–এটা কেউ লক্ষ্য করেনি।
–হ্যাঁ, রুথ লেসিং এমনভাবে তাকিয়েছিল যেন কোনো উদ্দেশ্য নেই তার।
প্যাকেটের ওপর তোমার হাতের ছাপ থাকতে পারে?
–না, রুমাল দিয়ে সেটা ধরেছিলাম।
–তাহলে তুমি যখন ক্যাবারে নাচের জন্য টেবিলে হাত-ব্যাগটা রেখেছিলে তখনই তোমার অনুপস্থিতিতে কেউ এই কাজটা করে থাকবে। তুমি একবার ক্লোকরুমেও তো গিয়েছিলে। সেখানে তোমার সঙ্গে কে ছিলো?
সান্দ্রা ফ্যারাডে আর রুথ লেসিং ছিলো। হাত ধোয়ার জন্য ব্যাগটা কাঁচের টেবিলে রেখে বেসিনের সামনে একবার গিয়েছিলাম।
তাহলে ও দুজনের মধ্যে যে কোনো একজন এই কাজ করেছে। তবে দুজনের মধ্যে রুথের সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু রুথের যদি তোমার প্রতি সায়ানাইড প্রয়োগের কোনো ইচ্ছা থাকতো, সে তোমার অজান্তে অবশ্যই করতে পারতো। কিন্তু সেটা সে করেনি। তার মানে রুথ একাজ করেনি। তাহলে কি কোনো ওয়েটার? রুথ উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য কোনো ওয়েটার ভাড়া করেছিল?
এ্যানথনির মন তখন দ্বিধা সংকোচে ভরে গেছে। সে বললো–আমাদের এখুনি চীফ ইনসপেক্টর কেম্পের কাছে যেতে হবে। নিজেদের ঘাড়ে চাপিয়ে রাখা যায় না। তাছাড়া আইন বলতেও কিছু আছে।
-এ্যানথনি, তুমি এটা করতে পারো না। আইরিস ভয়ে আঁৎকে ওঠে। তাহলে ওরা আমাকেই খুনী বলে ধরে নেবে।
-না, তুমি ভুল ভাবছে। সত্যি কথা বললে ওরা বিশ্বাস করবে। তাছাড়া পরে যদি জানাজানি হয় তাহলে হাজার যুক্তি দেখালেও তুমি রেহাই পাবে না। ওরা বেরোনোর জন্য পা বাড়াতেই কলিংবেল বেজে উঠলো।
-এ্যানথনি আমার যাওয়া হবে না, জর্জের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যাপারে রুথের সঙ্গে আলোচনা আছে। এটা তোমাকে বলা হয়নি।
-আইরিস কাজটা অত্যন্ত জরুরি। মিসেস ড্রেকের সঙ্গে রুথ এ ব্যাপারে আলোচনা করতে পারে। তুমি যদি এখন না যাও তাহলে দুঃখের সীমা থাকবে না তোমার। রুথকে অতকথা বলার পর সে বলে–ঠিক আছে মিঃ ব্রাউন, আপনারা যান। আমি মিসেস ড্রেকের সঙ্গে আলোচনা করে নেবো।
.
৩.১২
গোল মার্বেল পাথরের টেবিলের সামনে বসেছিল তারা তিনজন।
কর্নেল রেস, চীফ ইনসপেক্টর কেম্প এবং এ্যানথনি ব্রাউন।
এ্যানথনি ওদেরকে ব্যাপারটা বোঝাবার চেষ্টা করছিল। কেম্প তার যুক্তিগুলি খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলো।
-এটা এমন একটা কেস, তুমি জানো, অপরাধী কে, কিন্তু প্রমাণ করতে পারো না। চীফ ইনসপেক্টর বলে ওঠে।
তার মানে আপনি জানেন, খুনী কে? এ্যানথনি কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করে।
–হ্যাঁ, লেডি আলেকজান্ডার ফ্যারাডেকে আমার ধারণা।
কারণ? রেস জানতে চায়।
-ভদ্রমহিলা অত্যন্ত পরশ্রীকাতর ও অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারী। কেম্প বলতে থাকে। মনে হয় মিঃ বারটনকে কেউ ইঙ্গিত করে থাকবে। ফলে তার মনে সন্দেহ জাগে। অবশ্য সন্দেহটা হওয়া স্বাভাবিক। ফ্যারাডে পরিবারের ওপর নজর রাখার প্রয়োজন না হলে কেউ তাদের পাড়ায় বাড়ি কিনতে আসে? ধৈর্য ধরার মতো মহিলা তিনি নন। আমার যতদূর ধারণা, একমাত্র তার পক্ষেই মিঃ বারটনের গ্লাসে সায়ানাইড বিষ মেশানো সম্ভব। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজটা করেছে বলে কারো নজরে পড়েনি।
এবার কেম্প এ্যানথনির দিকে তাকালো। মিঃ ব্রাউন, মিস মারলেকে তার কাহিনী শোনাবার জন্য এখানে নিয়ে আসাতে আমি খুব খুশী হয়েছি।
–আমি কাজটা দ্রুত করতে চেয়েছিলাম। ব্রাউন জবাব দেয়। তবে একটা কথা আপনি ঠিকই বলেছেন চীফ ইনসপেক্টর, এ কেসের বিচার কখনো হতে পারে না। বেনামী চিঠিগুলো কে লিখলো, কোন উদ্দেশ্যে লিখেছিলো, জর্জ বারটন কেন খুন হলো ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর আমরা জানতে পারলাম না। তবে এ ব্যাপারে আমাদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই বলে আমার মনে হয়।
–এ সন্দেহ কি আপনার এখনো আছে মিঃ ব্রাউন? রেস প্রশ্ন করে।
–রুথ লেসিংকে আমার সন্দেহ হয়। এ্যানথনি জবাব দেয়।
-হ্যাঁ, আপনার সন্দেহ অমূলক নয়। মিসেস বারটনকে খুন করে জর্জ বারটনকে বিয়ে করার পথ পরিষ্কার করেছিল সে। কিন্তু দ্বিতীয় খুনের বেলায় তাকে তো দায়ী করা যায় না। সে কেন তার প্রেমিককে খুন করবে। তাছাড়া মিস মারলের হাত থেকে প্যাকেটটা পড়ে যেতে দেখে সে কেনই বা মুখে হাত চাপা দিয়ে অবাক চোখে তাকিয়েছিল? তবে আমার ধারণা যদি সত্যি হয় তাহলে কে জর্জ এবং রোজমেরি বারটনকে খুন করেছে সেটা বলতে পারি।
–আপনি জানেন? কে সে?
এ্যানথনি বড় বড় চোখে তাকায়।
–আমার মনে হয় মিস মারলেই অপরাধী। শান্তস্বরে রেস বলে।
এ্যানথনি উত্তেজিত হয়ে ওঠে। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সে সংযত করে। যুক্তি দিয়ে ওদের কাছ থেকে সব জানতে হবে। সে বলে–কেন তাকে আপনার সন্দেহ হলো কর্ণেল রেস?
–ভাগ্যগুণে মিসেস বারটন বিরাট সম্পত্তির একমাত্র অংশীদার ছিলেন। মিস মারলের ঐ সম্পত্তির ওপর কোনো দাবী ছিলো না। মিস মারলে ভালো করেই জানতেন যে মিসেস বারটন কেবল নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেলে সব সম্পত্তি আইরিস পাবে। ইনফ্লুয়েঞ্জায় যখন মিসেস বারটনের মানসিক অবস্থা দারুণ বিপন্ন তখন সুযোগ বুঝে মিস মারলে কাজটি হাসিল করেন।
..এছাড়া আর একটা কারণ আছে। আচ্ছা মিঃ ব্রাউন, এই কেসের সঙ্গে ভিক্টর ড্রেককে জড়িয়ে দিতে পারেন না?
–ভিক্টর ড্রেক? অবাক হয় এ্যানথনি।
–হ্যাঁ, এটা মারলে পরিবারের দুর্বলতা বলে আমি জানি।