সান্দ্রার পরনে গাঢ় লাল রঙের পোশাক। শান্ত মুখের ওপর এসে পড়েছে এক টুকরো রোদ। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে, পবিত্র দেবকন্যা যেন।
ভাবলেশহীন মুখে স্টিফেন ফ্যারাডে তার পাশে বসে আছে। দৃষ্টি স্বাভাবিক তার।
–চীফ ইনসপেক্টর, আপনার কাছে আমি কোনো কিছুই গোপন করতে চাই না। লর্ড ফিডারমিনস্টার বলেন। একই রেস্তরাঁয়, একই পরিবারের দুজন লোক খুন হলো। এর সঙ্গে আমার মেয়ে-জামাই দুবারই জড়িয়ে পড়ে। এই কেস যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয় তার জন্য ওরা আপনাকে সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত।
-ধন্যবাদ লর্ড ফিডারমিনস্টার।
-আর একটা কথা চীফ ইনসপেক্টর। আমার বন্ধু কমিশনারের কাছ থেকে জানতে পারি, সেই প্রৌঢ় লোকটির আকস্মিক মৃত্যু হত্যাকাণ্ডজনিত, আত্মহত্যা নয়। তবে সান্দ্রা, তুমিও তো প্রথমে এটাকে আত্মহত্যা বলেই মনে করেছিলে, তাই না?
গভীর চিন্তায় আচ্ছন্ন ছিলো সান্দ্রা, চিন্তিত কণ্ঠে বলতে থাকে–হ্যাঁ, গত গ্রীষ্মকালের পর থেকে মিঃ বারটনের মধ্যে একটা স্বাভাবিক অস্থিরতা লক্ষ্য করেছিলাম। আমরা তখন ধরে নিই যে তিনি স্ত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুটা ভুলতে পারছেন না। স্ত্রীকে ভীষণ ভালোবাসতেন তিনি। তাই মনে হয় স্ত্রী বিয়োগের ব্যথা ভোলার জন্য তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু একথা মনেই আসে না যে কেউ ওঁকে খুন করেছে।
স্টিফেন ফ্যারাডেও স্ত্রীর কথায় সায় দিলো।
–আপনারা আপনাদের ধারণা নিয়ে থাকুন, মনে মনে উচ্চারণ করলো চীফ ইনসপেক্টর কেম্প। কিন্তু মুখে বললো, লেডি আলেকজান্ডার আমার মনে হয় কয়েকটা ব্যাপার আপনি এখনো জানেন না। মৃত্যুর আগে জর্জ বারটন তার দুই বিশ্বাসী লোকের কাছে দুটি গোপন তথ্য প্রকাশ করে যান। তার স্ত্রী সেদিন রাতে আত্মহত্যা করেননি, তাক কেউ বিষ খাইয়ে খুন করেছে, এটা তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, এটি হলো প্রথম তথ্য। আর দ্বিতীয়টি হলো, গতকাল লুক্সেমবার্গে মিস আইরিস মারলের জন্মদিন উপলক্ষে জর্জ বারটন যে নৈশভোজের ব্যবস্থা করেছিলেন সেটার অন্তরালে ছিলো একটি উদ্দেশ্য সেটি হলো আড়াল থেকে তার স্ত্রীর খুনীকে সনাক্ত করা।
মুহূর্তের মধ্যে ঘরের মধ্যে একা নীরবতা নেমে এলো। তবে একটা কিছু গোপন করার প্রবণতা তাদের মনের মধ্যে অদ্ভুত ভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল, সে ব্যাপারে কেম্প নিশ্চিত।
-কিন্তু মিঃ বারটনের মাথায় এমন একটা উদ্ভট চিন্তা নতুন করে উদয় হলো। স্টিফেন ফ্যারাডে বলে। বিশেষ করে মিসেস বারটন যখন আত্মহত্যা করেছিলেন।
–কিন্তু মিঃ বারটন সেটা মানেন না।
-কেন? লর্ড ফিডারমিনস্টার প্রশ্ন করেন। পুলিশ তো এটাকে আত্মহত্যা ছাড়া কিছু বলেনি। এরকম কোনো সন্দেহের কথা তারা প্রকাশ করেনি।
–কারণ পুলিশের হাতে কোনো প্রমাণ আসেনি, তাই তারা ঐরকম ধারণা করেছিল।
কেম্প দৃষ্টি ঘুরিয়ে এবার সরাসরি প্রশ্ন করে সান্দ্রাকে।
–মিসেস ফ্যারাডে, এক বছরে আপনি কোনো উড়ো চিঠি পেয়েছেন কিনা বলুন তো।
-উড়ো চিঠি? মুহূর্তের মধ্যে সান্দ্রার সুন্দর মুখ পাঁশুটে হয়ে ওঠে। মানে বেনামা চিঠি। না, সেরকম কোনো চিঠি আমি পাইনি।
–বেশ, এবার পরবর্তী প্রশ্নের উত্তর খুব ভেবে দিন। জর্জ বারটনের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি আপনাদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতেন?
–তার মনোভাবে ছিলো বন্ধুসুলভ, তিনি নিজে আমাদের বাড়ির কাছে বাড়ি কেনেন। তাঁর অনুরোধেই আমরা বাড়ি কেনার সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম।
-এবার বলুন, মিসেস বারটনের সঙ্গে আপনার কি সম্পর্ক ছিলো?
–আমার সঙ্গে তেমন কিছু ছিল না। একটু ইতস্ততঃ করে মিসেস ফ্যারাডে বলে, বন্ধুত্বটা ছিল আমার স্বামীর সঙ্গে। অবশ্য আমার স্বামী যেহেতু একজন ভালো রাজনীতিবিদ, এবং রাজনীতির ব্যাপারে মিসেস বারটনের আগ্রহ ছিলো। ঐ একটা জায়গায় ওদের মিল ছিলো।
-আপনি ভীষণ চতুর মহিলা, মনে মনে কেম্প প্রশংসা না করে পারলো না। মুখে বললো, ওঁদের দুজনের সম্পর্ক সম্বন্ধে আপনি কতটা ওয়াকিবহাল ছিলেন জানি না, তবে একটা প্রশ্ন করি, মিঃ বারটন কি আপনাকে কখনো বলেননি, তাঁর স্ত্রী আত্মহত্যা করেননি।
-না, সেই কারণেই আমি বেশ অবাক হচ্ছি।
–আচ্ছা, লেডি আলেকজান্ডার, মিঃ এ্যানথনি ব্রাউন সম্বন্ধে আপনার কি ধারণা?
–তেমন কিছু নয়। ওর সঙ্গে বিশেষ আমার দেখা হয় না।
–মিসেস বারটনের সঙ্গে ওঁর বিশেষ কোনো ঘনিষ্ঠতা ছিলো বলে আপনার মনে হয়?
–আমি ওঁদের সঙ্গে বন্ধুর মতোই মিশতে দেখেছি। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারি না।
স্টিফেন ফ্যারাডের কাছ থেকেও প্রশ্ন করে বিশেষ কোনো সুফল পাওয়া গেল না।
আরো দুএকটা প্রশ্ন করে কেম্প চলে এলো আসল প্রসঙ্গে।
এবার আমরা গতরাতের প্রসঙ্গে ফিরে আসছি। কথাটা বলে কেম্প তিনজনের মুখের ওপর দিয়ে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।
বলা বাহুল্য গতরাত্রের বিয়োগান্তক ঘটনাকে কেন্দ্র করেই কেম্প প্রশ্ন রাখলো পরপর। তাদের মধ্যে কেউই বলতে পারলো না, সেই খালি চেয়ারটা আসলে কার জন্য নির্দিষ্ট করা ছিলো। তবে ফ্যারাডে দম্পতির কথা থেকে জানা যায়, ক্যাবারের পর ঘরের আনোগুলো নেভা মাত্র জর্জ নাকি সেই খালি চেয়ারের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন কিছুক্ষণের জন্য।
তবে বিভিন্নরকম প্রশ্নের মাধ্যমে কেম্প জানতে পেরেছে যে ফেয়ারহেভেনে আইরিসের জন্মদিনের ডিনার পার্টি সফল করার ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য সান্দ্রাকে জর্জ অনুরোধ করে, সে এবং তার স্বামী যেন তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।