জর্জের গুপ্তচর? কিন্তু আপনার দেখা পেয়ে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। ভিক্টর তাকে চিত্ত সম্ভাষণ জানায়।
জর্জের শর্তের কথা রুথ তাকে জানায়। অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে ভিক্টর সব শর্ত মেনে নিতে রাজী হয়ে গেল।
সুন্দরী পিসতুতো বোন আইরিসকে স্পর্শ না করা, সুযোগ্য পিসতুতো ভগ্নিপতি জর্জকে কোনো ব্যাপারে বিরক্ত না করে, আমি সব মেনে নিচ্ছি। সান ক্রিস্টোপলে সে আমাকে বিদায় জানাতে আসছে। প্রিয় মিস লেসিং আপনি?
আবেগে ভিক্টরের কণ্ঠস্বর ধীরে ধীরে গাঢ় হয়ে আসে, সে ভালো করেই জানে মেয়েদের কাছে সে দারুণ ভাবে আকর্ষণীয়।
–আচ্ছা মিস লেসিং, বারটন আপনাকে ছাড়া এক পাও এগোতে পারে না, তাই না? আমি সব কিছু জানি। রোজমেরি আমাকে বলেছে। ভিক্টর হাসে
-রোজমেরি?
–এই পর্যন্ত থাক। রোজমেরি খুব ভালো মেয়ে। অত্যন্ত সহানুভূতিশীল তিনি। ইতিমধ্যেএকশো পাউন্ড তার কাছ থেকে পেয়ে গেছি আমি।
–আপনি
ভিক্টর হাসতে থাকে। মনে হয় ওর হাসিটা সংক্রামক। রুথ লেসিংও হাসতে থাকে।
–এ আপনার খুব অন্যায়, মিঃ ড্রেক। আপনার লজ্জা হওয়া উচিত।
-লজ্জা? আমি আপনার কথার প্রতিবাদ করছি? মিস লেসিং। আপনি জানেন না, আমি কতো খারাপ একজন দুর্নীতি পরায়ণ লোক, কেন আমি খারাপ হলাম আপনাকে সেটা বলতে চাই।
-কেন? রুথ কৌতূহলী হয়ে বললো।
-জীবনে আমি অনেক উপভোগ করেছি। ভালো দিকটাও আমি দেখেছি। ভিক্টর আপন মনে বলে চলে। অনেক দেশ আমি ঘুরেছি। একসময় আমি ছিলাম অভিনেতা, স্টোরকীপার, রেস্তোরাঁর ওয়েটার, মালবাহী পোর্টার, সার্কাসে অংশ নেওয়া। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি একসময়। কিছুদিন জেলে কাটিয়েছি। কিন্তু একদিনের জন্য সৎ হওয়ার চেষ্টা করিনি এবং আমার নিজের পথে কখনো চলিনি। এই দুটোকে আমার জীবন থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছি।
ভিক্টর রুথের দিকে তাকিয়ে হাসলো। তার সম্মোহন শক্তির কাছে রুথের প্রতিবাদ করার ইচ্ছাশক্তি হেরে গেল।
মিস লেসিং, আপনার চোখে ঐ সরল চাহনি মানায় না। আপনি অফিসের বসকে বিয়ে করা মেয়েদের পর্যায়ে আছেন। সাফল্য আপনার অন্ধ প্রত্যাশা। রোজমেরিকে বিয়ে না করে জর্জের উচিত ছিলো আপনাকে বিয়ে করা।
–আপনি আমাকে অপমান করছেন?
—না, মোটেও না। রোজমেরি যেমন স্বর্গের মতো সুন্দরী তেমনি খরগোসের মতো বোকা, ওকে ভালোবাসা যায়, কিন্তু সে ভালোবাসাকে জড়িয়ে থাকা যায় না। কিন্তু আপনি তার বিপরীত। আপনার প্রেমে যে পুরুষ পড়বে সে কোনোদিন ভালোবাসায় ক্লান্তি অনুভব করবে না।
-কিন্তু আমার প্রেমে তিনি পড়বেন না।
–জর্জ আপনার প্রেমে পড়েনি? নিজেকে আপনি বোকা বানাবার চেষ্টা করবেন না, রুথ। রোজমেরির কোনো অঘটন ঘটলে জর্জ আপনাকে বিয়ে করতেন।
রুথ মনে মনে ভাবে, তার সূত্রপাত হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রুথের দিকে তাকালো ভিক্টর–আপনি একথা খুব ভালো ভাবেই জানেন। শান্ত গলায় বলতে থাকে, আমি আপনার ভালো কামনা করি। নিজের ওপর আরো বিশ্বাস রাখুন। জর্জকে চাপ দিন।
ভিক্টর, আসল কথাই বলেছে। কথ ভাবে। মাঝখানে রোজমেরি না থাকলে এতদিনে সে জর্জকে বিয়ে করতো। তার আরো কাছে আসতে পারতো। তার ভালো মন্দ দেখতে পারতো।
এইভাবেই শুরু হলো ঘটনা। ভিক্টরের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর ব্যাপারটা আরো দ্রুত গতিতে এগিয়ে চললো। রুথ অফিসে ফিরে এলো, তার মধ্যে যে পরিবর্তন ঘটেছে সেটা কেউ লক্ষ্য করলো না।
একটু পরেই রোজমেরি ফোন করলেন–রুথ, জানো, কর্ণেল রেস আমার পার্টিতে আসতে পারবেন না টেলিগ্রাম করে জানিয়ে দিয়েছেন। ওর পরিবর্তে কাকে নিমন্ত্রণ করা যায় সেটা তুমি জর্জের কাছ থেকে জেনে নাও। আসলে আমাদের এখানে একজনকে দরকার। আমি ভেবে পাচ্ছি না, সেই একজন কে হতে পারে।
-কেন, ঐ একজন তো আমি হতে পারি। আমাকে আপনি দয়া করে ঐ পার্টিতে থাকতে বলেছেন।
–ও হ্যাঁ, ভুলেই গিয়েছিলাম।
রোজমেরি উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। এদিকে রুথের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। রোজমেরি যা দেখতে পেলেন না।
রোজমেরিকে সে একেবারেই পছন্দ করে না। তিনি ধনী, সুন্দরী, অমনোযোগী এবং বুদ্ধিহীন। জর্জের স্ত্রী হওয়ার একেবারে অনুপযুক্ত।
সেদিন অপরাহ্নে রোজমেরি বারটনকে সে ঘৃণা করতে শুরু করেছিল। আজ এক বছর পরেও সেই মনোভাব অটুট আছে। সেই নভেম্বরের দিনগুলোর কথা রুথ ইচ্ছা করে ভাবতে লাগলো।
পরদিন সকালে সাম ক্রিস্টোরাল জাহাজ ছাড়ার খবর পেয়ে জর্জ হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন– তাহলে শেষ পর্যন্ত জাহাজে উঠেছে সে?
–হ্যাঁ।
–রুথ, তার সম্বন্ধে তোমার কি ধারণা?
ইচ্ছে করে রুথ নিরুত্তাপ গলায় উত্তর দেয়, আমি যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি। দুর্বল মনের নোক সে।
কিন্তু তার বুকের ভেতর তখন অব্যক্ত যন্ত্রণায় ফেটে পড়ছিল। কান্না জড়ানো গলায় নিজেই বলে ওঠে–আপনি কেন আমাকে ওর কাছে পাঠালেন? গতকাল থেকে আমি যে অন্য মানুষ হয়ে গিয়েছি। আপনি জানেন না, কি দারুণ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছি আমি? কেউ জানে না, আমি এখন কি করতে পারি?
মুখে সে কিছু প্রকাশ করলো না।
রোজমেরির জন্মদিনের কাজে সবাই ব্যস্ত। আয়নায় নিজের মুখ দেখে রুথ চমকে উঠলো। অন্য এক মুখ। থমথমে দৃঢ়তার ছাপ সেই মুখে স্পষ্ট। সত্যিই তার দয়ামায়া বলে কিছু নেই। রোজমেরির কাঁপা কাঁপা ঠোঁট, নীল চোখের দিকে তাকিয়ে তার একটুও মায়া হলো না।