐ গাইডবুক দেখছিলো বা কোন ক্রেতা ভুল করে ওটা ফেলে রেখে গেছে।
আমি এবার প্রশ্ন করলাম–কোনো হাতের ছাপ পাওয়া গেছে?
-না স্যার। তবে কাউন্টারের ওপরে কয়েকটি হাতের ছাপ এমনভাবে জড়িয়ে আছে যা থেকে চেষ্টা করেও কিছু উদ্ধার করা সম্ভব নয়।
এবার আমরা দোতলায় গেলাম যেখানে মিসেস এ্যাম্বার থাকতো। জায়গাটা বেশি বড় নয়। তবে পরিপাটি করে সাজানো। অগ্নিকুণ্ডের ওপরে একটি ছোট স্ট্যান্ডে তিনখানা ছবি রাখা। একটা মেরির ফটো, দ্বিতীয়টি এক বয়স্কা মহিলার। হাতের কব্জিতে ব্রেসলেট রয়েছে। পরনে দামী ফারের কোট। বেশ সচ্ছল ঘরের মহিলা সেটা পরিষ্কার বোঝা গেল। ইনি বোধহয় মিস রোজ। তৃতীয়টি বহু পুরানো। এক যুবক ও এক যুবতী হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে আছে, যুবকের পকেটে একগুচ্ছ গোলাপ শোভা পাচ্ছে। মনে হয় কোনো আনন্দ উৎসবে ছবিটি তোলা হয়েছিলো।
পোয়ারো বললো–এই ছবিটা মিঃ এবং মিসেস এ্যাম্বারের বিয়ের ছবি।
পাশের ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। একেবারে ফাঁকা। কোনো আসবাবপত্র নেই তবে বাঁপাশে একটা ছোট শেলফ, তাতে কিছু বাসনপত্র রয়েছে এবং পোশাক রয়েছে কিন্তু খুঁজে পেতে কোনো চিঠি পাওয়া গেল না।
আমরা এ. এ্যাম্বার থেকে বেরিয়ে এলাম। উল্টোদিকের ফুটপাথে একটি মেয়ে বসে আনাজপত্র বিক্রি করছিল, পোয়ারো তার দিকে এগিয়ে গেল। সেখান থেকে সে কিছু সবজি কিনলো, তারপর মেয়েটিকে লক্ষ্য করে বললো–আপনার দোকানের সামনে এরকম একটা খুন হওয়ায় আপনি ভীষণ ঝামেলায় পড়েছেন তাই না?
-কি আর বলবো। সকাল সন্ধে সবসময় তোক গিজগিজ করছে। কিন্তু কাল যদি এত লোকের ভিড় এখানে থাকতে হয়তো খুনটা হত না। অমন লম্বাচওড়া দাড়িওয়ালা লোকটা দোকানে ঢুকে কেমন করে খুন করে বেরিয়ে গেল…।
-তাই নাকি? আপনাকে কে বললো?
-কে আবার বলবে? লোকে কানাকানি করছে, তাই শুনছি। পুলিশ নাকি তাকে হাতকড়া পরিয়েছে। আহা-হা, শেষ পর্যন্ত বুড়িটার একটা উটকো লোকের হাতে মরণ হলো।
-আপনি কি তাকে দেখেছেন?
-না, সুযোগ বা সময় হয়নি। দোকানে সব সময় খদ্দেরের ভিড়। তবে দাড়িওয়ালা কাউকে আমার নজরে পড়েনি।
–ভুল শুনেছেন, আমি কথা বলে উঠলাম, লোকটা মোটেই দশাসই চেহারার নয়।
লক্ষ্য করলাম, আমার এই কথা শুনে আরো লোক দাঁড়িয়ে পড়লো। তবে প্রত্যেকে যা বললো, তার মূল কথা হলো বিকেল থেকে সন্ধে পর্যন্ত প্রায় জনা চারেক কালো রোগা বেঁটে চোহারার লোক দোকানে ঢুকেছে।
আসলে পোয়ারোর উদ্দেশ্য ছিল কায়দা করে জেনে নেওয়া যে ঐ দোকানে অচেনা লোক ঢুকেছিল কিনা।
-ভণিতার প্রয়োজন ছিলো, নতুবা কোনো ইংরেজ মুখ খুলতে না। পোয়ারো বললো। শামুকের মতো নিজেদের খোলর মধ্যে ঢুকিয়ে রাখবে। কিন্তু এলোমেলোভাবে কিছু বলতে সব কথা হুড়মুড় করে বলে যাবে।
এরপর আমরা একটা ছোটো টিলার ওপর উঠলাম। লক্ষ্য করলাম ওখান থেকে মিসেস এ্যাম্বারের দোকানটা দেখা যায় কিনা। হ্যাঁ, দোকানটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। পোয়ারো একটা মাঠকোঠা বাড়ির দরজায় করাঘাত করলো। একটা ছোটো ছেলে এসে দরজা খুলে দিলো। পেছনে পেছনে তার মা এসে জানালো–আমরা কিছু নেবো না।
–আমরা ইভনিং ফ্লিকার পত্রিকার তরফ থেকে আসছি। পোয়ারেরা মিথ্যের আশ্রয় নিলো। মৃত এ্যাম্বার সম্পর্কে আমরা কিছু আপনার কাছ থেকে জানতে চাই। বিনিময়ে আপনি পাঁচ পাউন্ড পাবেন।
কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে মহিলার মধ্যে খুশী লক্ষ্য করলাম। তাড়াতাড়ি আমাদের বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলো।
মহিলা নিজের পরিচয় দিলো।
মিসেস ডরোথি, ডরোথি ফাউলার।
পোয়ারো তার সামনে টাকাটা মেলে ধরলো। মহিলা বলে চললো-মিসেস এ্যাম্বার তেমন মিশুকে ছিলো না। রাত আটটায় দোকান বন্ধ করে নিজের ঘরে সেই যে ঢুকতো আর বেরোতে না। তার স্বামীটা ছিলো মাতাল, লম্পট। ফলে মহিলাকে অনেক দুর্ভোগ সহ্য করতে হত। শেষ পর্যন্ত ঐ শান্ত মহিলাটিকে খুন করে মাতালটা তার কষ্টের অবসান ঘটালো।
–আচ্ছা, আপনি কি জানেন, মিসেস এ্যাম্বার কোনো বেনামী চিঠি পেতেন কিনা?
একটুক্ষণ চুপ করে মিসেস ডরোথি বললো, গালমন্দে ভরা চিঠি? না, সেরকম কিছু আমার কানে আসেনি।
-কাল কোনো সময়ে মিঃ এ্যাম্বারকে দোকানের আশেপাশে দেখেছেন?
–দেখবো কি করে? চোরের মতো এসে নিজের কাজ সেরে সরে পড়েছে।
আশানুরূপ কোনো তথ্য পাওয়া গেল না। তবুও কথামতো পোয়ারো তার হাতে টাকা দিলো।
ওখান থেকে বিদায় নিয়ে আমরা থানায় এলাম। গ্লেনকে দেখলাম, খুব ক্লান্ত লাগছে। সারাদিন তার অনেক ধকল গেছে। দোকানের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা লোকেদের জিজ্ঞাসাবাদ করে যেটা বোঝা গেছেমিঃ এ্যাম্বারকে কেউই চোখে দেখেনি। অতএব ঐ নামের তালিকা থেকে দুটো নাম নোট করে নিয়ে আমরা থানা থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
বড় রাস্তার ওপরে মিঃ পাত্রিজের বাড়িতে প্রথমে গিয়ে ঢুকলাম। তিনি মিসেস এ্যাম্বারকে শেষ জীবিতাবস্থায় দেখেছিলেন সাড়ে পাঁচটায়, সিগারেট তামাক কিনতে গিয়ে। তবে শেষ দেখা কথাটার ওপর তিনি ভীষণ জোর দিলেন। তার মতে, তার পরেও দোকানে অনেকে জিনিস কিনতে গিয়েছিলো।