…মেয়েটার গুণের কথা বলে শেষ করা যায় না। চীনের জিনিসপত্র সংগ্রহের ব্যাপারে আমার যেমন আগ্রহ, ওরও তেমনটি ছিল। মাঝে মাঝে আমার কি মনে হয় জানো, যদি ওর মতো আমার একটা মেয়ে থাকতো। কিন্তু ভগবান আমাকে সব কিছু দিয়েছেন, কেবল এদিক থেকে বিমুখ হয়ে আছেন।
তারপর চিঠিটা পকেটে রেখে ফ্রাঙ্কলিন বললো, দাদা তার দুঃখ ভুলতে চেয়েছিলো, দাদার ভালোবাসার মহত্ত্বটা বৌদি বুঝতে পারেনি। তাই তো থরাকে বেড়ালের মতো তাড়িয়ে দিলো। ব্যাপারটা ভালোভাবে খতিয়ে পর্যন্ত দেখলো না। যাক, আপনাকে কি তার সম্বন্ধে কিছু বলেছে?
সেটা সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার। আমি নিজের বুদ্ধিকে ভীষণ শ্রদ্ধা করি। তাই কেউ কিছু বললেও আমার বিশ্বাসে আঘাত হানতে পারে না।
আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লাম, এগোতে গিয়ে বাধা পেলাম। পোয়ারোর ইশারায় দাঁড়িয়ে পড়লাম–শুভ কাজে যাচ্ছি…একটা পেঁচার ডাক শুনতে পেলে?
বুঝলাম পোয়ারোও আমাদের সঙ্গ নিয়েছে। ওর জুটি কে সেটা জানতে চাইলাম, আমি জানি, সুন্দরী মহিলাদের সঙ্গে সময় কাটাতে সে ভালোবাসে,তাই আমি ওর জন্য মেরি বার্নার্ডকে পছন্দ করলাম। যেহেতু বর্ণমালার চতুর্থ অক্ষর দিয়ে ওর পদবী শুরু।
কিন্তু পোয়ারো গররাজী হলো। এ বয়সে ঝুঁকি না নেওয়া ভালো।
‘এটাকে আবার ক্যাপ্টেন হেস্টিং-এর লেখা বলে মনে করবেন না।‘
-বাঃ দারুণ। দারুণ একটা ছবি বটে। শেষের পাখি। প্রত্যেক কটা দৃশ্য দেখবার মতো। আর আহাম্মকটার কাণ্ড দেখ। পয়সা দিয়ে টিকিট কেটে সম্পূর্ণ না দেখে পালাচ্ছে। আর তো দশ মিনিটের মধ্যে ছবি শেষ হয়ে যাবে। এটা দেখেই যেতে পারতো। আর এমনই বোকা, মাথা থেকে টুপিটা পড়ে যাওয়ায় খুঁজতে লাগলো! এতে যে অন্য লোকের অসুবিধা হচ্ছে, সেটা বুদ্ধিতে কুলোচ্ছে না। অন্ধকারে লোকটাকে দেখা গেল না। নতুবা লেড বেটার দুটো কথা শুনিয়ে দিতো।
…সত্যি, অপূর্ব…নায়িকা যেখানে ক্যাথারিন র্যায়াল..ইউরোপের বিখ্যাত অভিনেত্রী।…তবে আজ হলে তোক কম। সবাই ছুটেছে ঘোড়দৌড়ের মাঠে।…আর একটা গর্দভ আবার ঘুমোচ্ছে। পেছন থেকে ডেকেও সাড়া না পেয়ে লেড বেটার দরজার দিকে এগোলো।
হঠাৎ পেছন থেকে একটা সোরগোল শুনে সে দাঁড়িয়ে পড়লো। ঘুরে দাঁড়ালো, যেখানে লোকটি ঘুমোচ্ছিল সেখানে লোক ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। কৌতূহলী হয়ে ভিড়ের দিকে এগিয়ে গেল…লোকটি খুন হয়েছে। পাশে এ.বি.সি. …সবাই আর্তনাদ করে উঠলো-খু…উ…ন।
‘এটাও কিন্তু ক্যাপ্টেন হেস্টিংসের লেখা নয়।‘
রিগ্যাল সিনেমা হল থেকে কাস্ট রাস্তায় এসে পা রাখলেন। মনের গভীর থেকে উঠে এলো বহুদিন আগের এক কথা। ভাবতে ভাবতে একটা সস্তা দামের হোটেলে এসে হাজির হলেন, কাল সকাল থেকে ব্ল্যাক সোয়ানে তিনি অবস্থান করছেন। ঘরে ঢুকলেন তিনি। বাঁ-হাতটা চোখের সামনে তুলে ধরতেই তিনি শিউরে উঠলেন। মণিবন্ধের ঠিক ওপরে কোটের হাতায় জমাট বেঁধে আছে চাপ রক্ত। পরমুহূর্তে তিনি পকেট থেকে টেনে বের করলেন একটা ছুরি–লম্বায় যেটি দশ ইঞ্চি, তেমনি তীক্ষ্ণ ধার। ছুরির ফলায় রক্ত লেগে আছে। মনে হয় ছুরিটা এখুনি রক্তে ডুবিয়ে আনা হয়েছে।
কাস্ট ছুরির দিকে অপলক নেত্রে তাকিয়ে রইলেন। তিনি বিকারগ্রস্ত লোকের মতো ছুটে গেলেন বেসিনের কাছে। দ্রুত ছুরিটা জল দিয়ে ধুয়ে ফেললেন। জল লাল হয়ে উঠলো নিমেষের মধ্যে। হঠাৎ দরজায় করাঘাত। তিনি ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি সরল সাধারণ মুখের মেয়ে, হাতে মস্ত বড় একটা বালতি।
সে বলল-স্যার, সকালে আপনি গরম জল আনতে বলেছিলেন।
–কিন্তু আমি যে ঠাণ্ডা জলেই হাত ধুয়ে ফেললাম।
মেয়েটি তাঁর কথা লক্ষ্য করে বেসিনের দিকে তাকালো। তিনি ভয়ে ঘাবড়ে গেলেন। তিনি বললেন–আমার বাঁ হাতটা আজ কেটে গেছে।
মেয়েটির যেন বিশ্বাস হলো না কথাটা, এমনভাবে তার দিকে তাকিয়ে বললো–আহা রে! মেয়েটা চলে গেল।
কাস্ট আতঙ্কিত হলেন–তবে কি…না। তিনি দেরি না করে হোটেল থেকে চুপি চুপি বেরিয়ে পড়লেন। বড় রাস্তায় এসে একটু ভাবলেন, তারপর স্টেশনের দিকে পা বাড়ালেন।
ভিড়ের মধ্যে মিশে যেতে হবে আমায়।…আর ভাগ্য যদি এবারেও সুপ্রসন্ন হয় তাহলে আমার আর নাগাল পায় কে?
‘এটাও কিন্তু ক্যাপ্টেন হেস্টিংসের লেখা নয়।‘
মিঃ লেড বেটারকে খুব উত্তেজিত দেখালো। বললো-ইনসপেক্টর, ভাবতেই অবাক লাগছে মিঃ উন্মাদ খুনীটা আমার কাছেই ছিল বসে। সে পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘন ঘন মুখ মুছতে লাগলো।
ক্রোমের মধ্যে কোনো ভাবান্তর লক্ষ্য করা গেল না। স্বাভাবিকভাবে বললো, ব্যাপারটা আগে ভালো করে বুঝতে দিন। আগে বলুন, লোকটার চেহারা কেমন ছিল? সে কি খুঁড়িয়ে হাঁটছিল না সোজা হয়ে?
চেহারা…লম্বায় প্রায় ছফুট, জোয়ান দেখতে। অন্ধকারে ভালো করে দেখতে পাইনি ঠিকই, তবে মাথার মাঝখানে টাকটা চকচক করছিলো, মুখচোখের গড়নও ভারী বিশ্রী। কিছুক্ষণের জন্য থেমে বলতে থাকে-স্যার, আপনি ঠিকই বলেছেন, কিছুটা খুঁড়িয়ে হাঁটছিল।
আরো কয়েকটি প্রশ্ন সেরে নিয়ে ক্রোম নোটবুকে লিখে নিলো। যারা ঘটনাটা নিজের চোখে দেখেছে তাদের মধ্যে একজন মিলিটারি ডাক্তার ছিল। ক্রোম তার কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো ডাঃ জেমসন, কি কি দেখেছেন, বলুন তো?