-হ্যাঁ, আপনার অনুমান ঠিক, তবে জর্জ এ ব্যাপারে আপনাকে সবকিছু খুলে জানায়নি বা যে কোনো কারণেই হোক ব্যাপারটা আপনার কাছে গোপন রেখেছিলেন। কারণ তার বিশ্বাস ছিলো, তার স্ত্রী খুন হয়েছেন।
–কেন, আপনি জানেন না, জর্জ কতগুলি বেনামি চিঠি পেয়েছিলেন?
–না, এ সবের কিছুই জানি না।
রেস ওর দিকে সরাসরি তাকিয়ে বললো, আপনি কি এখনও বলবেন এটা খুন নয়, আত্মহত্যা? ওঁরা দুজনেই আত্মহত্যা করেছেন?
রুথ ভুরু কুঁচকে বলে, এছাড়া কি আর ভাবতে পারি? স্বাভাবিক ভাবে এটাই তো মনে আসে।
একটু চুপ করে থেকে রুথ বলতে থাকে, তবে মিসেস বারটন ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে ওঠার পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। দুর্ঘটনার দিন তার মাথার যন্ত্রণায় তিনি খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন, আমি তখন ক্লোক রুমের বাইরে ছিলাম। লেডি আলেকজান্ডারকে তিনি মাথার যন্ত্রণার কথা বলছিলেন। মিসেস ফ্যারাডে হাত ব্যাগ থেকে একটা ট্যাবলেট বের করে মিসেস বারটনকে দেন।
কর্নেল রেস নির্বাক হয়ে শুনতে থাকে–তিনি সেটা দিলেন?
–হ্যাঁ দিলেন বৈকি।
তাহলে এ কাজ সান্দ্রার। টেবিলের নিচে হাত ঢুকিয়ে মিসেস বারটনের গ্লাসের নাগাল পাওয়া তার পক্ষে কষ্টকর ছিলো না। তাই সে বিশেষ ট্যাবলেট ব্যবহার করে, পরে যেটা মিসেস বারটন তার শ্যাম্পেনের গ্লাসে ফেলে দিয়েছিলেন। অবশ্য এ সবই অনুমান হতে পারে।
-ও হ্যাঁ, রুথ বলে ওঠে, মনে পড়েছে, কেন তিনি চিঠিগুলোর কথা আমাদের বলেননি বা ফ্যারাডেদের বাড়ির কাছে বাড়ি কিনেছিলেন কেন? আসলে তিনি কাউকে বিশ্বাস করতেন না। তার ধারণা ছিল আমাদের মধ্যে কেউ একজন তার স্ত্রীর হত্যাকারী।
-কেন, আপনার দিক থেকে কোনো কারণ আছে রোজমেরিকে খুন করার ব্যাপারে?
এরকম কঠিন একটা প্রশ্নের সামনে পড়ে রুথ একটু ঘাবড়ে গেল। পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, সে তো আপনিই ভালো জানেন। জর্জকে আমি ভালোবাসতাম। তিনিও আমাকে ভালোবাসতেন তবে আমার মতো নয়। রোজমেরির আগে আমি ওঁকে ভালোবাসি। আমার মনে হতো, আমি ওঁর আদর্শ স্ত্রী হওয়ার পক্ষে উপযুক্ত। কিন্তু তিনি রোজমেরিকে ভীষণ ভালোবাসতেন, তবু তিনি অসুখী ছিলেন।
..সবাই বলতো, রোজমেরি আকর্ষণীয়, সুন্দরী। কিন্তু আমি তাকে পছন্দ করতাম না। তার মৃত্যুর খবরটা আমাকে দুঃখ দিয়েছিলো বটে তবে আমার মন দুঃখে ভরে যায়নি। তাই মনে হয় ওঁর আকস্মিক মৃত্যুতে আমি খুশী হয়েছিলাম।
–আচ্ছা মিস লেসিং, এমন তো হতে পারে, বাইরের কেউ গোপনে জর্জের গ্লাসে সায়ানাইড মিশিয়ে সরে পড়েছিল। গতকাল রাতের ঘটনা মনে করার চেষ্টা করুন, মিস লেসিং।
হঠাৎ রুথের মুখের রঙ পাল্টে গেল। কেমন কাঁপা কাঁপা গলায় বললোনা, কিছুই মনে পড়ছে না।
জর্জ কি তবে জানতে পেরেছিলেন কে ঐ চিঠি পাঠিয়েছিল? তার উদ্দেশ্য কি ছিল? তাই কি জর্জ খুনীকে ধরার জন্য গতকাল ফাঁদ পেতেছিলেন? আর সে জন্যই কি রুথ তার মুখ চিরজীবনের মতো বন্ধ করে দিলো?
সঙ্গে সঙ্গে রেস একথাও ভাবে, না রুথ ভয় পাওয়ার মতো মেয়ে নয়। জর্জের থেকে সে অনেক বেশি বুদ্ধি ধরে। প্রয়োজন হলে সে অনায়াসে সেই ফাঁদ এড়িয়ে যেতে পারতো?
অতএব রুথের নাম সন্দেহের তালিকা থেকে আপাততঃ বাদ দেওয়া যেতে পারে।
.
৩.৬
কর্নেল রেসকে দেখে লুসিলা ড্রেক চোখের জলে রুমাল ভিজিয়ে দিলেন। জর্জ বারটন ছিলেন বাড়ির কর্তা। তার মৃত্যুর পর বাড়িতে দায়িত্বশীল ব্যক্তি বলতে আর কেউ নেই। দুঃখ হওয়াই স্বাভাবিক?
মিসেস ড্রেক চেয়েছিলেন এই গ্রীষ্মে আইরিস যেন জর্জের দেখাশুনা করার ভার নেয়। কিন্তু সে নিজেই যেন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল এ বাড়িতে, তার রক্তহীন সাদা মুখ দেখে মনে হয় সব সময় যেন সে ভয়ে সিটিয়ে আছে।
এরপরে প্রায় পনেরো মিনিট ধরে তিনি তাঁর একমাত্র পুত্র ভিক্টর ড্রেকের গুণকীর্তন শোনালেন।
তারপ তিনি ফিরে এলেন অন্য প্রসঙ্গে। রোজমেরির মৃত্যু এবং তার উইলে শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করে যাওয়াটা বেশি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার কাছে। অবশ্য টাকাটাই সব নয়। বেচারি রোজমেরির সেই মর্মান্তিক মৃত্যুর স্মৃতি আজও কেউ ভুলতে পারেনি। এমন কি আইরিসের ব্যাপারেও তিনি চিন্তিত।
রেস তার দিকে কৌতূহলী দৃটিতে তাকায়।
-রোজমেরির বিরাট সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী যে আইরিস, এটা এখন সবাই জানে। তাই আমি আইরিসের যুবক বন্ধুদের প্রতি কড়া নজর রাখি ভয়ে ভয়ে। অথচ তাদের বাড়িতে আসতে বললে আসবে না, জর্জও আইরিসের ব্যাপারে চিন্তিত ছিলো। তাই তো আইরিসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এ্যানথনি ব্রাউনকে ঠিক পছন্দ করতেন না।
এমন সময় দরজায় মদু আওয়াজ হলো।
কর্নেল রেস সেদিকে তাকালো। মিস আইরিস মারলে দাঁড়িয়ে। চোখে মুখে একটা উত্তেজনার ছাপ স্পষ্ট। তার শান্তশিষ্ট চেহারাটা। সেই উত্তেজনাকে কিছুতেই আড়াল করতে পারছে না।
-প্রিয় আইরিস, তুমি এসে গেছো? লুসিলা বললেন, তুমি কর্নেল রেসকে চেনো। ভারী চমৎকার লোক।
আইরিস এগিয়ে এসে রেসের সঙ্গে করমর্দন করে।
–আপনাদের কোনো সাহায্যে যদি লাগতে পারি, সেইজন্যই আমার আসা।
–আপনার মহানুভবতার জন্য ধন্যবাদ। আইরিস বললো, আপনারা কি নিয়ে যেন আলোচনা করছিলেন?
লুসিলা করুণ চোখে তাকালেন। তিনি যে আইরিসের কাছে ব্রাউনের প্রসঙ্গ চাপা দিতে চাইছেন সেটা বুঝতে রেসের দেরি হলো না।