-আমি জানি। জর্জ বলেন। অস্ত্র উৎপাদনকারী কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সে যুক্ত। গত হেমন্তে ইউনাইটেড আর্মস লিমিডেটের চেয়ারম্যান ডিউস বেরিলর সঙ্গে তার অনেক টাকার ব্যাবসার একটা চুক্তিপত্র সাক্ষরিত হয়। এই এ্যানথনি ব্রাউনের মধ্যে অনেক সম্ভাবনা দেখেছিলেন রোজমেরি। কিন্তু
জর্জ বলে চললেন, ওদের পরিচয় অল্প কয়েকদিনের। মাঝে মাঝে তারা নাচের আসরে যেতো। রোজমেরি এই অল্প পরিচয়ের সূত্র ধরে কেন যে জন্মদিনের আসরে ওকে কামনা করে ছিল সেটা আমার কাছে আজও রহস্য বলে মনে হয়।
চকিতে ভেসে উঠলো সেই সন্ধ্যার দৃশ্য আইরিসের চোখের পর্দায়।
লাক্সেমবার্গের গোল টেবিল। মিষ্টি নীলাভ আলো, বাতাসে ফুলের গন্ধ। নাচের তালে তালে বাজনার মিষ্টি সুর। টেবিলের চারধারে বসেছিলেন সাতজন লোক। তার পাশে বসেছিল এ্যানথনি ব্রাউন, রোজমেরি, স্টিফেন ফ্যারাডে, রুথ লেসিং, জর্জ এবং জর্জের ডানদিকে স্টিফেন ফ্যারাডের স্ত্রী লেডি আলেকজান্ডার ফ্যারাডে।
সেই পার্টি চলাকালীন মাঝপথে রোজমেরিনা না, আইরিস সে কথা ভাবতে চায় না।
-আইরিস, ব্রাউনকে একদিন নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিও, তার সঙ্গে আবার আমি আলাপ করতে চাই।
খুশীতে আইরিস লাফিয়ে উঠলেন। জর্জ আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে উঠেছেন। এ্যানথনি সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিল ঠিকই। কিন্তু ব্যাবসার কাজে তাকে বাইরে চলে যেতে হয়। ফলে সে কথা রাখতে পারেনি।
একদিন জুলাই মাসের শেষে জর্জ একটা চমকপ্রদ খবর দিলো আইরিস আর লুসিলকে। একটা বাড়ি তিনি কিনেছেন। যে জায়গাটা প্রায়রস নামে পরিচিত সেখানে। দশ একর জমির ওপর বাড়িটা। ছোট-খাটো জর্জিয়ান হাউস।
পুরোনো বাড়ি আবার নতুন করে সাজাতে হবে। মিসেস ড্রেক বললেন।
–ওদিকটা দেখার দায়িত্ব রুথের। ওর ওপর কাজ দিয়ে ভরসা করা যায়।
জর্জের অতি বিশ্বস্ত সেক্রেটারি হলো রুথ লেসিং। রূপে গুণে চমৎকার। হাসতে হাসতে সব সমস্যা সহজ সরল ভাবে সমাধান করে ফেলে সে। জর্জের অফিস চালায় সে। অনেকের ধারণা জর্জকেও সে চালনা করে। তার সিদ্ধান্ত জর্জকে মাথা নত করে মেনে নিতে হয়। আর রুথকে দেখে মনে হয় যেন ওর কোনো চাহিদা নেই।
–আচ্ছা জর্জ, সেখানে টেনিস কোর্ট আছে?
-হ্যাঁ, গলফ লিঙ্ক থেকে মাত্র ছমাইল দূরে, সমুদ্র মাত্র চোদ্দ মাইলের মধ্যে। তাছাড়া সেখানে আমাদের প্রতিবেশী হিসাবে যাদের পাচ্ছি–
-প্রতিবেশী? আইরিস কথার মাঝখানে প্রশ্ন করলেন।
আইরিসের চোখে চোখ রাখতে পারলেন না জর্জ। অন্য দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে বললেন–হ্যাঁ, মাত্র মাইল দেড়েক দূরে, পার্কটা পেরিয়ে ফ্যারাডেদের বাড়ি।
আইরিসের বুঝতে দেরি হলো না কেন হঠাৎ গোপনে জর্জ সাসেক্সে ঐ বাড়িটা কিভাবে পেলেন। আসলে স্টিফেন এবং সান্দ্রা ফ্যারাডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্যই তাদের বাড়ির কাছাকাছি একটা বাড়ি তিনি কিনেছেন।
কিন্তু এর কারণ কি?
তাহলে কি জর্জের বিশ্বাস স্টিফেন আর রোজমেরির মধ্যে বন্ধুত্ব ছাড়া অন্য কোনো সম্পর্ক ছিলো? সেই গোপন তথ্যটা জানার জন্যই সেখানে তার যাওয়া?
ইদানিং জর্জকে কেমন সন্দেহজনক পুরুষ বলে মনে হয়েছে।
ধীরে ধীরে জর্জকে সন্দেহ রোগে ধরলো। তার দেহ ও মনের অবস্থার অবনতি ঘটলো।
আগস্টের বেশির ভাগ সময় তারা কাটালেন লিটল পায়রসে। মস্ত বাড়িটার অদ্ভুত নির্জনতা আইরিসকে বিরক্ত করে তোলে। সাজানো গোছানো, সুন্দর পরিবেশ। তবু আইরিসের সহ্য হয় না। মাঝে মাঝে ভয়ে কেঁপে ওঠেন তিনি।
সপ্তাহের শেষে টেনিস খেলা, ফ্যারাডেদের বাড়িতে নৈশভোজে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যাওয়া এ যেন একঘেয়ে হয়ে গিয়েছিলো। সেখানকার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সান্দ্রাই পরিচয় করিয়ে দেন। কিন্তু লুসিল ডিনার পার্টি বা নাচ-গান পছন্দ করতেন না। কিন্তু তার ঠোঁটে হাসিটুকু লেগে থাকতো সবসময়।
কে বলতে পারে তিনি তার হাসির আড়ালে কি অভিসন্ধি লুকিয়ে রেখেছেন? তিনি যেন এক রহস্যময় নারী।
স্টিফেন নাকি রাজনৈতিক কাজে ব্যস্ত। তাই তাকে বেশি দেখা যেতো না। কিন্তু আইরিসের মনে হয়, তিনি ইচ্ছে করেই লিটল প্রায়রসের বাড়িতে আসছেন না।
এইভাবে কেটে গেল সেপ্টেম্বর মাস। ঠিক হলো নভেম্বরে তারা লন্ডনে ফিরে যাবেন।
ওখান থেকে চলে আসার ঠিক আগের দিন, ঠিক রাত একটায় আইরিসের চোখে সবে মাত্র ঘুম এসেছে এমন সময় দরজার কড়া নাড়ার শব্দ। আইরিস উঠে দরজা খুলে দিলেন। জর্জ দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি যে এখনো ঘুমোতে যাননি সেটা তার পোশাক দেখেই আইরিস বুঝতে পারলেন। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। মুখের রঙ পাল্টে গেছে।
-আইরিস, তুমি আমার স্টাডিরুমে এসো। তোমার সঙ্গে কথা আছে। আর একজনের সঙ্গেও আমাকে কথা বলতে হবে।
তারা দুজনে স্টাডিরুমে এসে ঢুকলেন। জর্জ দরজা বন্ধ করে দিলেন। জর্জের নির্দেশে তার উল্টোদিকের একটা চেয়ারে আইরিস বসলেন।
–কি ব্যাপার জর্জ? আইরিস আচমকা প্রশ্ন করলো। তোমাকে এত উত্তেজিত দেখাচ্ছে কেন?
আমি আর একা একা ভাবতে পারছি না। জর্জ অস্পষ্ট কণ্ঠে বলতে থাকেন, তোমাকেও বলতে হবে, তুমি কি ভাবছে–এটা কি সম্ভব?
–কিন্তু জর্জ, তুমি কি বলতে চাইছে, আমি তো বুঝতে পারছি না।
জর্জ দুহাতে কপাল টিপে ধরলেন।
–তুমি বুঝতে পারছো, তাই না? তুমি ওরকমভাবে আমার দিকে তাকিও না। আমার ভীষণ ভয় করছে, আইরিস। তোমার সাহায্য আমার প্রয়োজন। তুমি বিশ্বাস করো, আর একটু দেরি হলে আমি সত্যিই পাগল হয়ে যাবো।