-এটা কখন হয়েছে?
–প্রায় সাড়ে পাঁচটা কি তার থেকে দু-পাঁচ মিনিট এদিক-ওদিক হবে।
–তিন ঘন্টা আগে ঘটনাটা ঘটেছে। আপনারা এত দেরি করে এলেন কেন? এতক্ষণ কী করছিলেন?
–আমরা তো খুনের ব্যাপারটা আগে শুনিনি। শুনলাম এক বোর্ডারের কাছে থেকে। সাড়ে সাতটার খাবার টেবিলে বসে সে সিনেমা হলের খুনের কথাটা বলছিলো। সেই শুনে মেরি তখন আমাদের সব কিছু বললো। আমি তখন দারোয়ান আর মেরিকে নিয়ে দোতলায় ষোলো নম্বরে গিয়ে হাজির হলাম, ততক্ষণে লোকটা হাওয়া হয়ে গেছে।
মেরি, তুমি বলো তো, লোকটার পরনে কি ধরনের পোশাক ছিল? দেখতে কেমন ছিল?
–লোকটার চেহারা লম্বা, ছিপছিপে, একটু খুঁড়িয়ে হাঁটে। চোখে চশমা…গায়ে ছিল পুরানো পা পর্যন্ত ঢাকা একটা ওভারকোট, মাথায় টুপি।
–লোকটার নাম কি? এন্ডারসন প্রশ্ন করলো।
-হা স্যার, রেজিস্টার আমি সঙ্গে করে এনেছি। আপনাদের সুবিধার কথা ভেবে। তারপর মিঃ বল রেজিস্টারটা টেবিলের ওপর খুলে ধরলো।
আমাদের যেন তর সয় না। হুমড়ি খেয়ে সকলে রেজিস্টারের ওপর পড়লাম। দেখলাম প্রথমে বর্ণমালার বড় হাতের অক্ষর দুটি প্রথমে, পদবীর অংশটুকু
এন্ডারসন বিড়বিড় করে বললো, এ.বি. ক্যাস বা কেস? যাই হোক, তিনটি অক্ষর মিলিয়ে নামটা ছোট করলে দাঁড়ায় এ.বি.সি.। ক্রোম মাথা তুলে বলল।
-ঘরে মালপত্র কিছু ছিল?
–মালপত্র বলতে বিরাট একটা সুটকেস। তার মধ্যে অনেকগুলো ছোটো ছোটো পিচবোর্ডের বাক্স। ঐ বাক্সগুলোতে সস্তা দামের একজোড়া করে মোজা ছিল।
ক্রোম খুশির আমেজে পোয়ারোর দিকে হাত বাড়িয়ে বললো-মঁসিয়ে পোয়ারো আপনার ধারণা ঠিক। ইয়ার্ডের তরফ থেকে আপনাকে অভিনন্দ জানাচ্ছি।
‘এটাকে আবার ক্যাপ্টেন হেস্টিংস-এর লেখা বলে মনে করবেন না।‘
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের নিজস্ব কামরায় দুপুরবেলা ক্রোম বসে আছে। এমন সময় ফোন বেজে উঠলো। ক্রোম রিসিভার তুলে নিয়ে কানে রাখলো। ওপার থেকে জ্যাকবের গলা ভেসে এলো–একটি ছেলে এ.বি.সি.-র ব্যাপারে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে। সে তার বক্তব্য আপনাকেই বলতে চায়।
ক্রোম তাকে পাঠিয়ে দিতে বললো।
৪. রহস্যের সংবাদ
এ.বি.সি. রহস্যের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর পনেরো বছরের কিশোর থেকে আশি বছরের বৃদ্ধের আসা-যাওয়া শুরু হয়েছে। সকলেই চায় রহস্যের জাল ভেদ করতে। দেখা যাক, এই ছেলেটি কি বলে?
মিঃ টম হার্টিগান নামে একটি ছেলে ঘরে এসে ঢুকলো। কাগজের সেই খবরটা পড়ে ক্যামডেন থেকে সে এসেছে।
আপনাকে যে খবরটা দেবো, সেটা আপনাদের কতখানি কাজে লাগবে জানি না, স্যার। সে বলতে থাকে, লিলিদের বাড়ির সেই আধপাগলা গোবেচারা স্বভাবের বুড়ো, নিতান্ত ভালো মানুষ গোছের চেহারা, দেখলে মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না, অথচ পেটে তার শয়তানি বুদ্ধি।
–কে লিলি?
–আমার বান্ধবী। লিলি মার্থার। ক্যামডেনে থাকে। নিজেদের বাড়ির কয়েকটা ঘর ভাড়া দিয়েছে। ঐ বুড়োটা গত এক বছর ধরে ওদের বাড়িতে বাস করছে। নাম মিঃ কাস্ট।
–কাস্ট?
–হ্যাঁ, তারপর সে ইউস্টেন স্টেশনের সমস্ত ঘটনা ক্রোমকে বললো। আমি বার বার লিলিকে বলেছি, ঐ লোকটাকে ইউস্টেন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দেখেছি। লিলি আমার কথা কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায় না। ও কেবল বললো, ইউস্টেন না ব্রিস্টন। সেদিন নাকি কাস্টের বেলতেন হ্যাঁমে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে যাচ্ছিলো ড কাস্টারে। টিকিটটা পড়ে যাওয়ায় আমি তার হাতে তুলে দেওয়ার সময় দেখেছিলাম। লিলি বললো, লোকটার নাকি নিজের ভালো–মন্দ বোঝার জ্ঞানটুকুও নেই। এর আগের খুনের দিন নাকি সে টকি গিয়েছিল। একটু ভেবে লিলি জানালো, বেক্সহিলে যেদিন খুনটা হলো তার দুদিন আগে সে ঐ স্থানের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। তিনদিন পরে সেখান থেকে ফিরে এসেছিল। আমি তাকে তামাশা করে বলেছিলাম, হয়তো লোকটা এ.বি.সি. দলের। শুনে লিলি বললো, ওর নাকি মারতে গেলে হাত কাপে, সে আবার খুন করবে?..স্যার, সেদিন বিকেলের সংবাদে এ.বি. ক্যাস না কেস-এর যে বর্ণনা দিয়েছিলেন তার সঙ্গে কাস্টের একেবারে সাদৃশ্য হয়েছে। এরপর লিলির মাকে সব কিছু বললাম। উনি ভাড়াটিয়াদের রেজিস্টার টেনে বের করলেন। খুলে দেখলেন নাম রয়েছে এ.বি. কাস্ট। আমি, লিলি আর তার মা একসঙ্গে বসে আলোচনা করতে লাগলাম, প্রথম খুনের সময় কাস্ট কোথায় ছিল। ভাবতে, ভাবতে আমরা কোনো সঠিক জবাব খুঁজে পেলাম না। এমন সময় লিলি-ই কথাটা মনে করলো, এ্যান্ডোভারের খুনের আগের দিন ক্যাসাড থেকে ওর এক কাকা এসেছিল ক্যামডেনে। দুদিনের জন্য তিনি থাকবেন। তাই হোটেলের ঘর না নিয়ে লিলির মা তাকে কাস্টের ঘরে থাকতে দিয়েছিল। কারণ ঐ সময় কাস্ট দিন চারেকের জন্য ক্যামডেনে ছিল না।
একটানা কথাগুলো বলে টম থামলো।
-তারপর? ক্রোম আগ্রহ প্রকাশ করলো।
-তারপর আর কি? সময় নষ্ট না করে আপনার কাছে চলে এলাম। বুধবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ কাস্ট ফিরে এসেছে। সেই থেকে ঘরের মধ্যেই রয়েছে। সারাক্ষণ কাগজের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে থাকে আর আপনমনে কি সব বলে। লিলির মার কাছ থেকে আমি এসব শুনেছি।
লিলিদের বাড়ির ঠিকানা দিয়ে টম বিদায় নিলো।
–ঠিক আছে, পারলে আজই একবার কাস্টের সঙ্গে দেখা করে আসবো, ক্রোম টমকে জানিয়ে দিলো।