রেস ফিসফিসিয়ে বলে এমন কোনো ঘটনার কথা তুমি জানো, যা ওর মনকে ভেঙে দিতে সাহায্য করেছে। মানে আমি বলতে চাইছি কোনো কিছুর ব্যাপারে ও নিশ্চয়ই অসুখী ছিলো।
–আমি জানি না, মনে হয় একটু দাম্ভিক প্রকৃতির ছিলো। তবে আমি বলবো, সায়ানাইড ব্যবহার করার সম্ভাবনাটা একেবারে নেই বললেই চলে। এটা এমন কোনো জিনিস নয়, যেটা সহজে ব্যবহার করা যায়। এটা সবাই জানে।
–এটা আর একটা দিক। তবে ধরে নেওয়া যাক, রোজমেরি নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু সে চাইবে না নিশ্চয়ই এমন যন্ত্রণাদায়ক কুৎসিত মৃত্যু।
-বুঝলাম, কিন্তু রোজমেরি যে সায়ানাইড কিনেছিল বা পেয়েছিল তার কোনো প্রমাণ আছে।
–না। তবে কিছুদিন ও বন্ধুদের সঙ্গে ছিলো। তারা তখন বোলতার বাসা নিয়ে আসে। তখন হয়তো পটাসিয়াম সায়ানাইড ক্রিস্টাল একটু ব্যবহার করে থাকবে।
এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে অসুবিধা হবে না। একটু থেমে রেস বলতে থাকে–এবার সম্পূর্ণ ব্যাপারটা একবার খতিয়ে দেখা যাক। এক নম্বর হলো, আত্মহত্যা করা কিংবা তার প্রস্তুতির কোনো প্রমাণ আপাততঃ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার এদিকে দেখা যাচ্ছে, খুন করার কোনো প্রমাণ নেই আমাদের হাতে বা পুলিশও খুন হিসাবে সন্দেহ করেনি।
-আমার ধারণা, আমার অবচেতন মনটা এ ব্যাপারে ধীরে ধীরে তৈরি করে নিচ্ছিল নিজেকে। তারপরে এই চিঠি পাওয়ার পর সন্দেহ আরো গাঢ় হয়ে ওঠে।
–বেশ, তোমার কথাই মেনে নিলাম। রেস বললো, কাকে তোমার খুনি বলে মনে হয়, জর্জ।
জর্জের মুখে কুঞ্চনের রেখা ফুটে উঠলো–আমিও নিজের কাছে ঐ একই প্রশ্ন করি। যদি রোজমেরি সত্যিই খুন হয়ে থাকে তাহলে সেদিন রাতে আমাদের নিমন্ত্রিত বন্ধুদের মধ্যে কেউ একজন খুনী হবে। যারা টেবিলের সামনে বসেছিল তাদের মধ্যে কেউ
-কেন ওয়েটারদের মধ্যেও কেউ একাজ করতে পারে।
–লুক্সেমবার্গের প্রধান ওয়েটার চার্লসকে তুমি চেনো নাকি?
–চার্লসকে সবাই চেনে। সে ইচ্ছা করলে যে কোনো ব্যক্তির গ্লাসে মদের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দিতে পারে। এটা তার পক্ষে কোনো অসম্ভব কাজ নয়। এছাড়া আছে গিউসেজ।
-সেদিন পার্টিতে কে কে ছিল?
–এম.পি.স্টিফেন ফ্যারাডে, তার স্ত্রী লেডি আলেকজান্ডার ফ্যারাডে, আমার সেক্রেটারি, রুথ লেসিং, এ্যানথনি ব্রাউন, রোজমেরির ছোট বোন আইরিস আর আমি। সব মিলিয়ে সাতজন ছিলাম। তুমি এলে আটজন হতাম।
-এবার বল, তুমি সেদিন কি ভাবে বসেছিলে?
-সান্দ্রা ফ্যারাডে বসেছিল আমার ডানদিকে, সান্দ্রার পাশে এ্যানথনি ব্রাউন, তার পাশে রোজমেরি, তারপর স্টিফেন ফ্যারাডে। আমার বাঁ পাশে ছিল আইরিস আর রুথ লেসিং।
-তোমার স্ত্রী আগে সন্ধ্যার সময় শ্যাম্পেন পান করেছিল?
-ক্যাবারে শো যখন চলছিল, তখন কয়েক গ্লাস পান করেছিলো। আলো নেভার আগে রোজমেরি টেবিলের সামনে ঝুঁকে পড়ে। হয়তো অস্ফুটে কিছু বলে থাকবে। কিন্তু আমরা সেটা শুনতে পাইনি। ডাক্তার জানায়, ওর মৃত্যুটা নাকি আকস্মিক।
-তাহলে সব দিক থেকে বিচার করে বলা যায়, রোজমেরির গ্লাসে সায়ানাইড মিশিয়ে দেওয়ার সবচেয়ে বেশি সুবিধা ছিলো স্টিফেন ফ্যারাডের। যদি তাই হয়, তাহলে খুনের কারণ কি সেটা জানতে হবে। কেন খুন করবে?
-ওরা দুজনে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলো। জর্জ শ্বাসরুদ্ধ কণ্ঠে বলতে থাকেন, হয়তো এমন হতে পারে রোজমেরি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল, সেই অপমানের প্রতিশোধ স্টিফেন এমন নৃশংস হত্যার মাধ্যমে নিয়েছে।
–এবার দ্বিতীয় সম্ভাবনা হলো, কোনো মহিলা আসামী। তোমাদের সাতজনের মধ্যে চারজন ছিলো মহিলা। তোমরা যখন জোড়ায় জোড়ায় ক্যাবারের সাথে নাচছিলে তখন একজন মহিলা কি করছিলো এবার মনে করে দেখো, কোনো মহিলা একা টেবিলের ধারে বসেছিল।
একটু সময় ভেবে জর্জ বললেন, প্রথমে আইরিস, তবে দুর্ঘটনার আগে রুথকে দেখেছি।
-তোমার স্ত্রী শ্যাম্পেনের গ্লাসে শেষ চুমুক কখন দিয়েছিলো?
ব্রাউনের সঙ্গে রোজমেরি তখন নাচছিল। তখন ওকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। তারপর ও ওর গ্লাসে চুমুক দেয়। এরপরে রোজমেরি আর আমি নাচতে থাকি। রুথের সঙ্গে ফ্যারাডে এবং লেডি আলেকজান্ডারের সঙ্গে ব্রাউন নাচতে থাকে। তখন টেবিলের ধারে আইরিস একা একা বসেছিল।
-তাহলে তোমার স্ত্রীর বোনকেই সন্দেহ করা যায়। রেস বেশ গম্ভীর গলায় বললো, এই মৃত্যুর সঙ্গে আইরিসের কোনো স্বার্থ জড়িয়ে আছে বলে তোমার মনে হয়?
কথাটা শুনে জর্জ রেগে গেলেন। কিন্তু সেটা প্রকাশ না করে বললেন–রেস, আইরিস ছেলেমানুষ। তাছাড়া রোজমেরিকে ও ভালোবাসতো। ও ওর বোনের দারুণ অনুগত ছিলো।
–আমি জানি, তোমার স্ত্রী ধনী ছিলো। ওর টাকা কি তুমি পাবে?
-না, ওর সব টাকা আইরিস পাবে। তার নামে একটা ট্রাস্ট আছে। তারপর জর্জ সবিস্তারে সমস্ত কিছু রেসকে বললো।
আশ্চর্য ব্যাপার। যে কোনো মেয়ে এর ফলে ক্ষুব্ধ হতে পারে। কিন্তু তুমি বলছো ত হয়নি। তবুও তার মোটিভটা ঠিক থেকে যাচ্ছে। সেটা যাচাই করে দেখতে হবে। এছাড়া আর কার মোটিভ থাকতে পারে?
-রোজমেরির কোনো শত্রু ছিল না, আমি নিশ্চিত করে জানি। ফ্যারাডেদের বাড়ির কাছে আমার বাড়ি নেওয়ার একটাই উদ্দেশ্য হলো, প্রত্যেককে প্রশ্ন করে কাউকে সন্দেহের তালিকায় ফেলা যায় কিনা সেটা যাচাই করে দেখতে।