-আপনাকে তো আমি কথা দিয়েছি। জর্জ বলে উঠলেন। আপনি ভাববেন না। আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছি, তখন আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।
জর্জ উঠে দাঁড়ালেন। মিসেস ড্রেকের পিঠে সান্ত্বনার হাত বুলোতে গিয়ে বললেন, আনন্দ করুন। আমি রুথকে এক্ষুনি টেলিগ্রাম করে দিচ্ছি।
জর্জ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, ওর পেছন পেছন আইরিস এলো।
–জর্জ, আজ রাতের পার্টিটা বাতিল করে দেওয়া তোমার উচিত বলে মনে হয় না। লুসিলা পিসি যেমন ভেঙে পড়েছেন, আমার মনে হয়, আমাদের তার বাড়িতে তার সঙ্গে থাকা উচিত।
–কখনোই নয়। রাগে জর্জের মুখ লাল হয়ে উঠলো। ঐ ধাপ্পাবাজটা আমার জীবনই কেন তিক্ততায় ভরিয়ে দেবে? ও আমাকে একের পর এক ব্ল্যাকমেল করে যাবে, আর আমি মুখ বুজে তা মেনে নেব? আমার মতে, আর একটা পেনিও ওকে দেওয়া উচিত নয়।
-কিন্তু লুসিলা পিসি কি রাজী হবে?
-এটা ওঁরই রোকামির ফল। প্রথমেই যদি ভিক্টরকে বলতেন, নিজের পথ নিজে দেখে নিতে তাহলে আজ এই পর্যায়ে ও এসে পৌঁছাতো না। যাক, তুমি ওকে উৎসাহ দাও। আমি এমন একটা ব্যবস্থা করবো যাতে রাতে তোমরা ভালো করে ঘুমোতে পারো।
জর্জ চলে গেলেন, আইরিস ডাইনিং রুমের দিকে পা বাড়াতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো, টেলিফোন বাজচ্ছে।
-হ্যালো কে? আইরিসের হাতাশা ভাবটা একটু একটু করে কেটে গিয়ে মুখ হয়ে উঠলো নির্মেঘ আকাশের মতো। এ্যানথনি কথা বলছে।
-হ্যাঁ, তোমার প্রিয়তম এ্যানথনি। আজ রাতে পার্টিতে যাওয়ার জন্য জর্জ খুব পীড়াপীড়ি করছেন। কি ব্যাপার প্রিয়তমা, তোমার কি হয়েছে বলো তো? দূরভাষে তোমার দীর্ঘশ্বাস আমার কানে ভাসে, একটা চাপা বেদনা তোমার নিঃশাসে। তোমার কি কিছু হয়েছে?
-না না, কিছু হয়নি এ্যানথনি, আচ্ছা, তুমি একটা সত্যি কথা বলবে আমায়? আইরিসের কণ্ঠে কাতর অনুরোধ।
-শুনে তারপর তো উত্তর দেবো।
–তুমি কখনো রোজমেরির প্রেমে পড়েছিলে?
অপরপ্রান্ত কিছুক্ষণের জন্য নীরব থাকে। তারপরেই আইরিসের কানে ভেসে আসে এ্যানথনির হাসির ধ্বনি।
-এই জন্য কি তোমার মন বিষণ্ণ। তোমার কাছে স্বীকার করছি, রোজমেরির সঙ্গে আমার একটু-আধটু প্রেম হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু যেদিন তোমাকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখলাম, তখন তোমাকে দেখে আমার একটা কথাই মনে হয়েছে যে পৃথিবীতে একমাত্র তুমি-ই আছো আমার জন্য। এর থেকে নির্ভেজাল সত্যি কথা আর কিছু হতে পারে না।
–শুনে সুখী হলাম, এ্যানথনি, ধন্যবাদ।
–ঠিক আছে, আজ রাতে তোমার জন্মদিনের পার্টিতে আমি আসছি। তবে ঐ একই জায়গায় তোমার জন্মদিনের পার্টি বসছে এটা মাথায় ঠিক আমার ঢুকছে না। জর্জ কি করতে চলেছে, একমাত্র ঈশ্বর জানেন। যাই হোক, একটা সুন্দর উপহার নিয়ে আমি যাচ্ছি।
ওদিকে অফিসে এসে জর্জ রুথকে ডেকে পাঠালেন। ওর শান্ত হাসি ভরা মুখ জর্জের চিন্তা কিছুটা প্রশমিত করে।
জর্জ তার হাতে টেলিগ্রামটা দিয়ে দেখতে বললেন। রুথ টেলিগ্রামটা হাতে নিয়ে একটু চুপ করে থাকে।
–আচ্ছা, বছরখানেক আগে ওকে জাহাজে করে সেখানে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম না?
রুথ মনে করার চেষ্টা করে।
-হ্যাঁ, মনে পড়েছে। সেদিন ছিল ২৭শে অক্টোবর।
–আশ্চর্য তোমার স্মরণশক্তি।
রুথের স্মরণশক্তি যে প্রখর সেটা নিজে সে ভালো করে জানে। তার মনে আছে একদিন ফোনে রোজমেরিকে ভিক্টর ড্রেকের সঙ্গে অসতর্কভাবে কথা বলতে শুনেছিল। তারপর থেকে রোজমেরির ওপর তার একটা ঘৃণা জন্মেছে।
-কিন্তু তিনশো পাউন্ড। বড্ড বেশি মনে হচ্ছে। রুথ বললো, তার চেয়ে বরং মিঃ অগিঁলভির সঙ্গে আমি যোগাযোগ করবো ভাবছি।
তাদের বুয়েন্স আয়ার্সের এজেন্ট হলেন আলেকজান্ডার অর্গিলভি।
-বেশ, তবে দেরি করো না। ওর মা এখন হিস্টিরিয়া রুগীর মতো করছে। আর রাত কাটানো মুশকিল।
–আমি কি ওঁর সঙ্গে থাকবো?
-না, কঠিন কণ্ঠে জর্জ বললেন। এখনই তার প্রয়োজন হবে না। তবে রুথ, তোমাকে আমার একান্ত প্রয়োজন। রুথের একটা হাত নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে আবেগভরা কণ্ঠে বললেন, তুমি একেবারে স্বার্থপর নও।
অর্গিলভির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার জন্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও রুথ হাত ছাড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
অফিসের কাজ শেষ করে জর্জ এলেন লুক্সেমবার্গে। তাকে দেখে প্রধান ওয়েটার চার্লস মিষ্টি হেসে এগিয়ে এলো। চার্লসের কাছে জেনে নিলেন, আজ রাতের ব্যবস্থা সব ঠিক আছে কিনা। চার্লস জানালো, মেনু পর্যন্ত তৈরি। তারপর দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসার জন্য পা বাড়ালেন।
তাঁকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এসে চালর্স বললো, মিঃ বারটন, আপনি যে আবার আমাদের কাছে ফিরে আসছেন, তাতে আমরা ভীষণ খুশী।
সেই ভয়ঙ্কর হাসিটা জর্জের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো–আমরা অতীতকে ভুলতে চাই, চার্লস।
তিনি ওখান থেকে অফিসে ফিরে এলেন। রুথ তাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলো।
-সকালে মিঃ অগিঁলভির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেছিলাম। প্রায় দশ মিনিট আগে তিনি ফোনে জানান যে, ভিক্টর যদি টাকাটা ফেরত দিয়ে দেয় তাহলে তার নামে আদালতে কোনো অভিযোগ করা হবে না। আর আমাদের পাওনা একশো পঁয়ত্রিশ পাউন্ড।
তার মানে টাকাটা ভিক্টর আত্মসাৎ করতে চাইছে।
–আমারও তাই ধারণা। ভিক্টরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা মিঃ অর্গিলভিকে বলেছি। ঠিক করেছি কি?