-না, জ্যাপের সঙ্গে দেখা করে চিঠিটা দেখিয়েছিলাম। সে-ও তোমার মতো কথা বললো। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে নাকি এধরনের চিঠি স্তূপ করে জমা রাখা আছে। কিন্তু এ চিঠিতে এমন কিছু আছে যা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে।
–সেটা কি, বলবে তুমি?
আমার কথায় কর্ণপাত না করে সে মুখ বুজে রইলো।
অতএব আমি কৌতূহলী হয়ে ঐ কথার জের টেনে বললাম–চিঠিখানা নিয়ে এত না ভেবে . সন্দেহ নিরসনের ব্যবস্থা করো।
কিন্তু হেস্টিংস, আমি এ ব্যাপারে কি করতে পারি। পুলিশকে দেখলাম, গুরুত্ব দিলো না। তোমারও ঐ হাল লক্ষ্য করলাম।
টাইপ করা চিঠি। তাই হাতের লেখা ধরার উপায় নেই। তাই আমি বললাম–অনুমানের ওপর নির্ভর করে তোমাকে এগোতে হবে। কোনো সূত্র পেলেও পেতে পারো।
–আমার দৃঢ় বিশ্বাস, পোয়ারো চটপট করে বলে উঠলো, কিছু অঘটন খুব শিগগিরই ঘটতে চলেছে। এটা আমার ধারণা নয়। আমার দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।
-আসছে শুক্রবার, একটা দিন কেটে যাবে, শনিবার কাগজ খুলে দেখবে, কিছুই ঘটেনি, হয়তো বা এ্যান্ডোভারে একটা ছোটোখাটো কেলেঙ্কারি হয়েছে।
–আহা, যদি তোমার সান্ত্বনা কাজে লাগতো।
সান্ত্বনা! ডাকাতি আর সান্ত্বনা এক হলো!
-না হেস্টিংস, তুমি আমার কথার মানে বুঝতে পারছে না। দুটো এক জিনিস নয় ঠিকই তবে একদিক থেকে বিচার করলে কিছু মারাত্মক অঘটনের তুলনায় এ সান্ত্বনাই হোক।
–অঘটন বলতে…
–খুন। শুধু একটা শব্দ পোয়ারোর মুখ দিয়ে উচ্চারিত হলো।
প্রায় ছফুট লম্বা মিঃ আলেকজান্ডার বোনাপার্ট। তিনি কাস্ট চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ালেন, ভুরু কুঁচকে তাকালেন, চোখে কম দেখেন। লোকটাকে ঠকবাজ, প্রতারক বলে মনে হয়।
ছোট্ট ঘরটি তার শোবার ঘর। অগোছালো অপরিচ্ছন্ন। ছোট ছোট চোখে তিনি ঘরের চারদিকে তাকালেন। দেখে মনে হয় যেন চোখ বন্ধ। দেওয়ালে ঝুলছে বাদশাহী আমলের কোট। কোটের পকেটে তিনি হাত ঢোকালেন। একটা সস্তাদামের সিগারেট আর দেশলাই বের করলেন। তারপর ধীর পায়ে টেবিলের সামনে এসে বসলেন। একটা কাগজ চোখের সামনে মেলে ধরলেন। টাইপ করা নামের তালিকা লক্ষ্য করে একটা নামের ওপর দাগ দিলেন।
জুন মাস, আজ কুড়ি তারিখ, বৃহস্পতিবার। সেদিনের পর এ ব্যাপারে পোয়ারোর সঙ্গে আর কথা হয়নি।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের ইনসপেক্টর প্রধান জ্যাপ এলো ঠিক তার দুদিন পর অর্থাৎ বাইশ তারিখে। আমাকে দেখে হৈ হৈ করে এগিয়ে এলো।
–সত্যিই, আপনাদের দেখে পুরোনো দিনের অনেক কথা মনে পড়ে যায়। তারপর ইনসপেক্টর আমার টাক লক্ষ্য করে বললো, ওটি কেবল এগোচ্ছে।
অনেকদিন পর দেখা হওয়ার প্রথম কথা এমন ধরনের, আমি একটু বিরক্ত হলাম মনে মনে।
পোয়ারোর চেহারা নিয়ে সে গর্ব বোধ করলো। বললো, যেখানেই যাই কেবল এরকুল পোয়ারো আর পোয়ারো। এবার এই কাজ থেকে ইস্তফা দিয়ে আমাদের সুযোগ করে দিন।
–অবসর নেবো বলেই বসে আছি। কিন্তু সুস্থির থাকার সুযোগ মিলছে না।
–দেখুন, হয়তো শেষ পর্যন্ত নিজের খুনের তদন্তেই আপনাকে না নামতে হয়।
–বা রে, এ যে দেখছি ভূতের মুখে রাম নাম।
পোয়ারো পাল্টা জবাব না দিয়ে আমার দিকে কেবল তাকালো।
কয়েকদিন চুপচাপ থাকার পর তোমার এই আইডিয়া নিয়ে সে দেখবে দারুণ এক গল্প তৈরি করেছে। আমি বললাম।
জ্যাপ হো হো করে হেসে উঠলো। প্রসঙ্গ পাল্টে আমার দিকে তাকিয়ে বললো–আপনি কি সেই অদ্ভুত চিঠিটা দেখেছেন?
জবাবে পোয়ারো বললো–হ্যাঁ, আমি দেখিয়েছি। ওখানে শুধু একটা তারিখ ২১ শে জুনের উল্লেখ আছে।
-হ্যাঁ, তাই আমি এখানে আসার আগে এ্যান্ডোভার থানায় ফোন করেছি। ওরা জানালো তেমন কিছু খবর নেই। কেবল একটা দোকানের শোকেস ভাঙা ছাড়া। আপনি এ ব্যাপারে আর চিন্তা করবেন না। যাদের খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই তারাই এমন গোছের মস্করা করে। এসব তুচ্ছ ব্যাপার এ বয়সে আর ভাববেন না। এখানে একটা কাজে এসেছিলাম। তাই একটু দেখা করে গেলাম।
জ্যাপের কথার ধরন-ধারণে বোঝা গেল ওর আচরণের কোনো রদবদল হয়নি।
বললাম–তাহলে তোমার চিঠির ব্যাপারটা পর্বতের মুষিক প্রসবের নামান্তর।
পোয়ারোর ঠোঁটে শুকনো একটু হাসির ঝিলিক দিয়ে উঠলো।
–এরকম আশা করিনি আমি, ভুল হয়ে গেলো।
বেশ তো, এটা ছেড়ে অন্য কোনো রহস্যের সন্ধান কর। আমি তাকে সান্ত্বনা দিলাম।
-ঠিক আছে। পোয়ারো বললো, যখন সত্যি রহস্য পেলাম না, তখন এসো আমরা একটা নকল রহস্য সাজাই।
আমি বললাম-ধরা যাক, প্রথমে একজন পুরুষ খুন হবে। তিনি হলেন খবরের কাগজের মালিক। রাজনীতিও করেন না, ব্যাবসা করেন না। রক্তাক্ত দেহে লাইব্রেরির ছোট্ট টেবিলে তাকে পড়ে থাকতে দেখা গেল।
মনে কর পিস্তল দিয়ে তাকে খুন করা হয়েছে। সন্দেহের তালিকায় পাওয়া গেলো একটি মেয়েকে। যার সঙ্গে লোকটির প্রেমের খেলায় ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিলো, এছাড়া রয়েছে, একজন বয়স্কা মহিলা, একজন সেক্রেটারি, আর একজন যুবক যে প্রেমের খেলায় লোকটির প্রতিপক্ষ। এছাড়া এক ধাপ্পাবাজ বয়স্ক লোক, ছাঁটাই হওয়া কিছু কাজের লোক এবং জ্যাপের মতো বোকা মাথাওয়ালা একজন গোয়েন্দা। ব্যাস, গল্পের এখানেই ইতি।
শেষ? পোয়ারো হতবাক হয়ে প্রশ্ন করলো, এ তো সেই চিরাচরিত গল্প হেস্টিংস। একটা নতুন গল্প বানাও।
–আর আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তুমিই নতুন গল্প বলল।