কেম্প এবার ফেরার জন্য উঠে দাঁড়ালো–মিঃ ফ্যারাডে, একসময় আপনি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে ফোন করবেন। আপনাকে জানিয়ে দেবো কখন আমি আবার আপনার সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারবো।
কেম্প বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো, স্টিফেনও জরুরী কাজ আছে বলে সেখান থেকে চলে গেল।
লর্ড ফিডারমিনস্টার কোনো দ্বিধা না করে মেয়েকে প্রশ্ন করলেন, মিসেস বারটনের সঙ্গে স্টিফেনের কি কোনো গোপন সম্পর্ক ছিলো বলে তোমার মনে হয় সান্দ্রা?
সান্দ্রা একই উত্তর দিলো–এ ব্যাপারে সে কিছু জানে না। সেরকম কিছু হলে সে নিশ্চয়ই টের পেতো।
লর্ড ফিডারমিনস্টার কিন্তু কথাটা বিশ্বাস করতে পারলেন না। তিনি এবার স্ত্রীর ঘরে এসে ঢুকলেন। তার সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন।
-তোমার মুখে সব শুনে যা বুঝতে পারছি যে একজন খুনীকে আমরা আমাদের পরিবারে গ্রহণ করেছি। তাই তো? লেডি ফিডারমিনস্টার বললেন।
-জানি না। এই মুহূর্তে এককথায় তার বিরুদ্ধে এ মন্তব্য করতে পারছি না। পুলিশের ধারণা মিসেস বারটনের সঙ্গে স্টিফেনের নিশ্চয়ই কোনো অভেদ সম্পর্ক ছিলো। এর থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে, তার জন্যই মিসেস বারটন আত্মহত্যা করেছে নয়তো সে। সে যাই হোক, মিঃ বারটন দারুণ কঠোর প্রকৃতির লোক। তিনি তার স্ত্রীর কেচ্ছা জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্য আয়োজন করেছিলেন। আমার ধারণা, স্টিফেন স্বাভাবিক কারণেই সেই ব্যবস্থাটা মনে নিতে না পেরে– যাই হোক, অন্যায় যদি সে করেই থাকে, তাহলেও তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের।
দায়িত্ব। তুমি এসব কি বলছো?
–হ্যাঁ, ওদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। যেভাবেই হোক আইনের বেড়াজাল ছিঁড়ে ওদের উদ্ধার করতে হবে। আর সে দায়িত্ব তোমার।
তার মানে তুমি বলতে চাইছো আমার মেয়ে খুনী হলেও আমার ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে তাকে রক্ষা করতে হবে। এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া আমার মান-সম্মান সব মাটিতে মিশে যাবে।
–আর সান্দ্রা গ্রেপ্তার হলে, তার বিচার হলে, তুমি নিশ্চয়ই একজন দামি ব্যারিস্টার হবে।
নিশ্চয়ই, সেটা আলাদা ব্যাপার। তোমার মেয়ে কেন যে সেটা বুঝতে চায় না।
নীরব হলেন লেডি ফিডারমিনস্টার। কি করে বোঝাবেন তিনি, ছেলেমেয়েদের স্বার্থে যে কোনো অপ্রিয় কাজ করতে দ্বিধা হওয়া উচিত নয় কোনো বাবা-মার।
লর্ড ফিডারমিনস্টার বললেন, আমি বিশ্বাস করি না, সান্দ্রা খুন করেছে। স্ত্রীকে আশ্বস্ত করার জন্য বলতে থাকেন, যাই হোক নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ না থাকলে সান্দ্রার বিরুদ্ধে যাতে কোনো অভিযোগ দায়ের না হয় সেদিকটা আমি অবশ্যই দেখবো।
.
৩.৫
কর্নেল রেস যখন অফিসে এসে ঢুকলো তখন রুথ লেসিং একটা বড় ডেস্কের ওপর স্তূপাকারে কাগজের মধ্যে ডুবে ছিলো। পরনে কালো কোট, চোখের কোণে কালো কালি। হাজার চেষ্টাতেও সেটা ঢাকা পড়েনি।
–আপনি এসে ভালো করেছেন, রুথ বলে। আপনার পরিচয় আমি জানি। গতকাল সন্ধ্যায় ডিনার পার্টিতে চেয়ারে বসার পর মিঃ বারটন আপনার কথা বলতে একটু অবাক হয়েছিলাম।
শেষ পর্যন্ত আসবেন তো? কারণ গত বছর রোজমেরির জন্মদিনের পার্টিতেও আপনার আসার কথা ছিলো, কিন্তু আপনি আসেননি।
-কিন্তু আপনি তো এসেছিলেন?
–নিশ্চয়ই। রুথ মনে হয় একটু আঘাত পেলো। তাছাড়া ওটা আমার ডিউটির মধ্যে পড়ে।
–আপনার ওপর জর্জ যে নির্ভরশীল সেটা তার কাছ থেকে আমি শুনেছি।
মেয়েটির ভাবভঙ্গী দেখে রেসের মনে হয়, ও নির্দোষ। অত্যন্ত ঠান্ডা প্রকৃতির মেয়ে।
রুথ ওর দিকে তাকিয়ে বললোহা, আট বছর ধরে ওঁর কাছে কাজ করছি। আপনার সঙ্গে কয়েকটি জরুরী কথা ছিলো। চলুন বাইরে কোথায় মধ্যাহ্ন ভোজন করা যাক। সেসময় কথা বলা যাবে।
রেস্তরাঁর বয়কে খাবার অর্ডার দিয়ে দুজনে বসলো।
–চীফ ইনসপেক্টর কেম্পের সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছে নিশ্চয়ই।
কর্নেল রেস প্রশ্ন করলো।
-হ্যাঁ, গতরাতে দেখা হয়েছে। চতুর এবং অভিজ্ঞ ভদ্রলোক। একটু চুপ করে থেকে রুথ বলে, আপনার কি মনে হয় সত্যিই তিনি খুন হয়েছেন?
–আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, আপনি বোধহয় একটু সংশয়ের মধ্যে আছেন যে এটি খুন না আত্মহত্যা, রেস তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলো, আপনি গতকাল মিঃ বারটনের সঙ্গে সারাক্ষণ ছিলেন। ওঁকে কি স্বাভাবিক বা উত্তেজিত কিংবা চিন্তিত মনে হয়েছিল আপনার?
-বলা মুশকিল। তবে একটু নিশ্চিন্ত দেখেছিলাম।
রুথ ভিক্টর ড্রেকের ব্যাপারটা সবিস্তারে জানালো। তারপর বললো, সেদিন মিসেস ড্রেকের চোখেও জল দেখেছিলাম। কিন্তু মিঃ বারটনকে ওভাবে ভেঙে পড়তে কখনো দেখিনি, তাই আমার মনে হয়েছিল–
-বলুন, কি মনে হয়েছিল–
–গত বছর ভিক্টর ড্রেককে দক্ষিণ-আমেরিকায় পাঠাবার ব্যবস্থা করেছিলেন মিঃ বারটন। এর আগেও অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, মিঃ বারটন রেগে গেছেন, বিরক্ত হয়েছেন, কিন্তু সেদিনের রাগ ছিল অন্যরকম। গত জুন মাসে একটা টেলিগ্রাম আসে, ভিক্টর তিনশো পাউন্ড দাবি করে। অথচ পরের দিনই ডিনারের পার্টির ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। ফলে তিনি বিরক্ত হয়ে ওঠেন। এছাড়া টেলিগ্রামের বিষয়বস্তু এমন বিশ্রী ধরনের ছিলো যে তাকে অত্যন্ত খারাপ দেখাচ্ছিল।
এবার রুথ প্রশ্ন করলো–আপনি কি মনে করেন গতবছর যে পার্টির দিনে মিসেস বারটন আত্মহত্যা করেছিলেন এটা তারই পুনরাবৃত্তি।