দিদির আচরণে আইরস হতাশ হয়ে পড়লেন। বসার ঘরে আবার এসে ঢুকলেন। টেবিলের ওপর তিনি তার সন্ধানী দৃষ্টি মেলে ধরলেন, প্যাডের ওপর একটা চিঠির ওপর তার দৃষ্টি আটকে গেল। চিঠিতে নিজের নাম দেখে আইরিস চমকে উঠলেন। তবে কি রোজমেরি তাকে চিঠি লিখছিলেন।
চিঠির ওপর ঝুঁকি চোখ রাখলেন তিনি,
প্রিয় আইরিস,
তোমার জন্য আলাদা করে আর উইল করার দরকার নেই। আমি খুব ভালো করেই জানি, আমার সব অর্থ তোমারই হবে। তবে আমার একান্ত যে সব জিনিস সেগুলো আমি কয়েকজনকে দিয়ে যেতে চাই।
চিঠি পড়ে আইরিস পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলেন।
এর মানে কি? তবে কি রোজমেরি বুঝতে পেরেছেন, তার মৃত্যু আসন্ন? কিন্তু সামান্য ফুতে কেউ মারা যায় না, অথচ অনেকটা সুস্থ ও।
বারবার একটা লাইন তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো–আমার সব অর্থ তোমারই হবে।
অবশ্য পল বেনেটের উইলের শর্ত কি ছিল সেটা সঠিক জানেন না আইরিস। তিনি জানতেন কাকা পলের প্রচুর অর্থের একমাত্র উত্তরাধিকারিণী হয়েছেন রোজমেরি। যে প্রশ্ন এতদিন তার মনের মধ্যে গেঁথে ছিল সে উত্তর তো উনি এই চিঠিতেই পেলেন। রোজমেরির মৃত্যুর পর সমস্ত সম্পত্তির মালিক হবেন আইরিস, স্ত্রী বা স্বামীর তো টাকাটা পাওয়া আইনসম্মত উচিত। কিন্তু বোনের কি সে অধিকার আছে? মনে হয় রোজমেরি নিশ্চিত। তাই তিনি লিখেতে পেরেছেন, আমি ভালো করেই জানি যে আমরা সব অর্থ তোমারই হবে।
তবে মাঝে মাঝে আইরিসের মন যে বিদ্রোহ করে ওঠেনি তা নয়। একই মায়ের দুই মেয়ে। অতএব পল কেন তার সমস্ত অর্থ একা বরাজমারিকে দিয়ে যাবেন?
রোজমেরি নিত্য নতুন পোষাক পরে, বেড়াতে যায়, পার্টিতে যায়, বন্ধুদের ভালোবাসা, স্বামী সংসার, তার কিছুর অভাব নেই, অথচ আইরিস?
চিঠিটা তিনি দুভাজ করে টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দিলেন।
সেই অভিশপ্ত জন্মদিনের উৎসবের পর চিঠিটা আবার ড্রয়ার থেকে বের করা হয়। রোজমেরির আত্মহত্যা করার স্বপক্ষে এটা একটা বাড়তি প্রমাণ। দরকারে এই চিঠি প্রমাণ করে দেবে যে দুদিনের ফুতে ভুগে সেরে ওঠা শরীর ও মন নিয়ে রোজমেরি খুশী ছিলেন না, হয়তো তাই তিনি আত্মহত্যার কথা ভেবে থাকবেন।
তদন্তের সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা আর হতাশা প্রকাশ পায়। রোজমেরির চিঠিটা সেই মোটিভটা জোরদার করতে সাহায্য করলো।
রোজমেরির মৃত্যুর স্বপক্ষে তখন অন্য কোনো উদ্দেশ্য দেখাতে পারেননি আইরিস, বা জর্জ বারটন বা অন্য কেউ।
সেদিনের সেই চিলেকোঠায় দুর্ঘটনার কথা ভাবতে গিয়ে আইরিস অবাক হচ্ছেন।
.
রোজমেরির মৃত্যুর ছমাস পরে ঘটলো সেই চিলেকোঠার ঘটনা।
আইরিস তখনো বোনের সংসারে আছে। তিনি একদিন মারলে পরিবারের সলিসিটারের সঙ্গে দেখা করলেন। বয়স্ক ভদ্রলোক, ভদ্র অথচ চোখে শয়তানির ছাপ। তিনি আইরিসকে বোঝালেন যে পল বেনেটের উইলের শর্ত অনুযায়ী প্রথম উত্তরাধিকারী হলেন রোজমেরি। তার মৃত্যুর পর তার সন্তানেরা হবে অর্থের মালিক। আর যদি অপুত্রক হন তাহলে তার বোন আইরিস পাবেন সেই অর্থ। তবে একটা শর্তে, একুশ বছর হলে কিংবা বিবাহ হলেই সেই অর্থের অধিকারিণী হবেন, নতুবা নয়।
রোজমেরির মৃত্যুর পর আইরিসের থাকা নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছিল। জর্জ বারটনের ইচ্ছা ছিল, তার পিসি মিসেস ড্রেকের কাছে আইরিস যেন থাকেন। কিন্তু আইরিস এই প্রস্তাব মেনে নেননি। শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো আইরিস আপাতত জর্জ বারটনের বাড়িতে ছোট বোনের মতো থাকবেন। সাংসারিক বিধি-ব্যবস্থাও শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটে গেল।
অনেকদিন ধরেই আইরিস তার অতি প্রিয় পুরোনো লাল পুলওভারটা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ওটা খুঁজতেই তিনি গিয়ে ঢুকলেন চিলেকোঠার ঘরে। ট্রাঙ্ক ভর্তি পুরোনো পোশাক ঐ ঘরে রাখা ছিল। ট্রাঙ্ক ঘাঁটতে গিয়ে একটি সিল্কের ড্রেসিং গাউন আবিস্কার করলেন যেটা রোজমেরি বহুদিন ব্যবহার করেছেন। রোজমেরির সমস্ত পোশাক পরিচিত আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অথচ এই ড্রেসিং গাউনটা কিভাবে এখানে পড়ে রইলো।
তিনি ট্রাঙ্কে ওটা আবার রাখতে গিয়ে চমকে উঠলেন। পকেটের মধ্যে এটা কি? দ্রুত হাত ঢুকিয়ে দিলেন। বেরিয়ে এলো একটা কাগজের টুকরো। খুলে ধরলেন। রোজমেরির হাতে লেখা একটা চিঠি।
প্রিয়তম লিওপার্ড,
তোমার হয়তো জানা নেই, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি জানো না,…আমরা পরস্পরকে তো ভলোবাসি। আমরা ওকে অপরের জন্য। একথা তোমারও জানা উচিত। যে যার জীবন নিয়ে আমরা বাঁচতে পারি না। আমাদের হৃদয় অভিন্ন। চলো আমরা কোথাও পালিয়ে যাই। আমি তোমায় কথা দিচ্ছি, তোমাকে আমি সুখী করবোই। লিওপার্ড, তোমার হয়তো মনে নেই, তুমি বলেছিলে আমি ছাড়া তোমার জীবন অপূর্ণ। অথচ তুমি লিখেছে, যা কিছু আমাদের মধ্যে হয়েছে সব ভুলে যেতে। সবকিছুর এখানেই সমাপ্তি টানতে। সেটা অসম্ভব, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। লিওপার্ড, সাহসী হও। আমি জর্জকে জানাবো। তবে জন্মদিনের উৎসবের পরে।
আমি জানি, আমি যা করতে যাচ্ছি, তা ঈশ্বরের ইচ্ছায়। তোমাকে আমি ভালোবাসি। তোমাকে আমি কখনোই ছাড়তে পারবো না। ওঃ প্রিয়তম–
পলকহীন চোখে চিঠির দিকে আইরিস তাকিয়ে রইলেন। তার দিদির যে একজন প্রেমিক ছিলেন, তা তিনি জানতেন না? অবশ্য কতটুকুই বা তার সম্পর্কে তিনি জানতেন?