-বেশ, তাই হোক, তবে আমার গল্পে কোনো জটিলতা নেই। কোনো আবেগ টাবেগের সহবাস নেই সেখানে। সাদামাটা যেমন হওয়া উচিত তেমনই অপরাধজনক গল্প।
মনে করো, একটি ঘরে চারজন লোক বসে ব্রিজ খেলছে। ফায়ারপ্লেসের পাশে একটি চেয়ারে আর একজন লোক বসে আছে। সন্ধে নাগাদ ঘটে গেল অঘটন। পঞ্চম লোকটি খুন হয়েছে। চারজনের মধ্যে একজন ডামি অবস্থায় খেলার মাঝখানে উঠে গিয়ে তাকে খুন করেছে। খেলার ঝোঁকে সেটা অন্যদের নজরে পড়েনি। এখন প্রশ্ন হলো, খুন করলো কে?
পোয়ারোর গল্প শুনে আমি একটুও উত্তেজিত হলাম না।
পোয়ারো সেটা লক্ষ্য করে বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকালো–হেস্টিংস, তোমরা লেখকরা এখন সস্তা জিনিসকে ভালোবেসে লিখছে। তোমরা অনেক খুনের গল্প চাও।
–কথাটা ভুল নয়। প্রথম খুনের পর পাঠককে ধরে রাখার জন্য দ্বিতীয় খুনের প্রয়োজন হয়। কথার মাঝে ফোন বেজে উঠলো, পোয়ারো এগিয়ে গিয়ে রিসিভার তুলে নিলো। দু-মিনিট পরে সে নিজের জায়গায় ফিরে এলো। অমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম।
তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই নিজে বললো–জ্যাপ ফোন করেছিলো। ও এখান থেকে এ্যাভোর থানায় যায়। সেখানে একটা ঘটনা ঘটেছে। রাস্তার পাশে সিগারেট, খবরের কাগজের দোকানের সামনে এ্যাম্বার নামে এক বয়স্কা মহিলা মৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
-খুনই যখন করলো তখন বুড়িকে না করে একটা চুঁড়িকে করতে পারতো।
–এ্যান্ডোভারের পুলিশের ধারণা, খুনী তাদের অজানা নয়। তারা তাকে যখন খুশী গ্রেপ্তার করতে পারে। পোয়ারো গম্ভীর কণ্ঠে জানালো, মনে হয় স্বামীর সঙ্গে মহিলাটির বনিবনা ছিলো না। অপদার্থ মাতাল স্বামী স্ত্রীকে সর্বদা খুন করবে বলে ভয় দেখাতো।
লোকটিকে ধরার আগে পুলিশ পোয়ারোর চিঠিটা দেখতে চায়। তাই আমরা রোমাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
ঘণ্টাখানেকের পথ। পোয়ারো গাড়িতে উঠে কেবল একটাই কথা বললো–হেস্টিংস, এই শুরু। থানায় গিয়ে হাজির হতেই পুলিশ ইনসপেক্টর হাসিমুখে আমাদের অভ্যর্থনা জানালো। ছফুট দশাসই চেহারর সদালাপী মানুষ। আমরা তার ব্যবহারে খুশী হলাম।
আমাদের খুনের বর্ণনা করলো। সে বলতে তাকে–খুনটা হয়েছে বাইশ তারিখ ভোরে। আমাদের একজন কনস্টেবল ডোভার মৃতদেহ আবিষ্কার করে। সে তার দোকানের খোলা দরজার কাউন্টারের সামনে মৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। মেডিকেল রিপোর্টে জানা গেছে, আচমকা তাকে পেছন থেকে আক্রমণ করা হয় এবং কোনো ভারী অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হয়েছে। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এবং ছটা বেজে পাঁচ মিনিটে দুজন ক্রেতা দোকানে গিয়েছিলো। তাদের সন্ধান পাওয়া গেছে। তাই বলা যেতে পারে ঐ সময়ের মধ্যে মহিলা খুন হয়েছে। কিন্তু এই পঁয়ত্রিশ মিনিটের মধ্যে মহিলার স্বামীকে তার দোকানের ধারে-কাছে দেখা যায়নি। রাত নটার সময় ফ্রি ক্রাউন্স শুড়িখানায় তাকে দেখা গেছে।
মহিলার স্বামীর চরিত্র সম্পর্কে পোয়ারো কৌতূহল প্রকাশ করলে ইনসপেক্টর জানালো ভদ্রলোক জাতে জার্মান। আগে খানসামার কাজ করতো। কিন্তু মাতলামির জন্য সে চাকরি তাকে হারাতে হয়। অগত্যা মিসেস এ্যাম্বার কি করবেন, কাজে নামতে হলো। মহিলা যা রোজগার করতো সব অর্থ ঐ মাতালটার হাতে দিয়ে দিতো। তবু তার মন ভরত না। মিস রোজের বাড়িতে মিসেস এ্যাম্বার কাজ করতে গেলো। তারপর মিস রোজ মারা যায়। ঐ সময় মহিলা কিছু অর্থ পায়। সেই অর্থ নিয়ে শেষে এই সিগারেট, খবরের কাগজের দোকান খোলে। মহিলার তবুও শান্তি ছিলো না। যখন তখন তার স্বামী দোকানে এসে হামলা করতো। অবশেষে কোনো উপায় না দেখে মহিলা তাকে সপ্তাহে পনেরো শিলিং হাতখরচা দিতে শুরু করে। ওদের কোনো ছেলে-মেয়ে নেই। তবে মিসেস এ্যাম্বারের একটি সুন্দরী বোনঝি আছে।
–দোকান থেকে কোনো জিনিস চুরি যায়নি? পোয়ারো প্রশ্ন করলো।
–না।
–তাহলে উন্মত্ত অবস্থায় দোকানে ঢুকে গালিগালাজ করে স্ত্রীকে হত্যা করে!
–আপাতত তাই মনে হয়। পুলিশ ইনসপেক্টর গ্লেন এবার পোয়ারের কাছ থেকে চিঠি নিয়ে চোখ বোলালো। তারপর বললো–লোকটি জার্মান। তাহলে আমাদের ব্রিটিশ পুলিশ লিখবে কেন? তাছাড়া ওর মতো উন্মত্ত মাতাল লোকের পক্ষে টাইপ করা সম্ভব নয়। হয়তো তারিখটার সঙ্গে…এটা একটা নিছক কাকতালীয় ব্যাপার।
–সেটাই স্বাভাবিক পোয়ারো বললো; কিছুক্ষণ কি ভেবে তারপর জানতে চাইলো, মিসেস এ্যাম্বারের সঙ্গে তার আলাপ এবং বিবাহ।
এই সময় একজন কনস্টেবল ঘরে এসে ঢুকলো–মিঃ এ্যাম্বারকে থানায় আনা হয়েছে।
এ যেন দারিদ্র্য ও লাম্পট্যের এক প্রতিমূর্তি, কানসৎ এ্যাম্বারকে দেখে তাই মনে হলো।
গ্লেনকে দেখে লোকটি ভীষণভাবে চটে গেলো। চিৎকার করে বললো, এসব কি ইতরামি। জানেন, আপনার বিরুদ্ধে আমি মানহানির মামলা করতে পারি। আমি খুন করিনি। একটুক্ষণ থেমে নিজেকে সংযত করে বললো, কিছু মনে করবেন না। এই ছোট্ট শহরে একজনও আমার মতো বুড়ো মানুষকে দয়া দেখায় না। ভালো ফর্মে না। এরপর লোকটি কেঁদে ফেললো।
গ্লেন বললো–থানায় তোমাকে আনা হয়েছে ঠিকই, তাই বলে তুমি যে দোষী সেটা প্রমাণ হচ্ছে না। যতক্ষণ না বিচার করে দেখা যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত বলা যায় না, তোমার স্ত্রীর খুনী তুমি।