টেবিলের ড্রয়ার খুলে দুটি কাগজ বের করলেন তিনি। এগিয়ে দিলেন আইরিসের দিকে।
–পড়ে দেখো।
চিঠিতে নজর দিলো আইরিস। চিঠির বক্তব্য অতি সহজ ও সরল।
–তুমি ভাবছো, তোমার স্ত্রী রোজমেরি আত্মহত্যা করেছে? না, সে খুন হয়েছে।
দ্বিতীয় চিঠিতেও ঐ একই লেখা।
-চিঠিগুলো তিনমাস আগে পেয়ে প্রথমে কোনো গুরুত্ব দিইনি। জর্জ বলতে থাকেন। তারপর গভীর ভাবে ভাবতে শুরু করি, কেন রোজমেরি আত্মহত্যা করতে যাবে?
–হয়তো ইনফ্লুয়েঞ্জায় ভুগে তার মন ভেঙে গিয়েছিল, নতুবা তিনি ছিলেন অসুখী?
আইরিসের দ্বিতীয় মন্তব্য জর্জ মেনে নিলেন সহজভাবে–তা হতে পারে। তবে আমার মনে হয় না, অসুখী ছিলো বলে সে আত্মহত্যা করবে। ও আমাকে ভয় দেখাতে পারতো। তারপর যদি বাধা পেতো তাহলে তো অন্য পথ বেছে নিতে পারতো, যেটা এখনো আছে।
..আমি অনেক কথা ভেবেছি। এর মধ্যে নিশ্চয়ই একটা রহস্য লুকিয়ে আছে। তাই তো তোমার কাছে রোজমেরি সম্পর্কে নানারকম প্রশ্ন করছি। যাই হোক, যে-ই ওকে খুন করুক না কেন, খুনের উদ্দেশ্য কি ছিল তার।
–জর্জ, তুমি কি পাগল হলে–
-না, না, আইরিস, আমাকে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। তোমাকেও এ ব্যাপারে ভাবতে হবে, আইরিস। ফলে কাজটা আমার এগিয়ে যাবে আরো। বার বার সেই অভিশপ্ত রাতটার কথা স্মরণ করো। তুমি ওর কাছাকাছি ছিলে, রোজমেরির খুনী নিশ্চয়ই ওর আশেপাশে কোথাও থাকবেন। তুমি নিশ্চয়ই খুনীকে দেখে থাকবে?
সেই দৃশ্যটা আইরিসের নিশ্চয়ই মনে আছে। স্বল্প নীলাভ আলোর স্বপ্নময় পরিবেশে বাজনার তালে তালে ড্রামের আওয়াজ। একসময় রোজমেরি টেবিলের ওপর ঝুঁকে পড়লেন। মুখের রঙ পাল্টে নীল হয়ে গিয়েছিল।
আইরিস কেঁপে ওঠে।
রোজমেরি এক স্মৃতি, বড় মর্মান্তিক স্মৃতি।
.
রুথ লেসিং
১.২
কাজের অবসরে রুথ লেসিং ভাবছিল তার বসের স্ত্রী রোজমেরি বারটনের কথা।
রোজমেরিকে খুব একটা পছন্দ করতো না সে। তার সম্বন্ধে বিশেষ কিছু সে জানতো না। ভিক্টর ড্রেক তাকে অনেক কিছু জানায় ওর সম্বন্ধে।
জর্জ বারটনের ওপর তার আনুগত্য কখনো শিথিল হয়নি। যখন সে জর্জের কাছে চাকরিতে আসে তখন তার বয়স মাত্র তেইশ বছর। জর্জের দায়িত্ব নেওয়া তার একান্ত প্রয়োজন। সেই থেকে রুথ সেই ভার বহন করে চলেছে। রুথের উপস্থিতি জর্জের পছন্দ হতো। তার সব কাজই নির্ভুল বলে মনে হতো জর্জের। জর্জ তার ব্যক্তিগত ব্যাপারেও রথের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন।
কখনো কখনো জর্জ ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে রুখের সঙ্গে আলোচনা করতেন। রুথ মন দিয়ে শুনে তার সমাধান করে দিতো। প্রয়োজনে উপদেশ দিতো। রোজমেরির সঙ্গে জর্জের বিয়েটা মন থেকে মেনে সায় না দিলেও মেনে নেয় শেষ পর্যন্ত।
ধীরে ধীরে রুথ বারটন ফ্যামিলিতে নিজের আধিপত্য বিস্তার করলো। সকলের তাকে পছন্দ। এখন রুথের বয়েস ঊনত্রিশ। কিন্তু সে আগের মতো পূর্ণ যুবতী উজ্জ্বল এবং ভাস্বর।
বিয়ের পর আনন্দমুখর দিনগুলির কথা রুথের অজানা নয়। যেমন অজানা নয় পরবর্তীকালে তার অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়ার কথা।
কিন্তু জর্জের অন্যমনস্কতার কারণ তার জানা ছিল না।
একদিন ভিক্টর ড্রেকের কথা জর্জ তাকে বললেন।
-রুথ আমার হয়ে তোমাকে একটা অপ্রিয় কাজ করতে হবে।
রুথ চোখ তুলে তাকিয়েছিল।
–আমাদের পরিবারে একটা গাধা আছে। সে হলো আমার স্ত্রীর পিসতুতো ভাই। সে একটা অকালকুষ্মাণ্ড। ইতিমধ্যে সে তার মায়ের শেয়ার কিছু বেনামে বিক্রি করে দিয়েছে। এইভাবে তার মাকে প্রায় শেষ করে দিয়েছে। সে এখন বেকার উদ্দেশ্যহীন ভাবে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
…এখন সে লন্ডনে। আমার স্ত্রীকে টাকার জন্য চিঠি পাঠিয়ে ভীষণ জ্বালাতন করে। কথাবার্তায় সে চোস্ত। আমি ওর অন্যায় জুলুম আর সহ্য করতে পারছি না। তাই আজ বেলা বারোটার সময় ওকে হোটেলে আসতে বলেছি। আমি চাই, তুমি আমার হয়ে ওর সঙ্গে মোকাবিলা করো।
–কিন্তু এখন তার চাহিদা কি? রুথ এই ধরনের চরিত্র মোটেও পছন্দ করে না।
-নগদ একশো পাউন্ড ও বুয়েন্স এয়ারসে যাওয়ার জন্য একটা টিকিট। জাহাজে ওঠার সময় তাকে টাকাটা দিতে হবে।
তার মানে আপনি সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে চান যে সে জাহাজে উঠলো কিনা, তাই তো?
-হ্যাঁ, তুমি আমার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছে দেখছি। জর্জ বললেন, ছেলেটার নাম ভিক্টর ড্রেক, ঠিকানা রুপার্ট রাসেল স্কোয়ার। তার নামে ক্রিস্টোপস জাহাজের টিকিট কাটা আছে। আগামী কাল টিলবাড়ি থেকে জাহাজ ছাড়ছে।
জাহাজের চিকিটটা হাতে নিয়ে রুথ তার হাত ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো।
–প্রিয় রুথ, তোমার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করি আমি। জর্জ বললেন, তুমি জানো না রুথ, তুমি আমার কত প্রিয়।
রুথ তার আনন্দ ঢাকতে হেসে উঠলো–আপনি এইসব সুন্দর সুন্দর কথা বলে আমাকে দেখছি নষ্ট করে দেবেন।
-না না, রুথ আমাকে তুমি বলতে দাও। তুমি আমার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের একজন বিশেষ অংশীদার। তোমাকে ছাড়া আমার জীবন অচিন্ত্যনীয়।
তার কথার উষ্ণ আবেশ ছড়িয়ে পড়ে রুথের সর্বাঙ্গে।
ঠিক সময়ে সে রুপার্ট হোটেলে এসে পৌঁছালো।
ভিক্টরকে দেখে তার মনে হলো, মেকী ব্যক্তিত্বসর্বস্ব একটি লোক। তবে রীতিমতো আকর্ষণীয়। রুথ তাকে বেশি প্রশ্রয় দেয় না, পাছে সে ভাবাবেগে অভিভূত হয়ে পড়ে।