…যদি ধরি চারটি খুনের মধ্যে তিনটি খুন করেছে কাস্ট। দুনম্বর খুনটা করেছে অন্য কেউ… যার সঙ্গে বেটি বার্নার্ড সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। কারণ কথা যে গুছিয়ে বলতে পারে না, এমন একটা লোকের পক্ষে রাত বারোটার পর প্রেম নিবেদনের অছিলায় বেটি বার্নার্ডকে নিয়ে গেছে সমুদ্রের ধারে…ভাবতেও আশ্চর্য লাগে। যদিও বা সে অন্য ব্যক্তি হয় তাহলে খুনটা বেশ নিয়ম মেনেই করেছে, কে সেটা জানতে হবে। অনেক ভাবনা চিন্তার পর আমি আমার দ্বিতীয় সিদ্ধান্তে হাজির হলাম, যে দ্বিতীয় খুনটি করেছে সে অন্য কেউ এবং বেটি বার্নার্ডের মৃত্যুর জন্য সে দায়ী। আচ্ছা, এমন কি হতে পারে না, ঠিক তিনটে খুনের জন্য সেই লোকটাই দায়ী।
-না না, এ অসম্ভব। ফ্রাঙ্কলিন জোরালো প্রতিবাদ করে উঠলো, এটা কোনো যুক্তি নয়।
–এটাই যুক্তি। এরকুল পোয়ারোর কোনো সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক নয়। এই সিদ্ধান্তকে ভালো করে যাচাই করে নেওয়ার জন্য আমি চিঠি দুখানা আবার ভালো করে পড়লাম। চিঠি পড়ে বুঝলাম, চিঠির লেখক এ.বি.সি. সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক। পাগলও নয়, মাথা খারাপও নয়। আসলে সে আমাদের অন্ধকারে হাতড়ে বেড়ানোর জন্য পাগলের ভান করছে। তাহলে এমন চিঠি লেখার উদ্দেশ্য কি তার? হঠাৎ মনে হলো, একাধিক খুন করে আমার বা আমাদের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘোরাতে চেয়েছিল।…তাহলে এবার দেখা যাক, প্রথমে আলাদাভাবে, তারপর একই সঙ্গে চারটি খুনের জন্য মৃত বা মৃতার আত্মীয়স্বজন বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি সন্দেহজনক। যদি এ্যান্ডোভারের মিসেস এ্যাম্বারকে দিয়ে শুরু করি তাহলে সেখানে তার স্বামী…কিন্তু অন্য খুনের ব্যাপারে তাকে দোষারোপ করা যায় না। বেক্সহিলের ঘটনাতে বেটি বার্নার্ডের হত্যার জন্য দায়ী করা যায় মঁসিয়ে ফ্রেসারকে তাহলে বাকি খুনের ব্যাপারে হিসেব গরমিল হয়ে যায়।..আবার ধরা যাক, স্যার কারমাইকেলের খুন করা হয়েছে প্রচুর সম্পত্তির লোভে, উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য। এক্ষেত্রে যদি মঁসিয়ে ফ্রাঙ্কলিনকে খুনী ধরা হয় তাহলে হঠাৎ মনে হয়, এই ফ্রাঙ্কলিন ক্লার্ক এবং এ.বি.সি, এক ও অভিন্ন।
ফ্রাঙ্কলিন রেগে গিয়ে বলে উঠলো, কাস্ট নিশ্চয় তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো স্বীকার করেনি?
-না, সে সব স্বীকার করে নিয়েছে। কিন্তু তার জবানবন্দী লক্ষ্য করে হিসেব করতে গিয়ে দেখি গরমিল হয়ে যাচ্ছে। তার সব কথা শুনে, তাকে দেখে আমার মনে হলো, সে আসল অপরাধী নয়। লোকে তাকে খুনী বলে অভিহিত করার চেষ্টা করছে।
…কিন্তু মঁসিয়ে ফ্রাঙ্কলিন, আপনার সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। কূলে এসে তরী ডুবলো। আপনি আপনার দাদার সম্পত্তির অধিকার পাওয়ার জন্য তাকে খুন করলেন। আপনি আমাকে একটা চিঠি দেখিয়েছিলেন, মনে আছে নিশ্চয়ই…যেটি আপনার দাদা আপনাকে লিখেছিলেন। সেই চিঠি পড়ে আপনার মনে আশঙ্কা জাগলো। মিস গ্রে-কে আপনার দাদা স্নেহ করতেন। যদি সেটা ধীরে ধীরে ভালোবাসায় পরিণত হয় এবং যদি দুজনে বিয়ে করে। ভবিষ্যতে তাদের সন্তান হবে। তাহলে সে-ই সন্তান হবে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী। অতএব ভালো-মন্দ বিচার না করে আপনার দাদাকে আপনি খুন করবেন। আর এই একটি কারণকে উপলক্ষ্য করে আপনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কি করে সব বাস্তবায়িত করা যায় যখন ভাবছেন তখন একদিন কাস্টের সঙ্গে আপনার দেখা হয়ে গেল। ভাগ্য আপনার সুপ্রসন্ন ছিল।
…তার মাথা যন্ত্রণা, শারীরিক অসুস্থতা, এ.বি.সি. বর্ণানুক্রমিক খুনের পরিকল্পনা সব মিলিয়ে আপনি হিসেব করে দেখলেন কাস্ট এবং আপনার দাদার আদ্যাক্ষর সি। তারপরেই আপনি রণক্ষেত্রে নেমে পড়লেন। শহরের নামকরা কোম্পানির নামে প্যাড ছাপালেন যেগুলো ভুয়ো। ভুয়ো নিয়োগপত্র পাঠালেন কাস্টের কাছে। যেখানে আপনি মোটা মাইনে এবং কমিশনের টোপ দিয়েছেন। কোনো এজেন্টের কাছ থেকে সস্তায় কিনে নিয়ে এলেন মোজা এবং সেই মোজা নিজের খরচায় পার্শেল করে পাঠিয়ে দিলেন কাস্টের কাছে। সেই সঙ্গে রেজিস্ট্রি ডাকে এ.বি.সি. গাইড পাঠাতে ভুললেন না। প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ এখানেই শেষ। এবার আপনার কাজ হলো শিকার খুঁজে বেড়ানো। একদিন মিসেস এ্যাম্বারের দোকানের সাইন বোর্ডে স্বত্বাধিকারীর নাম এবং ঘটনাস্থলের খুঁটিনাটি সব জেনে ফিরে এলেন বাড়িতে।…দ্বিতীয় শিকার বেটি বার্নার্ড, যে পুরুষ সঙ্গ পেতে পছন্দ করে। তার সঙ্গে পরিচয় হলো এবং ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়লো। প্রথম দুটি খুন করে আপনি যখন সম্পূর্ণ ফল লাভ করলেন তখন বাকিটুকু করার জন্য আদাজল খেয়ে লেগে পড়লেন। এ্যান্ডোভারের কয়েকটি বাড়ির পরিবারের নামের একটা তালিকা করে কাস্টকে পাঠালেন। কাস্টকে নির্দেশ দিলেন সে যেন তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেকটি পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এর উদ্দেশ্য হলো, খুনের দিন কাস্ট যে এ্যান্ডোভারে ছিল এটা তার প্রমাণ। একইভাবে আমাকে চিঠি দিয়ে খুনের তারিখ এবং জায়গা জানালেন। আপনি মিসেস এ্যাম্বারের দোকানে গিয়ে সিগারেট চাইতে সে পিছন ঘোরে। আপনি সময় নষ্ট না করে তাকে আঘাত করে বসলেন। এরপর বেক্সহিল, নির্দিষ্ট তারিখের একেবারে দিনের প্রারম্ভে সেখানে কাজটা হাসিল করলেন। সেটা চব্বিশ তারিখ হলেও কাগজে কলমে সেটা হবে পঁচিশ।