আইরিস ঠোঁটে সূক্ষ্ম হাসি টেনে বললো, আমার ধারণা, আপনারা বোধহয় এ্যানথনি ব্রাউনকে নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
–হ্যাঁ, লুসিলা এবার জবাব দিলেন, তার সম্বন্ধে আমরা কিছুই জানি না এই কথাই আমি বলছিলাম।
আমি তাকে খুব শীগগির বিয়ে করতে যচ্ছি, অতএব পরে অনেক কিছু জানার সুযোগ পাবো।
-ওঃ আইরিস, তোমার কি হয়েছে বলো তো? এখনও জর্জের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ হয়নি। তুমি বারবার এ কঠিন কথা বলছো কেন?
আমি দুঃখিত। ক্লান্ত স্বরে আইরিস বলে।
এ প্রসঙ্গ চাপা দেওয়ার জন্য কর্নেল রেস বলে উঠলো–মিস মারলে, আপনার সঙ্গে কিছু কথা ছিলো আমার।
আইরিস অবাক চোখে তাকালো তার দিকে। তারপর বললো–আসুন।
একটা ছোট ঘরে তারা এসে বসলো।
কয়েক মুহূর্ত রেসের দিকে তাকিয়ে থেকে আইরিস বললোগতকাল আমাদের পার্টিতে আপনি এলেন না কেন। জর্জ আপনাকে আশা করেছিল।
-না, আমি জানি, জর্জ আমাকে আশা করতে পারে না। কারণ তিনি বেশ ভালো ভাবেই জানতেন, আমি আসছি না।
-তাহলে ঐ খালি চেয়ারটা? ওটা কার জন্য নির্দিষ্ট করা ছিল কর্নেল রেস?
–আমার জন্য নয় এটা বলতে পারি।
–তাহলে কি ঐ খালি চেয়ারটা রোজমেরির জন্য নির্দিষ্ট ছিল? হ্যাঁ, রোজমেরি।
আইরিস কথা বলতে বলতে জোরে জোরে শ্বাস নেয়–ব্যাপারটা পরিষ্কার হওয়া দরকার। ঐ চিঠিগুলোই জর্জের মনে বিশ্বাস এনে দিয়েছিল যে রোজমেরি আত্মহত্যা করেনি। সেইজন্য সে গতকাল রাতে পার্টির ব্যবস্থা করেছিল।
…আমার কি মনে হয় জানেন? আমার মনে হয় রোজমেরি আমাকে কিছু বলতে চায়। আমার যতদূর মনে হয়, কতকাল জর্জ রোজমেরির স্বাস্থ্য পান করেছিল। তারপর সে মারা যায়। খুব সম্ভব রোজমেরি এসে তাকে নিয়ে যায়।
কিন্তু মৃত ব্যক্তির আত্মা শ্যাম্পেনের গ্লাসে সায়ানাইড বিষ মেশাতে পারে না মিস মারলে।
–জর্জ খুন হয়েছে। পুলিশের ধারণা এইরকম। কারণ অন্য কিছু ভাবা যায় না। কিন্তু রোজমেরি খুন হয়নি। সেই কারণেই এটা অবান্তর। রোজমেরি যে আত্মহত্যা করেছিলেন, তার স্বপক্ষে প্রমাণ আছে যথেষ্ট। আমি আসছি।
আইরিস ঘর থেকে দ্রুত বেরিয়ে গেল। একটু পরেই ফিরে এসে কর্নেলের হাতে একটা ভাঁজ করা চিঠি দিলো।
-এটা পড়লেই সব বুঝতে পারবেন।
দুবার চিঠিটা পড়লো কর্নেল, প্রিয়তম লিওপার্ড।
চিঠিটা ফেরত দিয়ে রেস বললো-কার উদ্দেশ্যে চিঠিটা লিখেছিলেন আপনি জানেন?
স্টিফেন ফ্যারাডেকে। রোজমেরি তাকে ভালোবাসতো। কিন্তু স্টিফেন তার সঙ্গে নিষ্ঠুরের মতো বিশ্বাসঘাতকতা করে। তাই মনে হয় সেদিন সবার সামনে সে তার নিজের জীবনকে নষ্ট করে দেয়। তার একটা পুরোনো ড্রেসিং গাউনের পকেট থেকে প্রায় ছমাস আগের চিঠিটা পেয়েছিলাম। জর্জকে জানাতে সাহস হয়নি। কারণ জর্জের বিশ্বাস ছিলো, রোজমেরি জীবনের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত তাকে ভালোবেসে গিয়েছিল। তাই তো আমি তার বিশ্বাসে ফাটল ধরাতে চাইনি। তবে আপনি জর্জের বন্ধু, চীফ ইনসপেক্টর কেম্প আপনার বন্ধু। আপনাদের ব্যাপারটা জানানোর জন্যই চিঠিটা দেখালাম।
–এটা একটা প্রমাণপত্র বুঝলেন? চিঠিটা আমাকে দিলে ভালো হয়।
চিঠিটা কর্নেলের হাতে তুলে দিলো আইরিস।
.
৩.৭
কর্নেল রেসকে সাদর অভ্যর্থনা জানালো মেরি ব্রিজ ট্যালবট।
প্রিয় বন্ধু, কি খবর তোমার? সেই যে এলাহাবাদ থেকে পালালে আর দেখা পেলাম না। নিশ্চয়ই কোনো কারণে আবার আবির্ভূত হয়েছে।
রেস হাসলো, বললো-যে পরিচারিকাটি আমাকে তোমার কাছে দিয়ে গেল সে-ই বেটি আর্কডেল?
-হ্যাঁ, তবে বলো না যেন ও একজন গুপ্তচর কিংবা রাজনৈতিক—
না না, সেরকম কিছু নয়।
এমন সময় হুইস্কির ট্রে হাতে বেটি আর্কডেল ঘরে এসে ঢুকলো, মিসেস ব্রিজ ট্যালবট তাকে বললো, তোমাকে কর্নেল রেস কিছু জিজ্ঞাসা করতে চায়। ঠিক ঠিক উত্তর দিও।
সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
–তুমি তো মিঃ জর্জ বারটনের বাড়িতে কাজ করতে। আজকের কাগজটা পড়েছো?
-হ্যাঁ, পড়েছি। কি রকম আশ্চর্য ব্যাপার দেখুন স্বামী-স্ত্রী দুজনেই একই জায়গায় মারা যান। আমি মিসেস বারটনের মৃত্যুর পর সেখান থেকে চলে আসি। তবে সত্যি বলছি স্যার, মিসেস বারটনের আত্মহত্যার কথা আমি ভাবতে পারি না।
-কেন, একথা বলছো? তুমি এমন কোনো খবর জানো নিশ্চয়ই যেটা আমাদের কাজে হয়তো খুব জরুরী হতে পারে।
বেটি একটু ইতস্ততঃ করে বললো–এরকম ধারণা হওয়ার পেছনে একটা কারণ আছে। সেদিন মিসেস বারটনের ঘরের দরজা খোলাই ছিল। আমি তার ঘরের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম। এ্যানথনি ব্রাউন, যেটা তার আসল নাম নয়, তার সঙ্গে তিনি তখন কথা বলছিলেন। লোকটির যেমন ভদ্র চেহারা তেমনি নম্র কথাবার্তা। সে নিচু গলায় মিসেস বারটনকে কি যেন বললো। তারপর হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে একটা বিশ্রী কথা বললো যেটা তার মুখ থেকে আশা করা যায় না। তার কথামতো কাজ না করলে মিসেস বারটনকে খতম করে দেবে। পরক্ষণেই সিঁড়ি দিয়ে মিস আইরিসকে আসতে দেখে আমি সেখান থেকে চলে যাই। এই প্রথম আপনাকে আমি কথাটা বললাম।
তুমি কি লোকটির আসল নাম বলতে শুনেছিলে?
–ব্রাউনকে বলতে শুনেছিলাম, টনির কথাও ভুলে যাও। টনি কিন্তু সম্পূর্ণ নামটা বলতে পারবে না। চেরী জ্যাম প্রস্তুতকারকরা বলতে পারবে।
-ঠিক আছে। মনে পড়লে আমাকে খবর দিয়ো। একটা ঠিকানা লেখা কার্ড এবং এক পাউন্ডের একটা নোট রেস তার হাতে তুলে দিলো।