–তাহলে ব্যাপারটা বেশ জটিল হয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু চিঠিগুলো যে লিখেছে সে কি নিজের হাতে লিখতে পারতো না?
-হ্যাঁ, পারতো। কিন্তু এ প্রশ্ন কেন?
–তার উদ্দেশ্য ছিলো আত্মহত্যাকে প্রাথমিক পর্যায়ে খুনের কেস হিসাবে চালিয়ে দেওয়া।
–তাহলে স্টিফেন ফ্যারাডেকে ফাঁসি কাঠে ঝোলানো যায়? এটা প্রথম দিকে ধারণা হয়েছিল। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম, তাকে অভিযুক্ত করার পক্ষে তেমন জোরালো কোনো প্রমাণ আমাদের হাতে নেই।
তা না হয় হলো। সায়ানাইডের কোনো প্যাকেট বা শিশি কি পাওয়া গেছে।
-হ্যাঁ, টেবিলের নিচ থেকে একটা সাদা প্যাকেট পাওয়া গেছে। তার মধ্যে সায়ানাইডের ক্রিস্টাল ছিলো।
–গতকাল রাতে কেউ কিছু লক্ষ্য করেনি।
–আমি গতকাল রাতে প্রত্যেকের সংক্ষিপ্ত জবানবন্দী নিয়েছিলাম। আজ আবার তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে। তবে ঐ রেস্তরাঁয় ওদের দুপাশে যে টেবিল দুটি ছিলো তাদের থেকেও খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেছি। তারা হলো জেরাল্ড টলিংটন, গ্রেনাডায়ার গার্ডস এবং অনারেবল প্যাট্রিসিয়া ব্রি-উডওয়ার্থ। এছাড়া মেক্সিকোর মিঃ পেড্রো মোরেলম এবং মিস ক্রিস্টিন স্যামনের ঠিাকানাও নিয়েছি। অবশ্য এ ব্যাপারে তারা কোনা আলোকপাত করতে পারবে না তবু যদি কিছু পাওয়া যায় এই আশায়।
.
৩.২
গিউসেজ বোলমানো ষোলো বছর ধরে শহরে আছে। মধ্য বয়স্ক লোক, বানরের মতো মুখ। তবে চোখে বুদ্ধির ছাপ। ভালো ইংরাজি বলে।
কেম্প তার কাছে গতকালের রাতের ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে সে বলে, ঐ টেবিলের লোকেদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব ছিল আমার। তাই ঘটনার কথা ভেবে মনে ভীষণ দুঃখ হয়। লোকে বলবে, এই লোকটাই জর্জ বারটনের মদের গ্লাসে বিষ ঢেলে দিয়েছে। জানি, এর পেছনে কোনো সত্যতা নেই, তবু লোকে বলবে। মিঃ গোল্ডস্টেন খুব ভালো লোক। আমাকে বলেছেন কয়েকদিনের জন্য লোকের দৃষ্টির অন্তরালে থাকতে। আমি যে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে সেটা আমার কল্পনার অতীত। সত্যি, এটা আমার দুর্ভাগ্য।
কেম্প তাকে প্রশ্ন করে জানতে পারলো যে চার্লসের সঙ্গে মিঃ বারটন আগে থেকে সব বন্দোবস্ত করে রেখেছিলেন ফরমাসের ব্যাপারে।
–টেবিলের সেই খালি চেয়ারটার সম্বন্ধে তোমার কি ধারণা?
–মিঃ জর্জ বারটন আজ আমাকে বলেছিলেন সন্ধ্যার সময় ঐ আসনে একজন যুবতী মেয়ের আসার কথা আছে।
-যুবতী মেয়ে? কেম্প এবং রেস দুজনে চোখ চাওয়া-চাওয়ি করলো।
-আচ্ছা, তুমি শেষ কখন মিঃ জর্জকে শ্যাম্পেনের গ্লাসে চুমুক দিতে দেখেছিলে বলতে পারো?
বলছি, গিউসেজ একটু ভেবে নিয়ে বললো, মিস আইরিস মারলের জন্মদিনের পার্টি উপলক্ষ্যে তারা শ্যাম্পেন পান করে নাচে যোগ দেন। তারপর ফিরে এসে শ্যাম্পেনে পরিপূর্ণ গ্লাসটি হাতে তুলে নেন। প্রত্যেকের গ্লাস শ্যাম্পেনে ভর্তি ছিল। মিঃ বারটন গ্লাসে চুমুক দেওয়ার এক মিনিটের মধ্যে ঘটে যায় সেই মর্মান্তিক ঘটনা।
-ওরা যখন নাচ করছিল তখন অন্য কেউ টেবিলের সামনে এসেছিলো?
–না। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। গিউসেজ বলতে থাকেন, আমাদের নজর এড়িয়ে তার গ্লাসে বিষ মেশানো অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়, স্যার, আমার ধারণা, মিঃ বারটন নিজেই বিষ নিয়ে থাকবেন গ্লাসে। গতবছরে তার স্ত্রীর মৃত্যুর আঘাত ভুলতে তিনি এই ব্যবস্থা নিয়েছিলেন হয়তো।
গিউসেজকে বিদায় জানিয়ে কেম্প ঘড়ির দিকে তাকালো। সাড়ে বারোটায় সময় ফিডার মিনস্টার যাওয়ার কথা। তার আগে টেবিলের লোকেদের মধ্যে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে।
.
৩.৩
আমেরিকান ভদ্রলোক মিঃ মোরেলসকে পাওয়া গেল রিজে। তাঁর স্মরণশক্তি প্রখর। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যায় এমন কিছু তার নজরে পড়েনি, যেটা সন্দেহ করার মতো।
সেখান থেকে বিদায় নিয়ে রেসকে সঙ্গে নিয়ে কেম্প এলো ব্রুক স্ট্রিটে।
জেনারেল লর্ড উডওয়ার্থ স্বনামধন্যা প্যাট্রিসিয়া ব্রিস উডওয়ার্থের পিতা। খিটখিটে মেজাজের ভদ্রলোক এবং স্পষ্টভাষী। এইরকম একটা বিশ্রী ব্যাপারে তার মেয়ের জড়িয়ে পড়ার জন্য তিনি বিরক্তি প্রকাশ করলেন। আজকালকার ছেলেমেয়েরা যেন সব জানে এমন তাদের ভাব। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, তিনি তার সলিসিটারের বিনা পরামর্শে মেয়েকে তাদের প্রশ্নের মুখে ছেড়ে দিতে নারাজ।
এমন সময় দরজা খুলে ভেতরে এসে ঢুকলো মিস প্যাট্রিসিয়া ব্রিস উডওয়ার্থ।
-হ্যালো, আপনারা তো স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড থেকে আসছেন তাই না? আমি আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। গতকালের রাতের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছেন তাই তো? বাবা, তুমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত? কিন্তু ডাক্তারের কথা কি তোমার মনে নেই? আমি বরং ওঁদের নিয়ে আমার ঘরে যাচ্ছি।
প্যাট্রিসিয়ার ঘরে গিয়ে ঢুকলো সকলে। আলোচনা বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে চললো। কিন্তু কথা বলে বিশেষ কিছু পাওয়া গেল না।
-সত্যি ব্যাপারটা ভাবলে অবাক হতে হয়। প্যাট্রিসিয়া বললো। এটা একটা খুন তাই না? কি আশ্চর্য দেখুন, চোখের সামনে খুন হলো, অথচ কিছু টের পেলাম না। ফোন করে মেরিকে জানিয়ে দিয়েছি যে এটা খুনের কেস।
–আপনার কিছু নজরে পড়েনি?
–না, তেমন কিছু মনে হয় না।
এরপর ওরা এলো ক্রিস্টিন স্যামনের কাছে। রীতিমতো সুন্দরী মহিলা। সোনালি চুল এলোমেলো হওয়ায় কপালে উড়ে আসছে। লালচে আঙুল দিয়ে বারে বারে সেগুলো সরিয়ে দিচ্ছিল। ইনসপেক্টর কেম্প বলেছিল, ওর নাকি একটা দারুণ গুণ আছে, সেটা হলো বোবার অভিনয় করতে সে ওস্তাদ।