চীফ ইনসপেক্টর, আপনার যেমন খুশী প্রশ্ন করতে পারেন। আপনাকে সাহায্য করতে পারলে আমি খুশী হবো।
মাঝের টেবিলের পার্টির লোকেদের গতিবিধি এবং আচরণ কি রকম ছিলো জানতে চাইলে ক্রিস্টিন অস্বাভাবিক ভাবে আগ্রহ প্রকাশ করলো।
–ওদের চোখ-মুখ দেখে আমার মনে হয়েছিল, ওরা যেন কোনো কঠিন ব্যাপারে মুখোমুখি হতে চলেছে। জর্জ বারটনের চেহারায় ছিল সংশয়, দ্বন্দ্ব এবং ভয়ের ছাপ। তার ডান পাশে যে লম্বা চেহারার মহিলাটি বসেছিল তার মুখটা পাথরের মতো কঠিন লাগছিল। তার বাঁ পাশের মেয়েটি যেন রাগে ফুঁসছিল, মনে হয় গভীর কালো চোখের যুবকটির পাশে বসতে না পারার জন্য। তার পাশে যে লম্বা চেহারার যুবকটি বসেছিল, তাকে মনে হচ্ছিল, পেটে ভীষণ যন্ত্রণা সত্ত্বেও তাকে জোর করে খেতে আনা হয়েছে।
…সত্যি কথা বলতে কি তখন আমার মনটা ভালো ছিল না। আমার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে তিনরাত্রি সমানে বাইরে কাটিয়ে ছিলাম। একঘেঁয়ে ক্লান্তিকর লাগছিল। তাছাড়া আমার পুরুষ বন্ধু পেড্রো এমন একজন লোক যার সঙ্গ পাওয়ার জন্য মেক্সিকোর অনেক মেয়েই পাগল। বারবার যদি ওর মুখ থেকে অন্য মেয়ের নাম উচ্চারিত হয় তাহলে কোন মেয়ের মেজাজ ঠিক থাকে না। তাই আমি ওর কথায় কান না দিয়ে খেতে থাকি এবং খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে ঘরের চারদিকে তাকিয়ে দেখছিলাম।
তাহলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানারকম প্রশ্ন করা হলো কিন্তু বিশেষ ফল পাওয়া গেল না।
–তাকে আপনি বলছেন, ওরা যখন নাচতে গিয়েছিল তখন ঐ টেবিলের সামনে কেউ আসেনি, মিঃ বারটনের গ্লাস কেউ স্পর্শ করেনি?
-না, কেউ নয়, অবশ্য একজন ওয়েটার ছাড়া।
–একজন ওয়েটার? কি নাম তার?
–এ্যাপ্রন, বয়স মনে হয় ষোলো-সতেরো হবে। সে হচ্ছে ওয়েটারের মতন, মনে হয় সে ইটালিয়ান, অতিরিক্ত বিনয়ীভাব তার ঐ বানরাকৃতি মুখে।
গিউসেজ বোলমানো তাহলে এই লোকটির কথা বলেছিল। দুজনের বর্ণনা প্রায় মিলে যাচ্ছে।
–ঐ ছেলেটি কি করেছিল?
–টেবিলের নিচে কোনো মহিলার সান্ধ্যভ্রমণের একটি ব্যাগ পড়েছিল। সেটা সে তুলে টেবিলে রেখে দিয়ে চলে যায়।
মিস স্যামন, ব্যাগটি কার বলে আপনার মনে হয়?
একটু থেমে তারপর বললো–সেই কম বয়েসের মেয়েটির হবে। সবুজ জমির ওপর সোনালি কাজ করা ছিলো। আমার পরিষ্কার মনে আছে অন্য দুজন মহিলার ব্যাগের রঙ ছিলো কালো।
–টেবিলের সামনে কে প্রথম ফিরে এসেছিল? ভালো করে ভেবে বলুন।
-সবুজ পোশাক পরা ঐ কিশোরী এবং সেই প্রৌঢ় ভদ্রলোক। তারপর একে একে টেবিলের সামনে এসে যে যার চেয়ারে বসে। তারপর ঐ পোঢ় ভদ্রলোকটি সকলের উদ্দেশ্যে কি যেন বক্তৃতা দিলো। এবং সকলে হাতে গ্লাস তুলে নিলো। তার কয়েক মুহর্ত পরেই সেই দুর্ঘটনা ঘটলো।
মিস স্যামনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কেম্প ও কর্নেল ফিরে এলো।
প্রত্যেকের কাছে একই জবাব পাওয়া গেল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। সেখানে দেখার কিছু ছিল না, তাই তাদের নজরে পড়েনি। কিন্তু জর্জ বারটনের গ্লাস ভর্তি সায়ানাইড বিষ। বিষের তো হাত পা গজাবে না যে নিজে হেঁটে গিয়ে পড়বে। অতএব যে কোনো একজন এই অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এবার তাহলে সেই ওয়েটারের মতন ছেলেটিকে খুঁজে বের করতে হয়। মনে হয়, এর মধ্যে কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে। সেই ছেলিটিই মিঃ বারটনের গ্লাসে সায়ানাইড বিষ ঢেলে দিয়ে থাকবে।
–সেইরকম একটা কিছু ঘটে থাকবে সেটা আমারও বিশ্বাস। তবে তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে জোর গলায় বলতে পারি কেম্প, ওটা যে সায়ানাইডের গুঁড়ো ছিল সেটা সে জানতো না।
–অতএব ধরে নেওয়া যেতে পারে কেউ ওর হাতে ওটা ধরিয়ে দিয়েছিল হজমের ওষুধ বা ব্লাডপ্রেসারের ওষুধ বলে। তাহলে প্রশ্ন হলো কে বা কারা তার হাতে দিয়েছিল? ফ্যারাডে দম্পতিরা হয়তো নয়।
-না, ওদের কথা ভাবা অবান্তর।
-এ্যানথনি ব্রাউনকেও সন্দেহ করা যায় না। তাহলে বাকি রইলো মিঃ বারটনের শ্যালিকা এবং ওর সেক্রেটারি।
যাই হোক, আমি এখন ফিডারমিনস্টার হাউসে যাচ্ছি। তুমি নিশ্চয় মিস মারলের সঙ্গে দেখা করতে যাবে? কেম্প জানতে চায়।
-হ্যাঁ, সেখানেই যাবো। তবে মিস মারলের অনুপস্থিতিতে সেখানে যাবো। সেখানে এমন একজন আছে যে তার অনুপস্থিতিতে অনেক কিছু বলতে পারবে। বলা যায় না, কাজে লাগাতে পারে।
.
৩.৪
জর্জ বারটনের অফিসের উদ্দেশ্যে ট্যাক্সি করে কর্নেল রেস ছুটলো।
ওদিকে ফিডারমিনস্টার হাউসে এসে বেল টিপতে গিয়ে চীফ ইনসপেক্টর কেম্পের মুখ কঠিন হয়ে উঠলো। ব্রিটিশ আইনের নিরপেক্ষতা সম্বন্ধে সে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল আছে। যদি দেখা যায় স্টিফেন এবং আলেকজান্ডার জর্জ বারটনের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত তাহলে মনে হয় না ফিডারমিনস্টার পুলিশ এবং বিচারকদের ওপর তার প্রভাব খাটাতে পারবেন। আর তারা যদি নির্দোষ প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের তদন্তের কাজ খুব সাবধানে করতে হবে নতুবা ওপরওয়ালার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এইসব চিন্তা মনে আসতেই কেম্প আপাততঃ কি করণীয় সেটা ঠিক করে নিলো। পুলিশের লোকদের কথার জালে ফেলে কিভাবে বোকা বানাতে হয় সেটা অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ লর্ড ফিডারমিনস্টার খুব ভালো করেই জানেন।
একজন বাটলার তাকে বাড়ির পেছনে একটা ঘরে নিয়ে এলো। লর্ড ফিডারমিনস্টার এবং তার মেয়ে-জামাইকে সেখানে দেখতে পেলো।