–যাই হোক, এখন ব্যাপার হলো জর্জের গ্লাসে সে কি করে সায়ানাইডের গুঁড়ো মেশালো?
এ্যানথনির চোখ দুটো উত্তেজনায় জ্বলছিল। সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। কাঁপা কাঁপা হাতে সিগারেট ধরায়।
এতক্ষণ চীফ ইনসপেক্টর কেম্প ওদের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে সব শুনছিলেন।
এ্যানথনি রাগে গজরাতে থাকে–এখন দেখছি সমস্ত ব্যাপারটা উল্টে গেল। নতুন করে প্রথম থেকে ব্যাপারটা তলিয়ে দেখতে হবে। জর্জ বারটন আমার চোখের সামনে বসেছিল। তারই মাঝখানে অঘটন ঘটে গেল। কিন্তু কি করে হলো, আমাকে জানাতেই হবে। হতে পারে যখন সবাই নাচে ব্যস্ত ছিল তখন অপরাধী কাজটা সম্পন্ন করে। কিন্তু জর্জ তার গ্লাসে চুমুক দিয়েছিলেন এবং স্বাভাবিক ছিলেন। অতএব তাকে বিষ প্রয়োগ করা হয়নি অথচ বিষক্রিয়ার ফলেই তার মৃত্যু হয়।
ঘরের অন্য দুজন এ্যানথনিকে নীরবে লক্ষ্য করছিল। সে ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে মাথার ওপর হাত দুটো রেখে আর বিড়বিড় করছে
-হা, হ্যাঁ, ঠিক তাই…সেই ব্যাগ..সেই ওয়েটার…
ওয়েটার? কেম্প সতর্ক হয়েই ছিলো। হ্যাঁ, ওয়েটার। তবে সে ঠিক ওয়েটার নয়। যাদু কিংবা কোনো সম্মোহন শক্তির দ্বারা আমাদের মধ্যে কেউ সেই মুহূর্তে ওয়েটারের ছদ্মবেশে কাজ হাসিল করে থাকবে। একটু থেমে কেম্পের হাত ধরে বলে-বিশ্বাস হলো না, না? আসুন আমার সঙ্গে। দেখুন বাইরের জগৎটা কি ভয়ঙ্কর।
ওদের দুজনকে নিয়ে এ্যানথনি ব্রাউন ঘর থেকে বেরিলয় করিডোরের সামনে টেলিফোনের সামনে এগিয়ে গেল।
.
৩.১৩
চীফ ইনসপেক্টর কেম্প এবং কর্নেল রেস কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে ছিলো এ্যানথনির দিকে। সে কি করতে চায় সেটাই দ্রষ্টব্য। এ্যানথনি কিছুটা খুশী হয়েছে এই ভেবে যে ওদের দুজনকে সে বোঝাতে পেরেছে। তাই তারা শ্রদ্ধা ও যথেষ্ট আগ্রহ নিয়ে তার কথা শুনছে। হঠাৎ অশুভ একটা আশঙ্কায় সে চমকে উঠলো। আইরিসকে একা ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। আইরিস একটু আগে ভয়ে ভয়ে তাকে জানিয়েছিল। আর একটু হলে সে গাড়ি চাপা পড়তো। ওকে চাপা দেওয়ার জন্যই ড্রাইভার ইচ্ছে করে অসতর্ক ভাব দেখিয়ে ওকে চাপা দিয়ে খতম করতে চেয়েছিল। তার মানে ওর মুখ চিরকালের জন্য কেউ বন্ধ করতে চাইছে।
আমাদের এক্ষুনি একবার এলভারস্টন স্কোয়ারে যেতে হবে।
এ্যানথনি রাস্তায় নেমে সংক্ষেপে আইরিসের নিষ্ঠুর অভিজ্ঞতার কথা ওদের জানায়। একটা ট্যাক্সিতে তারা উঠে বসলো।
–ঈশ্বর আপনাকে সময় মতো মনে করিয়ে দিয়েছেন বলে তাকে ধন্যবাদ জানাই। এতো তাড়াতাড়ি তৃতীয়বার আক্রমণ করাটা কিন্তু বাঞ্ছনীয় নয় কেম্প মন্তব্য করে।
সে যাই হোক, রেস বলে, তৃতীয় বার আক্রমণের ফলে আসল অপরাধীকে ধরার সুযোগ আমাদের এসে গেছে।
জর্জ বারটনের বাড়ির সামনে গাড়ি এসে দাঁড়ালো।
পারলার মেড সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দিলো।
মিস আইরিস বাড়ি ফিরেছে?
এ্যানথনি তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে প্রশ্ন করলো।
–হ্যাঁ, স্যার। তিনি আধঘণ্টা হলো বাড়ি ফিরেছেন। ইভান্স গভীর বিস্ময়ে কথাটা বললো।
এ্যানথনি ছুটে বাড়ির মধ্যে ঢোকে। পেছনে কেম্প এবং রেস।
ড্রয়িংরুমে তখন লুসিলা ড্রেক ড্রয়ারে কি যেন খুঁজছিলেন আর আপন মনে বলছিলেন– কোথায় যে গেল মিসেস মারকাসের চিঠিটা?
–আইরিস কোথায়?
এ্যানথনির আচমকা প্রশ্ন শুনে তিনি ফিরে তাকালেন। অবাক দৃষ্টি তার। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সহজভাবে বললেন, মাফ করবেন, আপনার পরিচয়?
রেস এবার সামনে এসে দাঁড়ায়।
তাকে দেখে লুসিলা ড্রেক খুশীতে প্রায় লাফিয়ে উঠলেন।
-ওঃ আমার প্রিয় কর্নেল। আমি আপনাকে আরো একটু আগে আশা করেছিলাম। আপনার সঙ্গে জর্জের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আলোচনা করার ইচ্ছা ছিল।
মিসেস ড্রেক একবার কথা বলতে শুরু করলে থামতে চান না। তার কথার মাঝখানেই রেস জানাতে চাইলো-মিস মারলে কোথায়?
-আইরিস? বেচারি। এত ঝামেলা সহ্য করার মতো তার কি বয়েস হয়েছে? মাথা ধরেছে বলে ওর ঘরে চলে গেছে। বোধহয় বিশ্রাম নিচ্ছে। আমি ওকে বললাম, যাও তুমি বিশ্রাম নাও গিয়ে। আমি আর রুথ সব সামলে নেবো। রুথের একটুও ক্লান্তি নেই। মুখ বুঝে সব হুকুম মেনে কাজ করছে।
–মিস লেসিং এখন কোথায়?
কেম্প জানতে চায়।
মিনিট দশেক আগে চলে গেছে সে বেচারী। ওর হাতে এখন…
ইতিমধ্যে এ্যানথনি কখন যে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেছে কেউ টের পায়নি। সে বিরক্ত হয়ে ফিরে দাঁড়িয়ে বলে, আপনারা কি গল্প করবেন, না কি আমাকে একটু সাহায্য করবেন।
অতএব ওরা দুজন ঘর থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসে।
তিনজনে পা টিপে টিপে সিঁড়ি বেয়ে তিনতলায় উঠে আসে। চরাতলায় উঠতে গিয়ে এ্যানথনি থমকে দাঁড়ায়, মৃদু পায়ের শব্দ সিঁড়ির ধাপে ধাপে নিচে নেমে আসে। সে দেরি না করে ঝট করে কেম্পকে নিয়ে পাসের বাথরুমে ঢুকে যায়।
পায়ের শব্দটা মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ওরা অপেক্ষা করলো। তারপর চারতলায় উঠে আইরিসের ঘরের দরজায় এসে ধাক্কা দেয়।
কোনো সাড়া না পেয়ে এ্যানথনির সন্দেহটা আরো ঘনিয়ে ওঠে। চাবির গর্তে চোখ রাখলো সে। সারা ঘর ধোয়ায় ভর্তি।
ততক্ষণে কর্নেল রেস হন্তদন্ত হয়ে চারতলায় উঠে এলো।
দরজা ভাঙা ছাড়া উপায় নেই। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর দরজা খুলে গেল। ঘরের মধ্যে ঢুকে দ্রুত চোখে বুলিয়ে নিয়ে রেস চিৎকার করে ওঠে–ঐ তো মিস মারলে ফায়ারপ্লেসের কাছে পড়ে আছেন। আপনি ওঁকে দেখুন। আমি ততক্ষণ ঘরের জানলাগুলো খুলে দিই।