বেটি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই মেরি ব্রিজ ট্যালবট ঘরে এসে ঢুকলো। চেরী জ্যাম তৈরি করতে কি কি উপকরণ লাগবে রেস তার কাছে জানতে চাইলো। উত্তরে জানতে পারলো যে চেরী জ্যাম মিহি করতে হলে মোরেলো চেরীজ অবশ্যই লাগবে।
ঠিক নামটা তাহলে খুঁজে পেয়েছে কর্নেল। সে ওখান থেকে বিদায় নিয়ে নিচে নেমে এলো। দেখলো বেটি তার জন্য অপেক্ষা করছে।
–আচ্ছা তার নাম কি টনি মোরেলো ছিল?
-হা হা, ব্রাউনকে বলতে শুনেছি, মিসেস বারটন যেন ঐ নামটা ভুলে যান। ব্রাউন একথাও বলেছিল যে সে জেলও খেটেছে।
একটু হেসে কর্নেল ওখান থেকে চলে এলো, কাছাকাছি পাবলিক টেলিফোন বুথে ঢুকে কেম্পের সঙ্গে যোগাযোগ করলো।
.
৩.৮
প্রায় আধঘণ্টা পরে ভীত সন্ত্রস্ত ষোলো বছরের এক ওয়েটারের সঙ্গে সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে চীফ ইনসপেক্টর কেম্প বিরক্ত হয়ে ওঠেন। লুক্সেমবার্গ রেস্তরাঁর ছেলেটি তার কাকা চার্লসের সৌজন্যে চাকরিটা পায়। তার কাজে ছিলো না ক্লান্তি, ছিল না কোনো অভাব অভিযোগ। খুব শীগগির তার পদোন্নতি হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু মিঃ জর্জ বারটনের খুনের ব্যাপারে পুলিশ তাকে সন্দেহ করে।
-বিশ্বাস করুন আপনি, ছেলেটি বলে। পাশের টেবিলে মঁসিয়ে রবার্ট সসের জন্য তাগাদা দিচ্ছিলেন। সসের শিশি নিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে যেতে চোখে পড়লো একটা লেডিজ ব্যাগ মেঝের ওপর মিঃ বারটনের টেবিলের সামনে পড়ে আছে। আমি ঐ টেবিলে খাবার দিতে গিয়ে দেখেছিলাম ব্যাগটা মিস মারলের হাতে। তাই তাড়াহুড়োতে মিস মারলের চেয়ার ভেবে ব্যাগটা হয়তো ভুল করে অন্য কোথাও রেখে থাকবো। অন্য কোনো মতলব আমার ছিলো না।
কেম্প তাকে সাবধান করে দিলো–ভবিষ্যতে যেন এরকম ভুল হয়।
সার্জেন্ট পোলক তাকে জানালো, লুক্সেমবার্গের মিঃ বারটনের রহস্যজনক মৃত্যুর ব্যাপারে কিছু বলার জন্য মিস কেলা ওয়েস্ট দেখা করতে চায়।
দূর থেকে মিস কেলা ওয়েস্টকে দেখে কেম্পের মনে হলো, কোথায় যেন দেখেছে। পরিচিত মনে হচ্ছে? ভদ্রমহিলা সামনে আসতে তার ভুল ভাঙলো।
গতকাল রাতে লুক্সেমবার্গে একজন লোক মারা গেছেন, কাগজে পড়লাম মিঃ জর্জ বারটন। অবশ্য ভদ্রলোককে আমি আদৌ চিনি না।
-তাহলে?
-শুনুন ইনসপেক্টর কেম্প, স্পটলাইটে আমার ছবিসহ নাম ঠিকানা ছাপানো হয়। ঐ ছবিটা মিঃ ববারটনকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে। তিনি আমাকে যোগাযোগ করে বলেছিলেন যে লুক্সেমবার্গে একটা ডিনার পার্টির ব্যবস্থা করেছেন। ঐ পার্টিতে একটা দারুণ চমক দিতে চান। তারপর একটা ছবি আমাকে দেখিয়ে বলেন, এই ছবির সঙ্গে আপনার অদ্ভুত মিল আছে, একটু আধটু অমিল যেটা আছে সেটা মেক-আপ করে পার্টিতে যেতে বলেন।
হ্যাঁ ঠিকই রোজমেরির ফটোর সঙ্গে এই তরুণীর অদ্ভুত একটা মিল আছে। কেম্প মনে মনে ভাবলো।
-কিন্তু আপনি গতকাল রাতে ঐ পার্টিতে এলেন না কেন?
–গতকাল রাত আটটার সময় মিঃ বারটন বা অন্য কেউ আমাকে ফোন করে জানিয়েছিল, পার্টি বাতিল করা হয়েছে। পরের দিন আমাকে খবর দেওয়া হবে। অথচ আজ সকালেই কাগজ দেখে চমকে উঠলাম।
মিস ওয়েস্ট বিদায় নিলো।
এবার সার্জেন্ট প্রশ্ন করলো–কে ওঁকে পার্টিতে আসতে বারণ করেছিলো বলে আপনার মনে হয়?
–সেটা কোনো পুরুষের কণ্ঠস্বর?
তা মনে হয় না। তবে ফোনে দ্রুত কথা বললে গলার স্বর চেনা দুষ্কর হয়ে ওঠে।
.
৩.৯
দ্বিধা, দ্বন্দ্ব ও সন্দেহ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে স্টিফেন ফ্যারাডে চীফ ইনসপেক্টর কেম্পের ঘরে এসে ঢুকলো। তার পাশে বসে আছে একজন ইউনিফর্ম পরা লোক, যার হাতে প্যাড আর পেনসিল।
মিঃ ফ্যারাডে, আজ আপনাকে ডেকেছি আপনার জবানবন্দী নেওয়ার জন্য, তারপর ওটা আপনি সই করে দেবেন। আপনি মনে করলে আপনার সলিসিটারের সামনেও দিতে পারেন।
–আমি বুঝতে পারছি না, আমার নতুন করে জবানবন্দী নেওয়ার কি আছে।
-হ্যাঁ, এর আগে যেটা নিয়েছিলাম সেটা একটা প্রাথমিক মামুলি আলোচনা মাত্র। তাছাড়া মিঃ ফ্যারাডে, এ কেসের ব্যাপারে আপনারও কিছু জানার থাকতে পারে।
এবার টাইপ করা একটি চিঠির নকল কেম্প তার হাতে দিয়ে বলে-পড়ে দেখুন। মিসেস বারটনের পোশাকের মধ্যে থেকে এই চিঠি পাওয়া যায়। মিস আইরিস মারলের কাছ থেকে চিঠিটা আমরা পাই। আপনি নিশ্চয়ই এবার অস্বীকার করবেন না, মিসেস রোজমেরির সঙ্গে আপনার কোনো ঘনিষ্ঠতা ছিলো না।
চিঠিটার ওপর চোখ রাখে স্টিফেন।
-এটা যে আমাকে লেখা হয়েছে তার কোনো উল্লেখ নেই। প্রতিবাদ করে ওঠে স্টিফেন।
–আর্লস কোর্টের ২১, ম্যালাড ম্যানসনের জন্য আপনি একসময় ভাড়া গুণে যেতেন তাই নয় কি?
তার মানে আপনি বলতে চাইছেন, প্রথমে মিসেস বারটনের সঙ্গে প্রেম করি এবং পরে তাকে খুন করি। কিন্তু পুলিশের রিপোর্টে, এটি আত্মহত্যা হিসাবে অভিযুক্ত হয়েছে।
–কিন্তু মিঃ বারটন সেটা মেনে নেননি। তাই তিনি নিজেই তদন্ত শুরু করে দিয়েছিলেন।
এবার কেম্প অন্য প্রশ্ন করলো–আচ্ছা মিঃ ফ্যারাডে, আপনার স্ত্রী কি এসব ব্যাপার জানতেন?
-না, নিশ্চয়ই না।
–আপনি কি কখনো সায়ানাইড ব্যবহার করতেন? মানে ফটোগ্রাফির কাজে লাগানোর জন্য?
-না, একেবারেই নয়। কারণ ফটোগ্রাফি সম্পর্কে আমার মোটেই ধারণা নেই।
তখনকার মতো স্টিফেন ফ্যারাডেকে বিদায় দিলো কেম্প।
কেম্প এবার তার সহকারীর উদ্দেশ্যে বলে-কর্নেল রেস যেভাবে এ কেসের ব্যাপারে এগোচ্ছেন, তার অনুমান যদি ঠিক হয় তাহলে ফ্যারাডে দম্পতিকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যেতে পারে।