-তাতে ক্ষতি কি?
-ক্ষতি আছে। সে নাকি কাস্টকে খালাস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নাকি পাকা করে ফেলেছে। বেক্সহিল খুনের রাতে কাস্ট নাকি ঘটনাস্থলের ধারেকাছেই ছিল না, এমন প্রমাণ তার কাছে আছে। সেদিন ঐ লোকটা নাকি স্ট্রেঞ্চ নামে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে সন্ধ্যা ছটা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত দাবা খেলে কাটিয়েছিল ইস্টবোনের হোয়াইট ক্রম হোটেলের বৈঠকখানায় বসে। কাগজে কাস্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশিত হতে স্ট্রেঞ্চ নিজে থেকে এসে ঐ উকিলের সঙ্গে দেখা করে এবং সমস্ত ঘটনার কথা বলে। ফলে উকিলটি আনন্দে একটা মস্ত বড় দরখাস্ত নিয়ে বসে আছে।
-তুমি কি ঐ ভদ্রলোককে কখনো দেখেছো? ঐ যে কি নাম? স্ট্রেঞ্চ।
-হ্যাঁ, লুকাসের কাছ থেকে ওর ঠিকানা আমি সংগ্রহ করেছিলাম। সেইমতো ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করি। আমাকেও ঐ একই কথা সে বললো। ওরা নাকি খেলায় এত মত্ত ছিল যে রাত বেড়ে গেছে খেয়াল নেই। হোটেলের বেয়ারা আলো নেভাতে এলে ওদের হুশ হয়। ফলে খেলায় ইতি টেনে যে যার কামরায় চলে যায়। হোটেলে রেজিস্টার দেখলাম। সেখানে কাস্টের হাতের লেখা নিজের সই রয়েছে। হোটেলের বেয়ারাকে জিজ্ঞাসা করলাম। সে-ও একই কথার পুনরাবৃত্তি করলো। এবার তাহলে বুঝতে পারছেন ঘটনাটা কোথায় গড়াতে চলেছে। তাই এ্যান্ডোভার, কাস্টন আর ডকাস্টারের খুনের অভিযোগগুলি যদি একসঙ্গে ওর ওপরে চাপিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে বেহিলের ব্যাপারটা আর আমল পাবে না। তবে বেহিলের ঘটনার মৃতদেহ পরীক্ষা করে জানা গেছে খুনটা হয়েছে রাত বারোটা থেকে রাত একটার মধ্যে। যদি ভদ্রলোকের কথা ধরে নেওয়া যায়, তাহলে ইস্টবোর্ন থেকে বেহিল চৌদ্দ মাইল রাস্তা। যদি সে বারোটা নাগাদ হোটেল থেকে বেরোয় তাহলে অত রাতে গাড়ি পাওয়া সম্ভব নয়। তাহলে টাঙ্গা ধরতে হয়। সময় লাগবে দেড় ঘণ্টা, খুব কম করেও। আর পায়ে হেঁটে যেতে পাঁচ ঘণ্টা খরচ করতে হবে। ঐ সময়ের মধ্যে বেক্সহিলে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
–এই অবস্থায় তুমি কি করতে চাও?
–আমি কি করবো? যা করার মিঃ পোয়ারো করবেন। সে কিভাবে খুন করেছে সেটাই সর্বপ্রথম জ্ঞাতব্য বিষয়। আচ্ছা, স্যার এখন চলি। জরুরী মিটিং আছে। সবাই আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, স্যার। আসি।
পোয়ারো আমাকে লক্ষ্য করে বললো–হেস্টিংস, তোমার কি ধারণা? এ.বি.সি. মামলা শেষ পর্যন্ত কি নিষ্পত্তি হতে চলেছে?
-সেরকমই, কারণ সাক্ষ্য প্রমাণ থেকে যা জানা গেছে আর লোকটার সম্পর্কেও তো কিছু তথ্য জানা গেছে। তাছাড়া তুমি, ক্রোম, জ্যাপ আছো…সবাই আছো, বাধা কোথায়?
-তোমরা কিন্তু একটা ব্যাপারে মোটেও গুরুত্ব দিচ্ছে না। এ.বি.সি. রহস্যের প্রধান এবং প্রথম কথা সেখানেই সেই বশংবদ বন্ধুটির কথা একবারও জানার চেষ্টা করলে না।…সে কবে জন্মেছে..বংশ পরিচয়, চাকরি থেকে কবে বরখাস্ত হয়েছে…কতদিন ধরে মিসেস মার্থারির ভাড়াটে হিসাবে ছিল, এগুলো জানলেই সব জানা হয় না। আমাদের জানতে হবে, কেন সে নরঘাতক হয়ে উঠেছে। কুশলী হওয়া সত্ত্বেও কেন সে তার পাপের মাত্রা বাড়িয়ে গেছে। কেন সে নিজেকে অপরাধী বলে মনে করে, সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে নেয়। ইত্যাদি এই ধরনের নানা প্রশ্ন। এইসব প্রশ্নের উত্তর তোমার জানা আছে? কেন সে বেছে বেছে এই লোকগুলোকে খুন করলো? ..হেস্টিংস, আমি আর একটা আলোচনা করতে চাই সকলের সঙ্গে বসে। তারপর যাবো আমার সেই বন্ধুটির কাছে। আমি তার মুখোমুখি হবো। নিভৃতে বসে আমি তার সঙ্গে কথা বলবো। তাকে আমি নতুন করে চিনবো, আমার প্রশ্নের উত্তরে কাস্ট কি বলবে, তুমি তা জানো না। আমি জানি সে নির্ভেজাল মিথ্যে কথা বলবে। সেটাই হবে আমার সত্যের উন্মোচন। মিথ্যের অন্তরাল থেকে বেরিয়ে আসবে এক নির্দয় নিষ্করুণ মহাসত্য।
এরপর প্রায় সাত-আটদিন পোয়ারোর সঙ্গে কোনো কথা হলো না। সে নিজের কাজে এত মগ্ন যে নাওয়া-খাওয়ার কথা পর্যন্ত ভুলে গেল। আর ধ্যান ভঙ্গ হতে সে আমাকে বললো, তার ইচ্ছে বেক্সহিল আর তার আশেপাশের অঞ্চলে সে আর একবার যেতে যায়। আমিও ইচ্ছে করলে তার সঙ্গে যেতে পারি।
অতএব পরদিন সকালে আমরা দুজনে বেহিলের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছতে দেখি আমাদের দলের অনেকে সেখানে হাজির হয়েছে। সকলেই আলাদা আলাদা ভাবে পোয়ারোর সঙ্গী হবে বলে জানিয়েছিল। পোয়ারো কারো মনে ব্যথা দিতে চায়নি। তাই সকলে এসে জমা হয়েছে।
আমরা সকলে একজোট হয়ে বার্নাড়দের বাড়ি গেলাম। মিসেস বার্নাডের সঙ্গে তার নিহত মেয়ের সম্পর্কে আর একবার আলোচনা হলো।
এরপর আমরা গেলাম ইস্টবোর্নে। হোয়াইট ক্রস হোটেলের ম্যানেজারের সঙ্গে কাস্টের ব্যাপারে বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো। হোটেলের বেয়ারাও বাদ পড়লো না এই জেরার হাত থেকে। এবার আমরা এলাম ঘটনাস্থলে। যেখানে বেটির মৃতদেহ আবিষ্কার হয়েছিল। সমুদ্রের বালিয়াড়িতে কয়েকপাক ঘুরঘুর করে আমরা গাড়ির দিকে রওনা হলাম।
আমরাও নির্বাক পোয়ারোর পেছনে পেছনে ঘুরছি। এরকম হয়রানি করার কি মানে, সেটা জিজ্ঞেস করার সুযোগ পাওয়ার আগে সে গিয়ে ঢুকলো জিঞ্জার ক্যাটে। সেখানে লিলি হিগলির সঙ্গে কথাবার্তা সেরে সে তার রসিকতা করতে বসলো। যেমন তার পায়ের সৌন্দর্য নিয়ে কত প্রশংসা করলো। মুহূর্তের মধ্যে তার ঠাট্টা-তামাশা ভরা মুখখানা গম্ভীর হয়ে উঠলো।