-মানে…ঠিক…। এক একদিন সকালবেলা উঠে মনটা এমন ভারাক্রান্ত হয়ে থাকে যে সারাদিন কোনো কাজ করতে ভালো লাগে না।
-ঠিক বলেছেন।
–তা এখন কোথায় যাচ্ছেন?
–অ-নে-ক দূর। বেলতেন হ্যাম।
–দেখুন, সেদিন টকিতে তো আপনি এ.বি.সি গণ্ডীর মধ্যে ঢুকে পড়েছিলেন। এবার আর সে ভুল করবেন না।
-না না, ক্ষেপেছেন। আর ভুল করি। এবার সাত মাইল…অনেক দূর..
-সাত মাইলকে আপনি অনেক দূর বলছেন কি করে? হয়তো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে খুনীটার সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছে। অচেনা একটা উটকো লোক…
–আমরা তাকে কেউ দেখিনি, কেউ চিনি না। না, আর দেরি করা চলবে না। আপনার মায়ের ভালোবাসার কথা আমার সবসময় মনে থাকবে…চলি…হয়তো আর ফিরবো না, গুডবাই…
তাঁর চলে যাওয়ার দিকে মিস লিলি একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো।
‘ এটাও কিন্তু ক্যাপ্টেন হেস্টিংস-এর লেখা নয়।‘
ক্রোম এক সার্জেন্টকে ডেকে নির্দেশ দিলো, লন্ডনের সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কোথায় কোন মোজা তৈরি হয়, সেইসব কারখানার এজেন্টদের সমস্ত খবর সংগ্রহ করে কাল দুপুরের মধ্যে যেন পাঠিয়ে দেয়।
পোয়রোর কথায় আহ্লাদিত হয়ে বড় কর্তা হুকুম দিলেন, পোয়ারো কই বলতে পারলেন না তো, আজকাল কোন খুনীরা চালাক হয়ে গেছে, তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদেরও চালাক হতে হবে। তা না, আলোচনা? হঠাৎসার্জেন্টের দিকে চোখ ফিরতে, তাকে চলে যেতে বললো।
‘এটাও কিন্তু হেস্টিংসের লেখা নয়।‘
লিলির কানে কানে ফিসফিস করে টম হার্টিগাম বললো–তোমাদের ঐ গোবেচারা বুড়ো ভাড়াটেকে দেখলাম। ইউস্টেন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের মনে হতাশ হয়ে কি সব যেন ভাবছিল। তার হাত থেকে খবরের কাগজটা পড়ে গেল। খেয়াল নেই। আমি কাগজটা তার হাতে তুলে দিলাম। আমাকে অনেক ধন্যবাদ জানালো। মনে হলো না, আমাকে চিনতে পেরেছে বলে।
–তুমি কোন স্টেশনের কথা বললে, লিলি বললো ইউস্টেন না ব্রিস্টন?
–ব্রিস্টন?
–মনে হয় দুটোর সঙ্গে তুমি এক করে ফেলছে।
–কি বলছো, আমি নিজের চোখে দেখেছি।
–বেলতেন হ্যামে যেতে হলে ব্রিস্টন হয়ে যেতে হয়।
–ডন কাস্টারে সে যাচ্ছিলো। তাই ইউস্টেন নেমে গাড়ি পাল্টাতে হবে।
–এত কথা তোমাকে কে বললো?
–বাঃ, কাগজটা তুলতে গিয়ে ভাজ থেকে টিকিকটা পড়ে গিয়েছিল। আমিই তো সেটা কুড়িয়ে তার হাতে দিলাম। তাকে যাই ভাবো, আসলে সে প্রফেসার…ডন কাস্টারে ঘোড়দৌড়ের মরশুমের পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনার লোভ সামলাতে পারে না।
–আসলে এমন অদ্ভুত ধরনের লোক, যার নিজের সম্বন্ধে ভালো-মন্দ জ্ঞান নেই। আমরা তো সেবার তার জন্যে ভেবেই অস্থির। কার্স্টনে যখন খুনটা হয় তখন সে ওখানেই ছিলো।
-সে কি বসে থাকার লোক। এরা হলো কাজ পাগল। হয়তো এমন হতে পারে খুনের কদিন আগে বা পরে তাকে বেক্সহিলে আসতে হয়েছে।
বেক্সহিল…বেক্সহিল…ঠিক কথা মনে করেছে তোতা। বেটি বার্নার্ড যেদিন খুন হলো, তার ঠিক দুদিন আগে সে বেহিলে যায়, ফিরে আসে ঘটনার তিন দিন পর।
মনে হয়, এ সেই পাগল খুনী। টম নিজের রসিকতায় হেসে উঠলো।
তারপর শুরু হলো নাচ। বাজনার তালে তালে নাচতে নাচতে বেশ কিছু সময় কেটে গেল।
তারপর…?
এগারোই সেপ্টেম্বর। আমরা সদলবলে হোটেলে আস্তানা গেড়েছি, পাশাপাশি দুখানা ঘর, একটি মহিলাদের জন্য অন্যটিতে পুরুষরা থাকবে।
বিশাল জনসমুদ্র। আমি, পোয়ারো, মিস গ্রে-র পক্ষে কি সম্ভব সেই এ.বি.সি.-র রত্নটিকে খুঁজে বের করা?
–যদি ক্ষণিকের জন্যও দেখে থাকে তাহলে ঠিক চিনতে পারবে। এটা স্কুল কলেজে পড়ার সময় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার একটি নমুনা। আলোর সাত রঙের চাকতিটাকে বনবন করে ঘোরালো, সাতটি রঙ আর আলাদাভাবে দেখা যায় না কেবল সাদা রঙ চোখে ভাসে। আবার যখন থামাবে তখন আর সাদা রঙ দেখতে পাবে না।…তাছাড়া রাস্তার অলিতে গলিতে পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। ক্রোম যে একজন পাকা ইনসপেক্টর সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমি জানি, খুনী তার প্রতিজ্ঞা পূরণের জন্য সচেষ্ট হবেই। তেমনি আমাদের চোখ-কান খুলে চলতে হবে।
আমাদের এবার বেরোতে হবে। তৈরি হয়ে নিলাম।
এমন সময় ফ্রাঙ্কলিন এলো। পোয়ারোর কানে কানে কি যেন বলছে, সেটা শোনার চেষ্টা করলাম।
-মানে, আপনি যে সেদিন কার্স্টনে গেলেন। আমার বৌদির কথা বললেন…কোনো ইঙ্গিত বা প্রস্তাব…
পোয়ারো হেসে বললো–আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন?
–এই পরিবেশে যদিও নিজের ব্যক্তিগত কথা নিয়ে আলোচনা করা উচিত নয়। তবুও… জানতে ইচ্ছে করছে…জানেন, বৌদিকে আমি মায়ের মতো শ্রদ্ধা করি। সেও আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু ওর অসুখটা যত অশান্তির কারণ। ঝোঁকের মাথায় কখন যে কি বলে বসেন তার ঠিক নেই। আসলে জানেন তো, মেয়েরা মেয়েদের হিংসে করে। থরা দেখতে সুন্দরী। থরার নামে প্রশংসা শুনলে সে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। সে কি থরার নামে আপনাকে…জানেন, দাদাও থরার প্রশংসা করতো, অবশ্য তার মন ছিলো নিষ্পাপ। সে থরাকে নিজের মেয়ের মতো স্নেহ করতো।
ফ্রাঙ্কলিন পকেট থেকে একটা চিঠি বের করে দেখালো–এই চিঠিটা দাদা আমাকে লিখে পাঠিয়েছিল। তখন আমি মালয়ে ছিলাম।
চিঠির বয়ান ছিল–
আমরা ভালো আছি। তোমার বৌদির শরীরের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নিশ্চয়ই থরা গ্রের কথা তুমি ভুলে যাওনি। সত্যি মেয়েটি আমাকে বাঁচিয়েছে, যেমন চটপটে তেমনি চালাক। কথা বলার আগেই তার কাজ শেষ। থরা না থাকলে আমার এত দিনের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যেতো। শখের জিনিস নিয়ে লোকের কাছে গর্ব করার মতো আমার হয়তো আর কিছুই থাকতো না।