-তাতে লাভ কি?
–লাভ আছে বৈকি। সন্দেহের আগুনে সর্বক্ষণ জ্বলে মরা। এর চেয়ে কঠিন শাস্তি আর কিছু আছে! তিনটে খুনের অপরাধী একজনই, অথচ কাউকে সন্দেহ করার মতো সুযোগ আমরা এক বিন্দু পেলাম না। যাক, এবার কাজের কথা শোন।
কি কাজ?
কাজটা মোটামুটি সহজ। কথার জাল বুনে নিহতদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব পরিচিত যে যেখানে আছে পেট থেকে সমস্ত অজানা গোেপন খবর টেনে বের করে আনন।
তার মানে, তোমার ধারণা, সকলে ইচ্ছে করে কিছু না কিছু তথ্য গোপন রেখেছে?
–মানুষ সব কথা সবসময় গুছিয়ে বলতে পারে না। সেটা ইচ্ছা-অনিচ্ছা নয়। আমি তাদের কাছ থেকে এমন খবর শুনতে চাই যেগুলো ঐসব মানুষের কাছে ফালতু, অকেজো, অযৌক্তিক। হয়তো ঐ কাজগুলোই আমার রহস্য সমাধান করতে সাহায্য করবে।
এরপর পোয়ারো একটা ভাঁজ করা কাগজ পকেট থেকে বের করলো। আমাকে পড়তে দিলো। ওটা একটা চিঠি। হাতের লেখা বোঝা দুঃসাধ্য, মনে হয় কোনো নিচু ক্লাসের কারো লেখা। অজস্র বানান ভুল, সামনে এগিয়ে লিখেছে, বানান সংশোধন করার পর চিঠির বয়ানটা এইরকম দাঁড়ালো—
পরম পূজনীয়েষু,
প্রথমে আমার প্রণাম জানাই। আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আপনাকে চিঠি লেখার ধৃষ্টতার জন্য, মাফ করবেন।
মাসির খুন হওয়ার পর আরো একটা খুন হলো। কাগজে ঐ মেয়েটির ছবি আমি দেখেছি। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো…বেচারা। ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর পরিহাস। এত কম বয়েসে তাকে এইভাবে মরতে হলো।
মনের কষ্ট দূর করার জন্য কোনোরকমে মেয়েটির দিদির (লন্ডনে যে চাকরী করে) ঠিকানা যোগাড় করলাম, তাকে সমবেদনা জানিয়ে মস্ত বড় একটা চিঠি লিখলাম। সব কিছু চিঠিতে জানালাম, মাসির খুন থেকে শুরু করে আপনার সঙ্গে আলাপ পর্যন্ত। এটাও জানালাম, আমি তার সঙ্গে বিশেষভাবে দেখা করতে আগ্রহী। অবশ্য এ দেখা সে দেখা নয়। একদিন দুদিনের নয়। স্থায়ীভাবে তার সঙ্গে দেখা করতে চাই। দুজনে পাশাপাশি থাকবো। দুজনে মিলে কোমর বেঁধে খুনির হদিস বের করার কাজে লেগে পড়বো। আমরা দুজনে একই ব্যথায় কাতর। অতএব দুজনের বুদ্ধি একত্রে হলে একটা কিছু হবেই। মোদ্দা কথা, তাকে আমি বুঝিয়ে দিলাম যে ওভারটনের পাততাড়ি গুটিয়ে আমি লন্ডনে স্থায়ীভাবে থাকতে চাই।
…একদিন আমার চিঠির জবাব পেলাম। খুশিতে আমি উথলে উঠলাম। কি সুন্দর হাতের লেখা। সে লিখলো, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা সে ভেবেছিলো। কিন্তু ঠিকানা যোগাড় করা সম্ভব হয়নি। তবে আমার মতে তার মত আছে। তাছাড়া, সে…মিঃ পোয়ারো, শুনলে আপনি তাজ্জব বনে যাবেন, আমার জন্য তদবির করে একটা চাকরিও যোগাড় করে ফেলেছে।
..অতএব আপনার বুঝতে বাকি রইল না, আমি এখন লন্ডনে রওনা হচ্ছি। এই চিঠি স্টেশনে বসে লিখছি। আমার নতুন ঠিকানা এখানে দিলাম। যদি সময় সুযোগমতো একবার এখানে আসেন তাহলে খুব খুশি হবো।
প্রণাম জানবেন,
মেরি ড্রেয়ার।
৩. চিঠি পড়া শেষ
চিঠি পড়া শেষ করলাম।
–হেস্টিংস, পোয়ারো বললো, তোমার অনুমান ঠিক। ড্রেয়ার ভীষণ বুদ্ধিমতী মেয়ে।
তারপর পকেট থেকে আর একটা চিঠি বের করলো। তাতে লেখা ছিল–ফ্রাঙ্কলিন ক্লার্ক। জানিয়েছে বিশেষ কাজে সে কদিন লন্ডনে আছে। আগামীকাল পোয়ারোর সঙ্গে দেখা করতে সে আসছে, জরুরী আলোচনা আছে। পোয়ারো যেন ঐ দিন বাড়িতেই থাকেন।
পোয়ারো বললো–ধৈর্য ধরে সব দেখে যাও। দেখবে, অদ্ভুত একটা কিছু ঘটবেই।
.
পরদিন বিকেলে ফ্রাঙ্কলিন এসে হাজির হলো। কোনো ভণিতা না করে সরাসরি কাজের কথা শুরু করলো।
-স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের নাম করা ইনসপেক্টর কোনো কিছু করতে পারলো না। ফ্রাঙ্কলিন বলতে থাকে। আঃ, ক্রোম যত না কাজ করে তার থেকে বড় বড় বুলি আওড়ান। কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা। সময় থাকতে পরের খুনটা অন্তত
-তার মানে, আপনিও নিশ্চিত করে জানেন, আর একটা খুন হবে।
-না হয়ে তো উপায় নেই। তাই আমার পরিকল্পনা, নিহত তিনজনের বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজন একসঙ্গে হয়ে একটা জোরদার সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। সেটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন আপনি, এর ফলে হয়তো নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যাবে। যেটা খুনীকে ধরতে সাহায্য করবে। আর চতুর্থ চিঠিটা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা লোজন নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় হাজির হবো, কড়া প্রহরার ব্যবস্থা রাখবো। ঐ স্থানের ধারে-কাছে সন্দেহজনক কাউকে দেখলে আপনাকে খবর দেবো। দেখা যাবে হয়তো খুনীকে আমরা কোথাও দেখেছি–এ্যান্ডোভারে, বেক্সহিলে বা কার্স্টনে। খুনের আগে বা পরে কারো না কারো নজরে ঐ মূর্তিমান পড়েছে। আমরা তার আসল পরিচয়ও জানতে পারবো। আপাতত এই সংগঠনে থাকবে তিনজন-মিস মেগান বার্নার্ড, মিঃ ডোনাল্ড ফ্রেসার এবং মিস ড্রেয়ার। আর আমি তো আছিই। এদের সঙ্গে আমি ইতিমধ্যে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করেছি। আর…আর…, মিস গ্রে থাকছেন।
বাঃ, মিস গ্রেও থাকছেন।
পোয়ারোর কথাটা শুনে ফ্রাঙ্কলিন খুব লজ্জা বোধ করলো। নিচু স্বরে বললো, মানে বুঝতেই পারছেন, উনি আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকলে আমি চিন্তামুক্ত থাকি। গত দুবছর ধরে তিনি দাদার সেক্রেটারি হিসাবে কাজ করেছেন। গ্রামের লোকেরা আমার চেয়ে তাকে বেশি চেনে। অমি তো কয়েক বছর দেশ-বিদেশে ঘুরে কাটালাম।