পাইপে অগ্নিসংযোগ করতে মন দিলো রেস।
খানিক বাদে বললো-জর্জ, তুমি কিন্তু আমার কাছে কিছু লুকিয়ে যাচ্ছে। তোমার স্ত্রীর সুনাম রাখতে কিংবা সে খুন হলো কি না হলো, সেটা চেপে যেতে তুমি চেষ্টা করতে পারো। কিন্তু তোমাকে সব পরিষ্কার করে বলতে হবে।
জর্জ চুপ করে থাকে।
-তোমার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে রোজমেরির একজন প্রেমিক ছিলো। সে কি স্টিফেন ফ্যারাডে।
–আমি ঠিক জানি না এ ব্যাপারে। ও ছাড়া এ্যানথনি ব্রাউনও হতে পারে।
–ব্রাউন নামটা কেমন শোনা মনে হচ্ছে। তুমি কি ওর সম্বন্ধে কিছু জানো?
-জানি না, ওর ব্যাপারে কেউ বিশেষ কিছু জানে না। তবে আমুদে। আমেরিকান হতে পারে। কিন্তু তার কথাবার্তায় সেটা প্রকাশ পায় না।
বেশ, এবার ধরা যাক, স্টিফেন ফ্যারাডে তোমার স্ত্রীর প্রেমিক ছিলো। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবে আলেকজান্ডার ফ্যারাডের নাম জড়িয়ে পড়ে। কারণ স্বামীকে অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হতে দেখে কোনো নারীর পক্ষে মাথা ঠিক রাখা সম্ভব নয়। পরিণামে রোজমেরিকে সেই নারী খুন করেছে। তাহলে আপাততঃ এই রহস্যময় খুনের সঙ্গে ফ্যারাডে দম্পতি এবং আইরিসের নাম সন্দেহের মধ্যে আনতে পারি। আচ্ছা, রুথ লেসিং সম্পর্কে এবার কি বলল।
-রুথকে এই খুনের সন্দেহের বাইরে রাখা যায় অনায়াসে। জর্জ বলেন, রুথ আমার সব কাজ দেখাশোনা করে। বলতে গেলে ও আমাদের পরিবারের একজন। ওর সবকিছুতেই আমি নির্ভরশীল। জানো রেস, ওর মধ্যে যেরকম সততা, আন্তরিকতা এবং কর্তব্য নিষ্ঠার ভাব আছে, পৃথিবীর কোনো মেয়ের মধ্যে তুমি একসঙ্গে এতগুলো গুণ দেখতে পাবে না।
–জর্জ, আমার ধারণা, রেস বলতে থাকে, তোমার মোটিভও এখানে কাজ করেছে।
–আমি? জর্জ হতবাক।
–হ্যাঁ, ওথেলা আর ডেসডেমোনাকে তোমার মনে পড়ে?
–তোমার বক্তব্য আমি বুঝেছি। কিন্তু রোজমেরি এবং আমার মধ্যে সেরকম সম্পর্ক ছিলো না। ও একটু বেপরোয়া ছিল ঠিকই, কিন্তু আমার যে অনুগত ছিলো না, সেটা ভাবা ভুল, ও আমার প্রিয় ছিলো। তবে রোমান্টিক ছিলো না। তবু সে অঘটন ঘটে যাওয়ার পর আমি ভীষণ ভেঙে পড়ি।
তাছাড়া যদি ধরা যায় আইরিস ওকে খুন করেছে, তাহলে আমি কেন কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বের করবো।
আমি জানি। তুমি যদি সত্যিই ওকে খুন করবে, তাহলে ঐ চিঠিগুলো পুড়িয়ে না ফেলে নিজের কাছে রেখে দেবে কেন? নিশ্চয়ই তুমি এ নিয়ে আর জল ঘোলা করতে না। যাই হোক, এখন ভাবনা হচ্ছে, চিঠিগুলো লিখলো কে?
তবে খুনী যে স্বয়ং লেখেনি, সেটা নিশ্চয় নিশ্চিত। কারণ তুমি যখন বললে রোজমেরির আত্মহত্যা করার পর সবকিছু শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটে গেছে আর যখন সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ হয়েছে রোজমেরি আত্মহত্যা করেছে, তখন মনে হয় না, চিঠিগুলো খুনী লিখেছে? সমস্ত ব্যাপারটা নতুন করে, খুঁচিয়ে তোেলার পেছনে কার স্বার্থ থাকতে পারে।
দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।
একসময় রেস বলে ওঠে–সব কিছু শুনে যা বুঝলাম, তা হলো তর্কের খাতিরে আমরা ধরে নিলাম, রোজমেরি খুন হয়েছিল। তবে সেটা আবার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখতে গেলে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া তোমার স্ত্রী গোপনে যাদের সঙ্গে প্রেম করতেন সেইসব কেচ্ছা প্রকাশ হয়ে পড়বে।
-তাই বলে, তোমার কি ইচ্ছা, একজন খুনী ছাড় পেয়ে যাবে? না, আমি তা হতে দেবো না। আসল সত্যি কি, আমাকে জানতেই হবে।
–বেশ, এই চিঠিগুলি আমি পুলিশের হাতে দিচ্ছি। তারাই চিঠির লেখক বা লেখিকাকে খুঁজে বের করবে। তবে পুলিশ একবার তদন্ত শুরু করলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছাড়বে না।
-আমি কিন্তু পুলিশের দ্বারস্থ হতে চাই না। তাই তো, তোমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। একটা পরিকল্পনা করেছি খুনীর জন্য।
–কি রকম? রেস কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করে।
-ঐরকম একটা পার্টির ব্যবস্থা করেছি লুক্সেমবার্গে। সেদিনকার সব অতিথিরাই সেখান আসবে। আমার ইচ্ছা, তুমিও আমাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করবে।
-কিন্তু তোমার উদ্দেশ্য?
-সেটা একান্ত গোপনীয় ব্যাপার। তোমাকে আমি ভোলা মনে আসার অনুরোধ করেছি। এলে দেখতে পাবে।
কিন্তু বন্ধু, তুমি আমাকে এই সব ঘটনার মধ্যে জড়াচ্ছে ঠিকই। তবে আমাকে এখনো তুমি অন্ধকারে রেখে দিয়েছে।
-সেটার প্রয়োজন আছে।
-তোমার পরিকল্পনা আমি নেনে নিতে পারছি না জর্জ, দুঃখিত। তোমার পার্টিতে আমি যেতে পারবো না। তুমি এই অবাস্তব পরিকল্পনা থেকে বিরত হও।
–কিন্তু এখন পিছিয়ে আসা সম্ভব নয়। অতএব
-দেখো আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে বলছি, এ কাজের পরিণতি ভালো হবে না। দারুণ বিপজ্জনকও হতে পারে। তোমাকে আমি বারবার সাবধান করে দিচ্ছি, এই পরিকল্পনা ত্যাগ করো।
জর্জ বারটন নীরবে মাথা নাড়লেন।
.
২.৫
দোসরা নভেম্বরের সকাল।
বাতাসে কেমন স্যাঁতসেঁতে ভাব। থমথমে হয়ে আছে চারদিকে, মনে হয় যে কোনো সময় ঝড় উঠতে পারে।
আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জর্জ বার বার ঘড়ি দেখছিল, খাবার খেতে খেতে প্লেট ঠেলে সরিয়ে দিয়ে মুখ ভার করে বসে রইলো আইরিস। লুসিলা পিসি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন আর ঘন ঘন রুমালে চোখ মুছছিলেন।
–প্রিয় জর্জ, আমি জানি, এটা একটা জীবন-মরণের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু সে তো কিছুতেই বুঝতে চাইছে না। মিসেস ড্রেক বলতে লাগলো, তুমি যে তদন্তের কথা বললে সেটা সময় লাগবে যথেষ্ট, তার মধ্যে যদি কোনো অঘটন ঘটে যায় তাহলে আমি নিজের কাছে দোষী হয়ে থাকবো আজীবন।