নিউ স্টকল্যান্ড ইয়ার্ডে আবার মিলিত হলো দুই পুরোনো বন্ধু, কর্নেল রেস এবং চীফ ইনসপেক্টর কেম্প।
-মনে হয় এই তদন্ত আমাদের খ্যাতির উচ্চশিখরে পৌঁছতে সাহায্য করবে, রেস বলে ওঠে।
গম্ভীর হয়ে কেম্প বলে, মনে রেখো এই কেসের সঙ্গে ফিডারমিনিস্টারের সম্পর্ক জড়িত। অতএব সাবধানে পা ফেলতে হবে।
রেস মাথা নাড়ে। লেডি ফ্যারাডের সঙ্গে সে বহুবার কথা বলেছে। ভদ্রমহিলার বক্তৃতা দেওয়ার ভঙ্গিটা দারুণ। জনসাধারণের মনে আঁচড় কেটে যায়। জনসাধারণের কাছে তার একটা আলাদা পরিচিতি আছে। দেশবাসীর জন্য তারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে এমন ভাব। কিন্তু তাদের মনেও যে প্রতিহিংসার স্পৃহা জাগে, সেটা কেউ ভাবতেও পারে, না।
-কেম্প, মনে করো লেডি আলেকজান্ডার যদি খুনী হয়? রেস কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করে। অবশ্য এ ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই। অথবা তার স্বামীও হতে পারে যার রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ফিডারমিনিস্টার পরিবারের সংস্পর্শে এসে।
ওদের মধ্যে যে কেউ অপরাধী হোক না কেন, তাকে চরম শাস্তি পেতেই হবে। তার আগে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে পাবলিক প্রসিকিউটর যাতে আসামীর বিপক্ষে ঠিকমত সওয়াল করতে পারে। একবছর আগে সায়ানাইড বিষক্রিয়ায় জর্জ বারটনের স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন, ঐ একইভাবে জর্জ বারটন মারা যান। সত্যি সত্যি তুমি ঐ সন্ধ্যায় লুক্সেমবার্গে ছিলে?
-হ্যাঁ, বারটন আমাকে ঐ পার্টিতে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু আমি ওর মতো সময় দিতে পারি না। কারণ ও এমন একটা পরিকল্পনা করেছিল খুনীকে ধরার জন্য যেটা তিনি আমাকে পরিষ্কার করে জানাননি। সমস্ত ব্যাপারটা কেমন অস্বস্তিকর মনে হয়েছিল। তাঁকে তোমার কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি যেতে রাজি হননি।
রেস বলে চলে, এসব সত্ত্বেও আমি গতকাল ঐ রেস্তরাঁয় হাজির হয়েছিলাম। ওদের থেকে একটু দূরে আমার টেবিল ছিল। কেউ যেন আমাকে দেখতে না পায়, তাই এই ব্যবস্থা। টেবিলের ধারে ওয়েটারের দল আর বারটনের অতিথিদের দেখেছিলাম। কোনো সন্দেহজনক দৃশ্য বা ঘটনা আমার নজরে পড়েনি।
যাই হোক, তবে ওদের মধ্যে কেউ একজন বা ওয়েটার গিউসেজ বোলমানো হতে পারে। কেম্প বলে, ওর সঙ্গে সকালে দেখা করেছিলাম। ও লুক্সেমবার্গে বারো বছর ধরে চাকরি করছে। স্ত্রী, তিনটি সন্তান নিয়ে তার সংসার। সুনাম আছে যথেষ্ট। তাকে ঠিক সন্দেহ হয় না আমার।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, এখনো পর্যন্ত আমরা আশাব্যঞ্জক কোনো ফল হাতে পাইনি। হতে পারে জর্জ বারটন তাঁর স্ত্রীর খুনীকে অনুমান করতে পেরেছিলেন এবং সেই খুনীকে ধরার জন্য জাল ফেলেছিলেন। কিন্তু খুনী সেটা আগেই টের পেয়ে যায় ফলে আর একটা খুন করে বসে।
তোমার অনুমানটি কিছুটা সত্যি, রেস বলে। তবে আমি লক্ষ্য করেছিলাম, টেবিলের সামনে একটা চেয়ার খালি। মনে হয় আসনটি এমন কোনো একজনের জন্য নির্দিষ্ট করা ছিলো যাকে আশা করা যায় না।
–তাহলে আমাদের সন্দেহের তালিকায় রয়েছে পাঁচজনের নাম। প্রথমে আমাদের মিসেস বারটনের খুনীকে খুঁজে বের করতে হবে। পরবর্তী খুনের জের ধরে বলা যায় রোজমেরিও খুন হয়েছিলেন, আত্মহত্যা করেননি। অবশ্য পুলিশমহল অর্থাৎ আমরা এটাকে আত্মহত্যা বলে ঘোষণা করেছিলাম। তবে এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় দশজনের মধ্যে নয়টি মেয়েই প্রেমঘটিত ব্যাপারে তাদের জীবনে সমাপ্তি টেনেছে। আর পুরুষরা বেশিরভাগ আর্থিক কারণে আত্মহত্যা করে থাকে।
–তাহলে তুমি দেখছি মিসেস বারটনের প্রেমঘটিত ব্যাপারে কিছু জানো। তার সেই প্রেমিকাটি কে? স্টিফেন ফ্যারাডে?
–হ্যাঁ, আর্লস কোর্টের একটি ফ্ল্যাটে তাদের দুজনকে গোপনে মেলামেশা করতে দেখা গেছে। প্রায় ছমাস ধরে এই গোপন প্রেম চলে। মনে হয় তারপরেই তাদের মধ্যে বিরোধ বাঁধে, সম্ভবতঃ ফ্যারাডে মিসেস বারটনের সান্নিধ্যে এসে একসময় ক্লান্তি বোধ করে। যার পরিণতি
-সান্দ্রা ফ্যারাডে কি এসব কিছুই জানতো না? রেস বললো, আমার মনে হয় সে জেনেও চেপে ছিল। কারণ তাহলে তাদের পরিবারের কলঙ্ক বাইরে প্রকাশ হয়ে যাবে।
–তাহলে দুজনকেই এক্ষেত্রে সন্দেহ করা যেতে পারে। কেম্প বলে। আচ্ছা, জর্জের সেক্রেটারি মিস রুথ লেসিং সম্পর্কে তোমার কি ধারণা?
-সে-ও হতে পারে। তবে জর্জের সঙ্গে মেয়েটির খুব ঘনিষ্ঠতা ছিলো বলা যেতে পারে। রুথ প্রায় বারটনের পরিবারের একজন। এবং জর্জ তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। অবশ্য মিসেস বারটনের অন্য আরো ছেলে বন্ধু ছিল।
-তুমি কি তার সম্বন্ধে কিছু জানো? কেম্প বলে।
–বিশেষ কিছু নয়। আমেরিকান নাগরিক, তাই খুবই বেশি খবর জানা মুশকিল। প্রথমে এখানে সে ক্লারিজে থাকতো। পরে লর্ড ডিউসবারির বাড়িতে থাকে। আকর্ষণীয় চেহারা। মেয়েরা ওর সংস্পর্শে আসে সম্ভবতঃ ওর ঐ সুন্দর চেহারার জন্য।
একটুক্ষণ দুজনেই চুপ।
একসময় কে জিজ্ঞেস করে, জর্জ বারটনের পাওয়া চিঠিগুলো তুমি পড়ে দেখেছো?
-হ্যাঁ দেখেছি, গতকাল রাতে ওঁর বাড়িতে তদন্ত করতে গিয়ে চিঠিগুলো টেবিলের ড্রয়ার থেকে পাই। সস্তার কাগজে, সাধারণ কালিতে লেখা, চিঠিগুলো টাইপ করা, মনে হয় বিশেষজ্ঞদের মতে কোনো শিক্ষিত স্বাস্থ্যবান লোকের লেখা। চিঠিগুলোর ওপর জর্জ বারটন, এবং আইরিস মারলের হাতের ছাপ পাওয়া গেছে। এছাড়া আরো কয়েকটি হাতের ছাপ পাওয়া গেছে, সেগুলো সম্ভবত ডাক বিভাগের লোকেদের হবে।