.
৩.১০
এ্যানথনি ব্রাউনের ঘরে এসে ঢুকলো কর্নেল রেস। অস্বাভাবিক লম্বা চেহারা, ধূসর লোহা রঙের চুল, মুখটা যেন ব্রোঞ্জে খোদাই করা।
-কর্নেল রেস গতকাল রাতে আপনি এক বিশেষ অতিথি ছিলেন, কিন্তু আপনি এলেন না। বারটন বলেছিল—
না, ঐ খালি চেয়ারটা আমার জন্য ছিলো না। রেস বলতে থাকে। জর্জের পরিকল্পনা ছিলো অন্যরকম। ক্লো ওয়েস্ট নামের এক অভিনেত্রীর জন্য ঐ চেয়ারটা ছিলো।
এ্যানথনি ব্রাউন বিস্মিত হলো।
–একজন নবাগতা অভিনেত্রী যার চেহারার এবং মুখের সঙ্গে মিসেস বারটনের দারুণ মিল আছে। তাকে রোজমেরির একটা ফটো দেওয়া হয়। এমন কি মৃত্যুর দিন তিনি যে পোশাক পরেছিলেন সেই পোশাক তাকে গতকাল রাতে পরার জন্য দেওয়া হয়। তার মানে জর্জের পরিকল্পনা ছিলো, মিসেস রোজমেরির প্রেতাত্মার অভিনয় করিয়ে সেদিনের প্রকৃত ঘটনার আলোকপাত করা।
-কর্নেল রেস না হেসে পারছি না। আমি অনুভব করি, বেচারা রোজমেরির আত্মা অমন যত্রতত্র ঘুরে বেড়াবার নয়।
-কেন, একথা বলছেন?
–তিনি খুন হয়েছিলেন, আত্মহত্যা নয়।
তাকে মৃত্যু ভয় দেখানো হয়েছিল, এটাও বলা যেতে পারে? মিঃ ব্রাউন আপনি কি টনি মোরেলোর খবর জানেন?
এ্যানথনির মুখ শুকিয়ে যায়। সে চেয়ারে বসে পড়ে। সে আস্তে আস্তে বলে, আপনি জানলেন কি করে? আমার এই গোপন পরিচয় আপনি আমেরিকা থেকে সংগ্রহ করেছেন নিশ্চয়ই?
সে যাই হোক, আপনার আসল নাম টনি মোরেলো কিনা বলুন? আর মিসেস বারটন আপনার গোপন পরিচয় জেনে ফেলেছিলেন বলে তাকে হত্যা করার হুমকি দেন। কি, আমি ঠিক বলছি তো?
–আমি তাঁর মুখ বন্ধ করার জন্য একথা বলেছিলাম। টনি খোলখুলি স্বীকার করলো।
এত সহজে যে কাজ হাসিল হবে সেটা ভাবতে পারেনি রেস। তবু তাকে বাজিয়ে দেখার জন্য বললো, আপনার সম্বন্ধে সব কিছু জানি আমি, মিঃ মোরেলো।
বড়ই দুর্ভাগ্য তাহলে আমার। এ্যানথনি ব্যঙ্গ করে বলে, তার মানে আপনি বলতে চাইছেন যে এরিকসন এরোপ্লেনে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করার জন্য আমার যে শাস্তি হিসাবে জেল হয়েছিল সেটা মিসেস বারটন জানতেন বলে তাকে আমি খুন করি। তারপর জর্জ বারটন আমাকে সন্দেহ করতেন বলে তাকেও আমি খুন করি? তারপর বিরাট ধন সম্পত্তির লোভে এবার খুন করার চেষ্টায় আছি মিস আইরিস মারলেকে, তাই তো? কিন্তু এসবের কোনো প্রমাণ আপনার হাতে নেই।
–আপনার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার আগে আপনাকেই দোষী হিসাবে সন্দেহ করেছিলাম। কিন্তু আপনার সঙ্গে এখন কথা বলে আমার সে ধারণা পাল্টে গেছে। আপনি আমাদের বন্ধু। খুন আপনি করতে পারেন না।
এক বুক স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো মিঃ ব্রাউন। মুখে হাসি ফুটলো।
-এবার বলুন মিঃ ব্রাউন, মিঃ এবং মিসেস বারটনকে কারা খুন করেছে বলে আপনার মনে হয়?
-কে বা কারা তাদের খুন করতে পারে এরকম কোনো ধারণা আমার নেই। যদি সন্দেহ করতে হয় তাহলে গতকাল পার্টির সকলকে দোষী মনে করতে হয়। তবে মিস রুথ লেসিংকে আমার সবচেয়ে বেশি সন্দেহ হয়।
–এরকম সন্দেহর মূলে কোনো কারণ আছে?
-না, তবে তাকেই আমার সম্ভাব্য খুনী বলে মনে হয়। অবশ্য দুটি ব্যাপারের ক্ষেত্রে সে এমন একটা জায়গায় বসেছিল যে সেখান থেকে ওঁদের শ্যাম্পেনের গ্লাসে সায়ানাইড মেশানো অসম্ভব। এদিক থেকে বিচার করলে ধরে নেওয়া যেতে পারে, ওঁরা আত্মহত্যা করেছিলেন। তবে যখন ওদের কথা মনে ভাবি, একান্তে বসে নিজের মনে আলোচনা করি, ঐ বেনামী চিঠিগুলো কে লিখেছিল? আর তার চিঠি লেখার উদ্দেশ্য-ই বা কি?
.
৩.১১
লুসিলা ড্রেক তার এক প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে অন্য জায়গায় চা খাওয়ার জন্য বেরিয়েছেন। সেই অবসরে এ্যানথনি ব্রাউন এলভারস্টন স্কোয়ারে এসে হাজির হলো। উদ্দেশ্য আইরিসের সঙ্গে নিভৃতে কিছু কথা বলা।
-এ্যানথনি, তুমি এতদিন কোথায় ছিলে? আইরিসের কণ্ঠে অনুযোগের ছোঁয়া। তোমার সঙ্গে যে অনেক কথা ছিল এ্যানথনি।
আইরিসের কাছে বসে এ্যানথনি বলে–কি হয়েছে প্রিয়তমা? তোমাকে খুব উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে?
গতকাল রাতের কথা, তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানি না। চীফ ইনসপেক্টর কেম্পের অভিযোগ, লুক্সেমবার্গের সেই অভিশপ্ত টেবিলের নিচে ছোট্ট একটা কাগজের প্যাকেট পাওয়া গেছে, তাতে সায়ানাইডের গুঁড়ো লেগে ছিল।
-এর জন্য এত ভয় পাওয়ার কি আছে? এ্যানথনি হাল্কা ভাবে কথাটা বলে। খুনী নিশ্চয়ই জর্জের সামনের গ্লাসে সায়ানাইডের গুঁড়ো ঢেলে দেবার পর প্যাকেটটা সবার অলেক্ষ্য টেবিলের ওপর রেখে দিয়ে থাকবে।
–আসলে তা নয়। আইরিসের চোখে ভয়। ঐ প্যাকেটটা আমিই টেবিলের নিচে ফেলে দিয়েছিলাম।
এ্যানথনি চমকে ওঠে।
–শোন এ্যানথনি, মৃত জর্জকে নিয়ে যখন সকলে ব্যস্ত তখন চোখের জল মুছতে গিয়ে হাত-ব্যাগ খুলে রুমাল বের করতে যাই। কিন্তু ব্যাগ খুলে আমি হতবাক হয়ে পড়ি। কাগজের খালি প্যাকেট। তখনি আমার মনে পড়ে রোজমেরির মৃত্যুর পর হাত-ব্যাগ থেকে পাওয়া সায়ানাইডের খালি প্যাকেটটার কথা। কিন্তু কি করে এটা এলো? কিন্তু বাড়ি থেকে বেরোবার সময় আমার সেই হাত-ব্যাগে কেবল প্রসাধনের কিছু জিনিস ছিল। এছাড়া অন্য কিছু ছিল না, আমার ভালো করে মনে ছিল। রুমাল বের করতে গিয়ে কাগজের প্যাকেটটা টেবিলের নিচে পড়ে যায় ব্যাগ থেকে। ওটা তোলার ইচ্ছা হলো না। কেবল মনের মধ্যে একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো, এটা যদি প্রকাশ হয়ে পড়ে তাহলে আমাকেই সকলে খুনী বলে ধরবে। কিন্তু এ্যানথনি, আমি তো তাকে খুন করিনি?