এগারো মাস পরে, সেই কথা ভাবতে বসে সে শঙ্কিত হলো।
.
এ্যানথনি ব্রাউন
১.৩
রোজমেরি বারটনের কথা মনে করতে গিয়ে এ্যানথনি ব্রাউন ভুরু কোঁচকায়।
সে প্রচণ্ড ভাবে রোজমেরির প্রেমে পড়ে যায়। তার সঙ্গে যে সে মিশেছিল সেজন্য সে অনুতপ্ত। কিন্তু সেই ঘটনার জের যে আজও তাকে টানতে হবে সেটা কে জানতো?
আজ ভাবতে আশ্চর্য লাগে, সেই সব দিনগুলির কথা, স্বপ্নমধুর দিন অন্যের ঈর্ষা জাগানো দিন। তাকে নিয়ে যেখানে সে গেছে, তার ভক্তরা তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থেকেছে। ওরা পরস্পরের সঙ্গ পেয়ে ধন্য হয়েছিল একদিন। সঙ্গীতের প্রয়োজন হতো না, রোজমেরির পায়ের ছন্দে একটা অদ্ভুত ব্যঞ্জনা এনে দিতো, তার পায়ের সঙ্গে তাল রেখে নাচতো এ্যানথনি।
আজ একটা কথা ভেবে এ্যানথনি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানায়। রোজমেরির সঙ্গে তার বিয়ে হয়নি, তার ভাগ্য ভালো। তাহলে কি যে হাল হতো, কে জানে। তাকে সে বিয়ে করেনি বটে, কিন্তু তার প্রেমে পড়েছিল সে এটা তো অস্বীকার করা যায় না।
তার নাচ দেখা, তাকে টেলিফোন করা, তার সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া, নাচা ট্যাক্সিতে তার ফুলের মতো নরম ঠোঁটে ঠোঁট লাগানো, সেই অভিশপ্ত দিনটির আগে সে কি একটুও টের পেয়েছিল যে তার পেছনে এভাবে ছুটে বেড়ানো নিজেকে মুখের পর্যায়ে ফেলা ছাড়া আর কিছু ভাবা যায় না।
এ্যানথনির আজও স্পষ্ট মনে পড়ে, সেদিন কিরকম অদ্ভুত চোখে তাকিয়েছিলেন রোজমেরি। এলোমেলো চুল কানের দুপাশে ছড়ানো। নীল চোখের ভেতর দিয়ে বোকা বোকা চাউনি। লাল নরম ঠোঁটের স্পর্শ।
রোজমেরির ডাকে ইশ হয় এ্যানথনির।
–আমার প্রতি আপনার দেখছি দারুণ মোহ।
–হ্যাঁ, নামটা যে খুব সুন্দর।
তারপর হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত একটা কথা শোনালো রোজমেরি।
টমি মোরেলির থেকেও চমৎকার।
এ্যানথনি বেশ কিছুক্ষণ সময় নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না। এ যেন অবিশ্বাস্য অসম্ভব।
রোজমেরির হাত চেপে ধরে কর্কশ গলায় সে বললো–আপনি ঐ নাম কোথা থেকে শুনলেন?
অদ্ভুত কথাটি শুনে রোজমেরি হাসতে থাকেন। ওঁর হাসি দেখে এ্যানথনির গা-পিত্তি জ্বলে যায়।
-রোজমেরি, ব্যাপারটা সাধারণ নয়। আমি জানতে চাই, তার নাম কি?
ভিক্টর ড্রেক, আমার পিসতুতো ভাই বলেছে।
–ঐ নামে কারো সঙ্গে আমার আলাপ নেই।
–হয়তো, আসল নাম সে তোমার কাছে চেপে রেখেছে।
–তাই বুঝি? ধীরে ধীরে এ্যানথনির মনে পড়ে, হা, জেলহাজতে।
-আমি একদিন ভিক্টরকে বলেছিলাম, তুমি একটা অপদার্থ। সেকথা অবশ্য সে গায়ে মাখে না। উল্টে আমাকে বললো, তুমি কি নিজের সম্বন্ধে সচেতন? এক প্রাক্তন জেল ঘুঘুর সঙ্গে তোমাকে সেদিন নাচতে দেখলাম। তোমার যত ছেলে বন্ধু আছে তাদের মধ্যে সে অন্যতম তাই না? শুনেছি, সে নিজেকে এ্যানথনি ব্রাউন নামে পরিচয় দেয়, কিন্তু তার একটা কুখ্যাত নাম আছে টমি মোরেলি।
-ভিক্টর ড্রেক আমার ছোটবেলার বন্ধু। আমরা দুজন জেল ফেরত বন্ধু। আমরা দুজনে একসঙ্গে থাকতে চাই।
গতকালই সে জাহাজের টিকিট কেটে দক্ষিণ আমেরিকায় রওনা হয়েছে। রোজমেরি মাথা নেড়ে বলেন।
একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে এ্যানথনিবলে, তাহলে তুমি একমাত্র আমার গোপন অপরাধের কথা জানো।
–সে কথা আমি তোমাকে বলতে বাধ্য নই।
-দেখ রোজমেরি, তুমি তোমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। শাসনের ভঙ্গিতে এ্যানথনি বললো, তুমি জানো যে মেয়েদের জীবনে রূপ হলো আসল সম্পদ। সেই সম্পদ যদি তোমার নষ্ট হয়ে যায়, বীভৎস হয়ে যায় তোমার মুখশ্রী, তাহলে তুমি কি পুরুষদের জগতে ঠাই পাবে? তুমি ভেবো না, সিনেমা গল্পে এরকম ঘটনা কেবল ঘটে থাকে। বাস্তবেও ঘটে, এটা খেয়াল রেখো।
তবে তিনি তো মুখ বন্ধ করে থাকবার মতো মহিলা নন। এ্যানথনি তাই প্রসঙ্গ পাল্টাবার জন্য বলে, টমি মোরেলির নাম যে তুমি শুনেছো, সেটা তুমি ভুলে যাও, বুঝলে?
তুমি কি জানো না, আমার মনটা কত উদার। একজন আসামীর সঙ্গে আমি যে মেলামেশা করছি, এর মধ্যে একটা উত্তেজনা অনুভব করি আমি। এতে তোমার লজ্জা পাওয়া উচিত নয়।
কি অপদার্থ। গাধার মতো কথা বলে। তারপর থেকে এ্যানথনির কেবল মনে হয়েছে, তার জীবনের পৃষ্ঠা থেকে রোজমেরির নাম কেটে দেবে। এ ধরনের মহিলার ওপর ভরসা রাখা যায় না।
ফিক ফিক করে হাসছিলেন রোজমেরি–অত ক্ষেপে যেও না। আগামী সপ্তাহে জ্যাগের নাচ দেখতে নিয়ে যেও। কথাটা মনে থাকে যেন।
-আমি বাইরে যাচ্ছি। এখানে থাকছি না।
–যেখানে খুশী যাও। কিন্তু আমার জন্মদিনের পার্টিতে তোমার আসা আমি কামনা করি। তুমি ওরকমভাবে বলো না। রোজমেরি বলতে থাকেন। তুমি তো জানো ইনফ্লুয়েঞ্জা আমাকে দেহের ও মনের দিক থেকে কতখানি দুর্বল করে দিয়েছে। এ অবস্থায় তোমার কাছ থেকে আমি ব্যথা পেতে চাই না। তোমাকে আসতে হবেই।
ঐ মুহূর্তে রোজমেরির জীবন থেকে সরে পড়া-উচিত ছিলো এ্যানথনির।
কিন্তু তার পরিবর্তে
খোলা দরজা দিয়ে তার চোখ চলে গেল সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকা আইরিসের দিকে। রোজমেরির মতো সুন্দরী না হলেও চারিত্রিক ও মানসিক দৃঢ়তা অনেক বেশি।
সেই মুহূর্তে নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হলো, ঘৃণা করতে ইচ্ছে হলো, রোজমেরির প্রেমে পড়ার জন্য।
আইরিসকে দেখা মাত্র তার সমস্ত কিছু কেমন তালগোল পাকিয়ে গেল।