-আমি রোজমেরিকে ভুলতে চাই না। জর্জের কণ্ঠস্বর শান্ত। সে আমার স্ত্রী ছিল। আজ আমার কাছে কেবল স্মৃতি। আবেগ জড়ানো কণ্ঠে বললেন, আইরিস, তোমার দিদিকে আমি ভুলতে চাই না। কিন্তু এই এ্যানথনি ব্রাউনকে রোজমেরি হয়তো পছন্দ করতো। তার সম্বন্ধে রোজমেরি বিশেষ কিছু জানতো বলে আমার মনে হয় না। তাই তোমাকে সতর্ক করে দিচ্ছি। মনে রেখো, তুমি একজন ধনী মহিলা। হতে পারে সে একজন সম্মানিত ও পয়সাওয়ালা লোক। কিন্তু তার ব্যাপারে খুব কম লোকেরই আগ্রহ আছে।
আইরিস রাগে জ্বলে উঠলো।
–হয়তো তাই কিন্তু এ বাড়িতে সে বেশি একটা আসে না।
–ভেবেছিলাম তোমার ব্যাপারে মাথা ঘামাবো না। কিন্তু তুমি আমার আত্মীয়। তাই তোমাকে আগে থেকে সাবধান করে দিচ্ছি। জর্জ বলতে থাকেন, নতুবা মাকে পরিষ্কার জানাতে হবে, তোমার বয়স কম, তোমার সুখ-সুবিধার ব্যবস্থা তো আমাকেই করতে হবে। আমি চাই, তুমি তোমার জীবন সম্পূর্ণ ভাবে উপভোগ করো।
–জর্জ, তুমি ভেবো না। আমি তা করছি।
পরে মিসেস ড্রেকের সঙ্গে এ্যানথনি ব্রাউনের ব্যাপারে তার কথা হয়েছিল। কিন্তু এমন কপাল খারাপ যে তখন লুসিল তার অকর্মণ্য ছেলের তারবার্তা নিয়ে ব্যস্ত। ভিক্টর ছিলো মায়ের চোখের মণি। দুর্বল মায়ের মনের ওপর বার বার চাপ সৃষ্টি করে সে টাকা আদায় করে নিতো। এবার ভিক্টর দুশো পাউন্ড পাঠাতে বলেছে। জীবন তার বিপন্ন। লুসিল তাই কাঁদছিল।
এই টাকা না পেলে সে নিশ্চয়ই নিজেকে গুলি করবে।
-না, তা সে করবে না। জর্জ অন্যমনস্কভাবে কথাটা বললো।
–আমার নিজের ছেলের স্বভাব আমার খুব ভালো ভাবে জানা আছে। তাই ভাবছি আমার শেয়ারগুলো বিক্রি করে দেবো।
–দেখো লুসিল, জর্জ বললেন, তুমি দু-একদিন অপেক্ষা করো, ওখানে আমার একজন লোক আছে। তার মাধ্যমে আমি তোমার ছেলের প্রকৃত অবস্থা জেনে নিচ্ছি। তবে আমি বলি কি, তুমি ওর স্বভাব পাল্টাতে সাহায্য করো। ও নিজের অভাব নিজেই মেটাক।
লুসিল একটু ঠান্ডা হলো, তবে অন্তত পঞ্চাশ পাউন্ড পাঠাতে চাইলো ছেলের কাছে। টাকাটা জর্জ দিতে চাইলেন, কিন্তু ভিক্টর জানবে যে তার মা শেয়ার বিক্রি করে টাকা পাঠিয়েছে।
-সে ত তোমার পরিবারের কেউ নয়, তাহলে তোমার অত দায় কেন? আইরিস প্রশ্ন করলো।
-রোজমেরির পরিবার মানে আমার পরিবার।
–সত্যি তুমি কত মহান জর্জ। আবেগ জড়ানো গলায় আইরিস বললেন।
জর্জ এখন ভাবছেন রিও-ডি জেনেরিওর সেই যুবকটিকে নিয়ে। যে যুবক বিবেকহীন, কেবল বাক চাতুর্যের কলাকৌশল রপ্ত করেছে।
আইরিসের কথা ভেবে জর্জ ঠিক করলেন, লুসিলকে ওর দায়িত্ব পুরোপুরি নিতে বললেন। এ্যানথনি ব্রাউনের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের ফলাফলের ওপর সতর্ক নজর রাখা উচিত।
রোজমেরির মৃত্যুর কয়েকদিনের মধ্যে জর্জের মধ্যে অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। অনেক যেন বয়েস হয়ে গেছে, চেহারায় একটা ভারিক্কী ভাব। এটাই স্বাভাবিক কিন্তু এই পরিবর্তন যখন স্বাভাবিক সীমারেখা অতিক্রম করে তখন অন্যের কাছে সেটা চিন্তার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
জর্জের সঙ্গে এ্যানথনি ব্রাউনের মতবিরোধ হওয়ার পর তিনি নিজেকে আইরিসের কাছ থেকে এড়িয়ে চলতে শুরু করলেন। বিনা প্রয়োজনে স্টাডিরুমে গিয়ে বসে থাকতেন। তার দৃষ্টিতে উদাস ভাব, হতবুদ্ধি হয়ে গেছেন এমন গোছের। প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর পাননি আইরিস। কেবল তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। মনে হয় কোথায় যেন তার একটা আঘাত লেগেছে।
দিনে দিনে জর্জকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনে হলো। এ ব্যাপারে কেউ মাথা ঘামার্লো না।
কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন জর্জ বললেন, আইরিস। রোজমেরি কি তোমার সঙ্গে বেশি কথাবার্তা বলতো।
প্রশ্ন শুনে আইরিস অবাক হলেন, কেন জর্জ। ছোট বোনের সঙ্গে কথা বলবেন না তো আর কার সঙ্গে কথা বলবেন?
–ও কি নিজের প্রসঙ্গে কথা বলতো? না কি ওর বন্ধুবান্ধবদের কথাও তোমার সঙ্গে আলোচনা করতে?
–তিনি বেশি কথা বলতেন না। তার কাজ নিয়ে বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকতেন?
ভেবেছিলাম, রোজমেরি হয়তো তোমাকে কিছু বলে থাকবে।
এই ধরনের নানা প্রশ্ন করতেন জর্জ। যেমন রোজমেরির কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল কিনা? তারা কারা? ওর কোনো গোপন কথা বলেছে কিনা ইত্যাদি।
–আচ্ছা আইরিস, রোজমেরির কোনো শত্রু ছিল? সত্যিকারের শত্রু? যার কাছ থেকে তার ক্ষতির আশঙ্কা করা যেতে পারে? হঠাৎ একদিন এই বিস্ময়কর প্রশ্নটা করে বসলেন জর্জ।
আইরিসের চোখের চাউনি দেখে জর্জ ঘাবড়ে যান।
আবার কয়েকদিন পর জর্জ জানতে চাইলেন ফ্যারাডেদের সঙ্গে রোজমেরির দেখাসাক্ষাৎ হত কিনা।
–আচ্ছা, ফ্যারাডেদের সম্বন্ধে তোমার দিদি তোমাকে কিছু বলেছিল?
না, মনে পড়ে না। তবে রাজনৈতিক আলোচনায় ওর খুব আগ্রহ দেখতাম।
–হ্যাঁ, রাজনৈতিকের রা পর্যন্ত জানতো না। সুইজারল্যান্ডে ফ্যারাডেদের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পরে ও এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
…তবে ও ছিলো চাপা স্বভাবের শান্ত মেয়ে। স্টিফেনের জন্য যে রোজমেরি পাগল ছিল, এ খবর আমি অনেকের কাছ থেকে শুনেছি।
হতে পারে।
–আচ্ছা, এ্যানথনি ব্রাউনকে দেখে তোমার কি মনে হয়?
সুন্দর স্বভাবের কেতাদুরস্ত এক ভদ্রলোক।
–সে কিসের ব্যাবসা করে জানো?
–না, সেটা জানি না। এটা সে আমাকে বলেনি।