এ্যাম্বার দুম করে ক্ষেপে গিয়ে বললো–আপনারা, গোটা ইংরেজ জাতটা আমার পেছনে লেগেছেন, আমি আবার বলছি, তাকে আমি খুন করিনি। অবশ্য তাকে আমি খুন করার ভয় দেখাতাম ঠিকই, কিন্তু সেটা ছিলো আমার তামাশা, এ্যালিন্সও সেটা ভালো করে জানতো। আমি কাল তার ধারেকাছে যাইনি। তার সঙ্গে কার্ডি, জর্জ, প্ল্যাট ছিল।
গ্লেন ইশারায় তাকে লকআপে বন্দী করতে বললো।
–আচ্ছা, ও যেসব লোকের নাম বললো, তারা কারা?
কারা আবার? ওরই মতো লম্পট শয়তানের দল।
–দোকান থেকে কি কোনো জিনিস চুরি যায়নি, আপনি নিশ্চিত?
হ্যাঁ, টাকাপয়সা খোয়া যায়নি। তবু দু-এক প্যাকেট সিগারেট সরলেও সরতে পারে।
–আচ্ছা, দোকানের অসামঞ্জস্য কোনো কিছু আপনার দৃষ্টিতে পড়েনি। পোয়ারো প্রশ্ন করলো।
কাউন্টারে একটা বই খোলা অবস্থায় পড়েছিলো, রেলওয়ে গাউড। যে পৃষ্ঠা দুটো খেলা ছিলো, তার মধ্যে এ্যান্ডোভারে যাওয়া-আসার ট্রেনের তালিকা ছিলো। মিসেস এ্যাম্বার এক পেনি দামের পকেট গাইড রাখতো।
সহসা পোয়ারোর চোখ খুশীতে ঝিলিক দিয়ে উঠলো। উৎফুল্ল হয়ে বললো–এটা কী ব্রাডশ না এ.বি.সি.?
পোয়ায়োর আগ্রহ দেখে গ্লেন বিস্মিত হলো-ওটা এ.বি.সি.।
.
মৃতদেহ দেখার জন্য পোয়ারো মর্গে গেল। মহিলার মৃত মুখটা দেখে পোযারোর দুঃখ হলো। সঙ্গের সার্জেন্টটি জানালো–যে অস্ত্রের সাহায্যে ওকে খুন করা হয়েছে সেটা পাওয় যায়নি।
পোয়ারো ডঃ কারকে জিজ্ঞেস করলো, যেটা দিয়ে আঘাত করা হয়েছে সেটা ব্যবহার করতে কি অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়?
-না, তেমন কোনো বলপ্রয়োগ করতে হয় না।
–তাহলে খুনী পুরুষ বা মহিলা, যে কেউ হতে পারে। পোয়ারো বললো।
–সব কিছুই সম্ভব। তবে কি জানেন, মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে সাধারণ নিয়মে পুরুষের কথাই আগে মনে আসে। কাউন্টারে গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকতে দেখে ছটা পাঁচের কোন ক্রেতা তাকে দেখতে না পেয়ে চলে যায়।
মৃতদেহ দেখা শেষ করে পোয়ারো সেখান থেকে বেরিয়ে এলো।
ধরা যাক, এ্যাম্বার দোকানে গিয়ে বৌকে গালিগালাজ করেছিলো। সেটা নিশ্চয়ই পেছন থেকে নয়। সামনাসামনি ঘটবে। যাই হোক, তার আগে আমরা মিসেস এ্যাম্বারের বোনঝি-র সঙ্গে আলাপ করে আসি।
ঠিকানা নিয়ে আমরা নির্দিষ্ট বাড়ির সামনে গিয়ে হাজির হলাম। যেমন-তেমন বাড়ি নয়, অট্টালিকা, একজন সুন্দরী মেয়ে দরজা খুলে দিলো। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, মেরি ডোয়ার কিনা?
–হ্যাঁ, আমিই মেরি।
সে আমাদের বাড়ির মধ্যে নিয়ে গেলো। জানতে পারলাম, বাড়ির লোকেরা কেউ নেই। আমরা একটা ছোট্ট ঘরে গিয়ে বসলাম।
-তোমার মাসির মৃত্যু সংবাদ তুমি নিশ্চয় পেয়েছে। পোয়ারো বললো।
–হ্যাঁ, আজ সকালে খবরটা পেয়েছি। মেয়েটির গাল বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়লো।
–পুলিশ তোমাকে এ্যান্ডোভারে যেতে বলেনি?
–হ্যাঁ, বলেছে। কিন্তু নিজের ইচ্ছেতে যেতে পারি না। যার চাকরি করি তার মতামত না পেলে যেতে পারি না।
–মাসিকে তো তুমি ভালোবাসতে।
-হ্যাঁ, মা-কে হারাবার পর আমি আমার মাসির সঙ্গে লন্ডনে পাঁচ বছর কাটিয়েছি। তারপর আমি চাকরি জীবন শুরু করি। তখন অন্তত সপ্তাহে একবার তার সঙ্গে দেখা করতে যেতাম। জানেন, ঐ হতচ্ছাড়া জার্মানটাকে নিজের মেসোমশাই ভাবতে গা ঘিন ঘিন করে। মাসিকে সব সময় তিনি ভয় দেখাতেন, বলতেন, গলা কেটে ধড়-মুণ্ডু অলাদা করে দেবে। ছুরি মেরে খুন করবে।
-আচ্ছা, তোমার মাসির খুন হওয়ার খবর পেয়ে তোমার প্রথমে কি মনে হলো?
পোয়ারো তার কাছে জানতে চাইলো।
-প্রথমে কথাটা বিশ্বাস হয়নি। কারণ আমার মেসোমশাই মুখেই লম্ফঝম্ফ করতো। কিন্তু আসলে লোকটা একটা ভীতুর ডিম।
-ধরো, তোমার মাসিকে তোমার মেশোমশাই খুন করেনি।
করেনি?
এ.বি.সি. মার্ডার–আমি নিশ্চিত নই। এটা ধরে নিচ্ছি। খুনী কে, এ সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা আছে?
–না না, আমরা এ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই।
–আচ্ছা, তুমি বলতে পারবে, তোমার মাসির নামে কোনো টাইপ করা চিঠি আসতো কিনা?
-না, আমি ছাড়া মাসির কোনো জীবিত আত্মীয় নেই।
–তোমার মাসির সঞ্চয়?
–সেই টাকা দিয়ে মাসির সংসার চালানো ছাড়া আর কিছু হবে না।
–আচ্ছা মেরি, তোমাকে পরে আমার দরকার হতে পারে, পোয়ারো বললো, তোমাকে এই ঠিকানায় চিঠি দিতে পারি তো?
-না, এ শহরে আর কি করতে থাকবো? আমার মাসি-ই যখন রইলো না। আমাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। আমি ঠিক করেছি, এখান থেকে লন্ডনে চলে যাবো।
–বেশ, যাওয়ার আগে তুমি আমার এই ঠিকানায় যোগাযোগ করে তোমার হদিশ জানিও।
–আপনি একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ।
–তাহলে মাসির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কি কোনো অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে?
–হ্যাঁ, আমরা তোমার কাছ থেকে সাহায্য আশা করতে পারি কি?
নিশ্চয়ই, আমি রাজী।
এবার আমরা ওখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম। হাজির হলাম মিসেস এ্যাম্বারের দোকানে। এই সময়ে আমার উদ্দেশ্যটা হলো, পোয়ারো ঠিক কালকের পরিবেশটা তৈরি করতে চেয়েছিল, আজ রাস্তাটা ফাঁকা। তবে খানিক বাদে লক্ষ্য করলাম জায়গায় জায়গায় কয়েকজন মিলে জটলা করতে। দোকানের সামনে সব বয়সের লোক ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। উল্টোদিকের ফুটপাথ থেকে আমরা স্পষ্টভাবে দোকানের নামটা লক্ষ্য করলাম।
এ. এ্যাম্বার।
ভিড় সরিয়ে আমরা দোকানে গিয়ে ঢুকলাম। পুলিশও রয়েছে সেখানে, দোকানে একটা স্তিমিত আলো জ্বলছে। ফলে পরিবেশটা কেমন ভুতুড়ে হয়ে উঠেছে। কয়েকখানা সস্তা দামের ম্যাগাজিন দোকানের একপাশে পড়ে আছে যেগুলো গতকাল বিক্রি হয়নি। কাউন্টারের ওপর এক কোণে দুটো কাঁচের জার। একটাতে পিপারমেন্ট ও অন্যটাত মিহিদানার চিনি রয়েছে।