এই চিঠি তিনি পাঠাননি। তাহলে কোন্ চিঠি রোজমেরি পাঠিয়েছিলেন? শেষ পর্যন্ত ওরা কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?
কে এই লিওপার্ড? তিনিও নিশ্চয়ই রোজমেরিকে খুব ভালোবাসতেন। হয়তো তিনি শেষ পর্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। এই ভালো লাগা-ভালোবাসার জের টানতে আর চাননি তাই তিনি সব সম্পর্কের সমাপ্তি চেয়েছিলেন।
অথচ রোজমেরি? তিনি তাদের ভালোবাসাটাকে ব্যর্থ হতে দিতে চাননি। তাই তিনি স্থির করে ফেলেছিলেন
আইরিস কেঁপে উঠলো।
তবে তার ধারণা ছিলো অন্ধ। নতুবা তার দিদির জীবনে এতবড় পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছিল, তিনি এক বিন্দুও আন্দাজ করতে পারেননি।
কিন্তু কে এই ভদ্রলোক?
আইরিস স্মৃতি রোমন্থন করতে থাকেন। কত পুরুষ তো রোজমেরির কাছে আসতো, গল্প করতো, ফোন করতো। তাদের মধ্যে কি এই প্রতারক ছদ্মবেশে লুকিয়ে ছিল? কে সে?
এদের মধ্যে স্টিফেন ফ্যারাডেকে মনে পড়ে আইরিসের। ওঁর মধ্যে রোজমেরি কি এমন দেখলেন। যুবক বয়েস। উঠতি রাজনীতিবিদ। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশা রাখে। এটাকেই কি রোজমেরি বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলো? তবে লোকে বলে স্টিফেনের স্ত্রী ওকে ভীষণ ভালোবাসে। শোনা যায় বাড়ির প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও মেয়েটিকে স্টিফেন বিয়ে করে, তার রাজনৈতিক জীবন মেয়েটির একান্ত কাম্য ছিল বলে। একটি মেয়ে যদি স্টিফেনের মধ্যে ভালোবাসার গন্ধ পেয়ে থাকে তাহলে অন্য মেয়ের পক্ষে তাকে ভালোবাসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। হ্যাঁ সেই লোক স্টিফেন ফ্যারাডেই বটে।
তবে স্টিফেন যদি না হয় তবে এ্যানথনি ব্রাউন তো হবেই। সে ছিল রোজমেরির অনুগত। ঠিক যেন চাকর। হুকুম তামিল করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করে। লোকটা রসিকপ্রিয়। কিন্তু রোজমেরির কাছে নিজেকে এতো খেলো করে ফেলেছিল যে মনে হয় না তার মধ্যে কোনো গভীরতা আছে।
রোজমেরির মৃত্যুর পর তাকে আর কেউ দেখতে পায়নি। মনে হয় ভদ্রলোক আমেরিকান নতুবা কানাডিয়ান ছিলেন।
সে ছিল রোজমেরির বন্ধু। তাই তার মৃত্যুর পর ব্রাউনের আসা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রয়োজন তো নেই।
তখনও হাতের মধ্য চিঠিটা ছিলো। আইরিস সেটা আবার ভাজ করে দাঁড়িয়ে রইলেন হাতে নিয়ে। এটা এবার কি করবেন?
পরক্ষণে মনে হলো, চিঠিটা পরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। প্রমাণ হিসাবে কাজে লাগতে পারে। তাই তিনি গহনার বাক্সে সেটা রেখে দিলেন।
.
তারপর?
আইরিস আবার তার স্মৃতির অতলে তলিয়ে গেলেন।
আগের দিন রাতে সেই বিস্ময়কর সাক্ষাৎকারের রহস্যটা একটু একটু করে স্মৃতির পর্দায় পরিষ্কার হয়ে ফুটে উঠেছে। ঠিক তখনই এ্যানথনি ব্রাউনের আবির্ভাব ঘটলো।
নভেম্বরে মারা যান রোজমেরি, পরের মে মাসে লুসিল ড্রেকের তত্ত্বাবধানে তিনি তার সামাজিক জীবন শুরু করেন। দিনের পর দিন পাটি নাচ-গানে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়লেন।
জুনের শেষে এক অতি নীরস নাচের আসরে আইরিসের কানে হঠাৎ ভেসে এলো একটা পুরুষ কণ্ঠস্বর।
-আপনিই কি আইরিস মারলে?
আইরিস ঘুরে তাকলেন, সামনে দাঁড়িয়ে এ্যানথনি, মুখে তার হাসির ঝিলিক।
সে আবার বললো, আপনি যে আমাকে চিনতে পারবেন সেটা অশা করিনি।
–হ্যাঁ, আপনাকে আমার মনে আছে। সম্ভবত রোজমেরির জন্মদিনের পর থেকে আর
আইরিস আর শেষ করলেন না কথাটা। তার মুখের রঙ ফ্যাকাসে হয়ে উঠলো। কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে তার দিকে তাকালেন।
এ্যানথনি অপ্রস্তুত হলেন। তিনি ক্ষমা চাইলেন–আমি অত্যন্ত দুঃখিত। কথাটা আপনাকে মনে করিয়ে দিয়ে, অত্যন্ত নিষ্ঠুরের মতো ব্যবহার করেছি।
একটু থেমে আবার বললো, আসুন আমরা ওসব ভুলে একটু নাচ করি।
এ্যানথনির কথায় আইরিস রাজী হয়ে গেলেন। এ্যানথনির বাহুপাশে নিজেকে ধরা দিলেন।
এ কি সেই লোক, যে রোজমেরির বন্ধু ছিল। সেই চিঠিটা এর উদ্দেশ্যেই কি রোজমেরি লিখেছিলেন? তবে কি এর ছদ্মনাম লিওপার্ড? আইরিস বুকের মধ্যে একটা যন্ত্রণা অনুভব করলো।
-এতদিন আপনি কোথায় ছিলেন? আইরিস লোকটির দিকে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলেন।
মুহূর্তের মধ্যে নাচ থেমে গেল। আইরিসের থেকে একটু দুরে সরে গেল সে। তার মুখের হাসি নিমেষে উধাও হয়ে গেল।
-ব্যাবসা সংক্রান্ত কাজে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল।
–তাহলে আবার ফিরে এলেন কেন? আইরিস প্রশ্ন করলো।
এবার সে হেসে বললো–তোমাকে দেখার জন্য আমি আবার ফিরে এসেছি, আইরিস মারলে।
এ্যানথনি তাকে কাছে টেনে নিলো। নাচের তালে তালে আইরিসের সঙ্গে সে ছন্দ মিলিয়ে নাচে। এ্যানথনির স্পর্শে তার দেহ মনে শিহরণ জাগছে কেন?
এরপর থকে এ্যানথনি সপ্তাহে অন্তত একবার তার সঙ্গে দেখা করতোই। যখন যেখানে ভালো লাগতো সেখানে ওরা পরস্পরের সঙ্গে মিলতো, কিন্তু এ্যানথনি কখনো এলভাস্টন স্কোয়ারে আসতো না। কারণ একদিন আইরিস তাকে ঐ বাড়িতে আসার নিমন্ত্রণ জানাল। কিন্তু এ্যানথনি সেটা অগ্রাহ্য করে। তখনি তার মনে হলো, কেন, কেন এই প্রত্যাখ্যান? তবে কি রোজমেরি আর সে
একদিন আইরিসকে চমকে দিয়ে জর্জ বারটন বললেন-তুমি কি এ্যানথনি ব্রাউনকে জানো? সে কি রোজমেরির বন্ধু ছিল? জর্জের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো।
আইরিস গম্ভীর গলায় বললেন–ছিলো বৈ কি। কিন্তু সে তো আজ অতীত। পরক্ষণেই নিজেকে সংযত করে বললেন, একথা মনে করিয়ে দেওয়ায় আমি দুঃখিত।