-কিন্তু আমি জানি, প্রায় এক বছরের কাছাকাছি সে দক্ষিণ আমেরিকায় বাস করছে।
-সেটা কি সত্যি? ঘুরে ফিরে সেই চিরন্তন প্রেম কাহিনী এসে যাচ্ছে স্বাভাবিক ভাবে। রুথ লেসিং এবং ভিক্টর মেলামেশা করতে গিয়ে স্বাভাবিক ভাবে প্রেমে পড়বে। তাদের মধ্যে ভালোবাসা বিনিময় হবে।
রুথ বলেছে, রোজমেরির মৃত্যুর আগেই ভিক্টরকে দক্ষিণ আমেরিকাগামী এস.এস. ক্রিস্টোবল জাহাজে তুলে দিয়ে এসেছে সে। এবং এই ব্যাপারটা একমাত্র রুথ জানতো। ভালো করে খোঁজ নিলে দেখা যাবে রোজমেরির মৃত্যুর আগে সে ইংলন্ডে ছিলো। তাছাড়া জর্জের মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে বুয়েন্স এয়ার ছেড়ে ভিক্টর নিউইয়র্ক চলে যায়। টেলিগ্রাম পাঠানো কোনো দুষ্কর ব্যাপার নয়। যে টেলিগ্রাম লুসিলা পিসি পেয়েছিলেন, যাতে টাকা দাবী ছিলো, সেটা ভিক্টর কোনো বন্ধুকে দিয়ে পাঠাবার ব্যবস্থা করে থাকতে পারে। এর থেকে সে প্রমাণ করতে চেয়েছিল সে আছে অনেক অনেক দূরে। অথচ
…অথচ সেদিন রাতে লুক্সেমবার্গে সে আমার টেবিলের পাশে বসেছিল। ঠিক আমার টেবিলের পেছনে। জেলে থাকার সময় ওর সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল অল্প। আমি তাকে মাংকি কলেমন হিসাবে জানতাম। কিন্তু সে যে ভিক্টর ড্রেক সেটা আমার অজানা ছিলো। বহুদিন দেখা না হওয়ার ফলে সে আমাকে চিনতে পারলো না।
..একসময় সে উঠে পাবলিক টেলিফোনের বুথের দিকে এগিয়ে গেল। আপনাদের এক প্রস্থ ওয়েটারের পোশাক দেখিয়েছিলাম, মনে আছে নিশ্চয়ই। ওয়েটারের পোশাক পরে সে সহজেই একটা গ্লাসে শ্যাম্পেন ঢালার অজুহাতে সায়ানাইড বিষ মিশিয়ে দেয়। যেহেতু সে ওয়েটার তাই কেউ তাকে সন্দেহ করলো না।
–আর রুথ? আইরিসের কণ্ঠে দ্বিধা।
-হ্যাঁ, রুথও এই ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করেছে। তুমি যখন ক্লোকরুমে গিয়েছিলে তখন রুথ তোমার ব্যাগে পাকেটটা ঢুকিয়ে দেয়, ঠিক রোজমেরির ক্ষেত্রে এটা হয়েছিলো। বেনামে চিঠিগুলো লিখেছিলো জর্জ। সে চেয়েছিলো জর্জের মনে সন্দেহের দানা বাঁধতে, যে তুমি রোজমেরিকে খুন করেছে। ফলে রুথের পরামর্শে জর্জ দ্বিতীয়বার লুক্সেমবার্গে পার্টির ব্যবস্থা করেছিল। ওয়েটারের ভুল হয়েছিল বলে তুমি এ যাত্রা রক্ষা পেলে আইরিস। নতুবা জর্জের পরিবর্তে তোমার চিরতরে ঘুমোনোর কথা ছিল। এর থেকে রুথ প্রমাণ করতো যে রোজমেরিকে তুমি খুন করেছিলে বলে অনুশোচনায় ভুগছো। শেষে সহ্য করতে না পেরে নিজে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।
–কিন্তু মেয়েটিকে আমি এখনও পছন্দ করি। ও জর্জকে বিয়ে করবে বলেছিলো।
আইরিস বললো।
-হ্যাঁ, ওর ঐ ভালো স্বভাব হয়তো চিরদিন অটুট থাকতো, জর্জ বারটনের আদর্শ স্ত্রী হতে পারতো, যদি না সে ভিক্টরের সঙ্গে মেলামেশা করতো। আসলে কি জানো, মেয়েরা প্রথম দিকে ফুলের মতো সুন্দর পবিত্র থাকে।
-তাহলে এতসব ব্যাপার ঘটানো হলো টাকার জন্য?
আইরিস আঁৎকে ওঠে।
–তুমি টাকার মর্ম বুঝবে না, আইরিস। তোমার মনে তো কোনো প্যাঁচ নেই। তুমি কি করে বুঝবে। কিন্তু এ দুনিয়ায় টাকাই সবার মূলে। টাকা থাকলে যে কোনা লোক দুনিয়াকে হাতের মুঠোয় আনতে পারে। ঐ টাকার জন্য ভিক্টর হয়ে উঠেছিলো জঘন্য নরকের কীট। কিছুটা টাকার মোহে এবং রোজমেরিকে ঘৃণা করতে বলে রুথও আংশিকভাবে এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তোমাকে গাড়ি চাপা দিয়ে মারতে চেয়েছিল এই রুথ লেসিং।
এ্যানথনি একটুক্ষণ থেমে আবার বলতে থাকে–জর্জের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা সেরে সে লুসিলা পিসির কাছ থেকে বিদায় নেয়। সে কিন্তু নিজের বাড়িতে ফেরে না। সোজা চলে আসে তোমার ঘরে। তোমাকে একা পাওয়ার সুযোগটা সে খুঁজছিলো। পেয়েও গেল সে। সে তোমাকে জর্জের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সব আয়োজনের কথা শোনাতে থাকে।
-হ্যাঁ, আইরিস বলতে থাকে। রুথ তারপর একটা রবারে জড়ানো টর্চ হাতে নিয়ে বললো, বাঃ, জিনিসটা ভারী সুন্দর দেখতে তো! তারপরের কথা আমার মনে নেই।
জানি, তুমি কিছু বলতে পারবে না। এ্যানথনি বলে–পরেরটুকু আমি বলছি। তোমার হাতের টর্চ নিয়ে তোমাকে সে আঘাত করে। তুমি জ্ঞান হারাও। তোমার সংজ্ঞাহীন দেহটা সে তখন টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় গ্যাস ফায়ারের কাছে। তোমার মুখটা ঘুরিয়ে দেয় গ্যাস ফায়ারের দিকে, তারপর সুইচ অন করে দেয়। মনে হয়, এসব কাণ্ডের কথা লুসিলা পিসি টের পাননি। তাহলে নিশ্চয়ই তিনি ছুটে এসে বাধা দিতেন।
-পুলিশ কি ভিক্টর ড্রেককে ধরতে পেরেছে?
-হ্যাঁ, আজ সকালে সে নিউইয়র্ক থেকে ফিরছিল। তখন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। জবাব দিলো কর্নেল রেস।
–এ্যানথনি এক কাজ করলে হয় না, আইরিস বলে। রোজমেরির সম্পত্তি নিয়ে কম তো অঘটন ঘটলো না। এতই যখন ঝামেলা ঐ অর্থ নিয়ে, তখন আমার ইচ্ছে, ওর থেকে একটা পেন্সও নেবো না।
-খুব ভালো কথা বলেছো, বরং ঐ অর্থ আমরা কোনো সৎ কাজে ব্যয় করবো। তাছাড়া আমার নিজের আয় নেহাত মন্দ নয়। তোমাকে স্ত্রী হিসাবে যথেষ্ট সুখে রাখতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস।
কর্নেল রেসের ঠোঁটে হাসির ঝিলিক দেখা দিলো।
চীফ ইনসপেক্টর কেম্প তখন যাওয়ার জন্য এগিয়ে ছিলেন। মুখ ঘুরিয়ে বললেন–আমার যতদূর মনে হয়, আপনারা নিশ্চয়ই ফ্যারাডেদের চায়ের নিমন্ত্রণে যোগ দিচ্ছেন না।