…জানেন তো, শান্ত লোক একদিকে ভীষণ ভালো, কিন্তু তারা ক্ষেপে গেলে দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ঠিক সেরকমটি ডনের ক্ষেত্রেও ঘটলো। এই তো কয়েকমাস আগের কথা, আমি ওদের দুজনকে ডেকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে সব কিছু মিটমাট করে দিলাম। বেটি কোনো কিছু মানতে নারাজ। কেবল একই কথা : কি এমন অন্যায় করেছি। আসলে দোষ ছিল বেটির। সে ডনকে বলেছিল, হেস্টিংসে এক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে যাবে। কিন্তু সে মিথ্যে কথা বলেছিল। কিন্তু সেদিন বিকেলে তাকে দেখা গেল একজন বয়স্ক লোকের হাত ধরে সমুদ্রের ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ব্যাস, ডানের ধৈৰ্য্যচ্যুতি ঘটলো। আসলে ঐ লোকটার বাড়িতে ছেলে-বৌ আছে। এক শয়তান, চরিত্রের ঠিক নেই, লম্পট। ডন ঐ দৃশ্য দেখে রেগে যায় ভয়ঙ্করভাবে। বেটিকে বলেছিল, একদিন না একদিন তার হাতে বেটি খুন হবে।…তবে আমি একথা বিশ্বাস করি না। সে বড় জোড় কয়েকবার ঝগড়া করতে পারতো। তাই বলে..অবশ্য রাগের মাথায়…।
হা, অসম্ভব কিছু নয়। আচ্ছা আপনার বোন কি সেই লোকটির সঙ্গে পরে কখনো দেখো করতো?
-আমি বলতে পারবো না। কারণ আমি তো এখানে থাকি না। তবে দেখা করলেও করতে পারে। ওর একটা দোষ ছিল, একজনকে নিয়ে ও বেশিদিন খুশী থাকতো না। ও আমাকে ওর মনের কথা সব বলতো, অন্য কাউকে নয়।
হঠাৎ বাইরে থেকে ভেসে এলো একটা গলার আওয়াজ–ডন এসেছে।
ইনসপেক্টর যাতে তাকে আক্রমণ না করে তাই আগেভাগে পোয়ারো মেগানকে ওকে নিয়ে আসতে বললো।
সুদর্শন যুবক। প্রেমিকার মৃত্যুতে ভীষণভাবে আঘাত পেয়েছে, তা তার মুখ দেখে বোঝ গেল। ফ্রেসার মেগানকে উদ্দেশ্য করে বললো–কি মেগান। তাড়াতাড়ি চল। আমি যা শুনে চললাম…বেটি…।
পোয়ারো তাকে মন দিয়ে লক্ষ্য করছিল। ওর বিচলিত ভাব দেখে সে ফ্রেসারকে চেয়ারে বসতে বললো। তারপর নিজের পকেট থেকে ব্র্যান্ডির শিশি বের করে তার দিকে এগিয়ে দিলো। বাচ্চা ছেলের মতো সে কিছুটা ব্র্যান্ডি গলায় ঢেলে দিয়ে শিশিটা ফেরত দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে সে চাঙ্গা হয়ে উঠলো।
-তাহলে কি আমার বেটি সত্যিই খুন হয়েছে? সে বললো।
–হ্যাঁ।
–বাবার ফোন পেয়েই আমি লন্ডন থেকে চলে এলোম।
–নটা কুড়ির গাড়িতে এলে বুঝি?
নিজের উদ্বেগ চাপতে সে যে কি বলবে ভেবে পোলো না। বিক্ষিপ্তভাবে বলে উঠলো, পুলিশ এসেছে? কি করছে? ধরতে পেরেছে? হঠাৎ আমাদের দিকে এমনভাবে তাকালো যে মেগান ছাড়া ঘরে যে আমরা দুজন উপস্থিত আছি সে এতক্ষণ সেটা টের পায়নি।
-মঁসিয়ে ফ্রেসার, সময় নষ্ট না করে পোয়ারো কাজের কথায় এলো, কাল রাতে মিস বার্নার্ড কোথায় যাবেন, আপনাকে কি বলেছিলেন?
হা, বলেছিলো, সেন্ট লিওনার্ডে ওর নাকি এক বান্ধবী থাকে, তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা ছিল।
-তার কথা সত্যি বলে আপনি কি মেনে নিয়েছিলেন?
–বুঝলাম না, আপনি কি বলতে চাইছেন?
–কিছু না, কেবল সত্যিটা জানতে চাই। মিস বার্নার্ড যে এক বদ্ধ উন্মাদের হাতে খুন হয়েছে, আশা করি আপনি তা জানেন না।
-ভয় নেই, মেগান ফ্রেসারকে লক্ষ্য করে বললো, সব কথা ওদের খুলে জানাও। ওরা ডিটেকটিভ। সত্যকে আবিষ্কার করা ওদের কাজ।
–প্রথমে ওর কথা বিশ্বাস করেছিলাম, ফ্রেসার আশ্বাস পেয়ে বলতে থাকে। কিন্তু পরে মনের মধ্যে কেমন যেন সন্দেহ দানা বেঁধে উঠলো। তাই আগু-পিছু না ভেবে সন্ধেবেলা জিঞ্জার ক্যাটের ধারে-কাছে ঘুর ঘুর করতে শুরু করলাম। বেটি দোকান বন্ধ করে বেরোলো। আমি নিঃশব্দে তার পেছন ধরলাম। কিন্তু বেশিদূর এগোতে পারলাম না। মনে মনে ভাবলাম যদি বেটি টের পায় আমি তার পিছু নিয়েছি তাহলে ভীষণ দুঃখ পাবে। অতএব ওখান থেকে আমি চলে এলোম। কিন্তু এসেও আমি স্থির থাকতে পারলাম না। সন্দেহের খোঁচা আমাকে পাগল করে তুললো। অগত্যা সেন্ট লিওনার্ডে আটটা নাগাদ পৌঁছালাম। বাস, ট্যাক্সি, টাঙ্গা, টমটম, সব দেখলাম, কিন্তু বেটিকে দেখতে পেলাম না।
আমার বুঝতে দেরি হলো না। সে আমাকে সত্যিই মিথ্যে বলেছে। তাহলে কি ঐ বুড়োটার সঙ্গে ঘুরছে। কিন্তু সেদিনের পর থেকে ইস্টবোনে তাকে কোনোদিন পা দিতে দেখিনি। তাহলে সে গেল কোথায়? হেস্টিংসেও যেতে পারে ভেবে সেদিকে ছুটলাম। সব জায়গায় তার খোঁজ করলাম। পেলাম না। কূলকিনারা কিছু ভেবে না পেয়ে আমি আপন মনে নির্জন রাস্তা দিয়ে হেঁটে ফিরেছিলাম। তখন রাত বারোটা কি সাড়ে বারোটা হবে।
এরপর ঘরে এসে ঢুকলো ক্রোম, কেলসি। পোয়ারো ওদের সঙ্গে মেগানের এবং ফ্রেসারের পরিচয় করিয়ে দিলো। তারপর পোয়ারো ঘর থেকে বেরিয়ে এলো, আমিও তাকে অনুসরণ করলাম।
আমি তার চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম–কি ভাবছো, বন্ধু?
–ভাবছি…ভাবছি, কি আশ্চর্য মহানুভব আমাদের এই খুনী।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে আবার বেক্সহিলের খুন নিয়ে গোল মিটিং শুরু হয়েছে। লক্ষ্য করলাম, মিসেস এ্যাম্বারের চেয়ে বেটি বার্নার্ডের খুন বেশি গুরুত্ব পেয়েছে এখানে। হয়তো মেয়েটি যুবতী এবং অবিবাহিতা বলে সবাই বেশি মাথা ঘামাচ্ছে। চারদিকের সমার্লোচনার ঝামেলায় জর্জরিত হয়ে স্যার লায়নেলকে বৈঠকে ডাকা হয়েছে।
সে বললো–পরিস্থিতি যেমন দাঁড়িয়েছে তাতে সর্বসাধারণকে জানিয়ে দেওয়া উচিত যে-কোনো অবস্থায় ঐ বদ্ধ পাগলটার খবর পেলে…