-তোমার সম্পর্কে জর্জের কিছু জানার দরকার। তুমি আমার সঙ্গে চলো। জর্জ এখন বাড়িতে আছেন।
-মনে হয় না উনি এখন বাড়িতে আছেন। কারণ এখানে আসার সময় দেখলাম একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। মিঃ জর্জ তার দিকে এগিয়ে গেলেন। মনে হয় লোকটি কর্নেল রেস।
-হ্যাঁ, ভুলে গিয়েছিলাম আমি, কর্নেল রেস জর্জের পরিচিত। সেদিন রাতের পার্টিতে তার আসার কথা ছিলো, রোজমেরি যখন–
একটা অব্যক্ত যন্ত্রণা আইরিসের কণ্ঠ রোধ করে আসে।
–এ্যানথনি, তুমি কখনো এরকম নৃশংস পরিস্থিতির সামনে পড়েছে। কিন্তু রোজমেরি আত্মহত্যা করেননি। তিনি হয়তো খুন হয়ে থাকবেন। তোমার কি একবারও মনে হয়নি?
–এসব তুমি কি বলছো? তুমি এমন উদ্ভট চিন্তা কি করে করলে? আমার তো বিশ্বাস, রোজমেরি নিশ্চয়ই আত্মহত্যা করেছিল।
আইরিস চুপ করে রইলো।
-ওসব বাজে চিন্তা বাদ দাও প্রিয়তমা। আইরিসকে কাছে টেনে নিলো এ্যানথনি। ওর গালে চুমু দিলো। রোজমেরির কথা সম্পূর্ণ ভুলে যাও। তুমি কেবল আমার কথা ভাবো, আইরিস।
.
২.৪
পাইপ থেকে একরাশ ধোঁয়া ছাড়লো কর্নেল রেস। তারপর কি যেন অনুমান করার জন্য জর্জ বারটনের দিকে তাকালো।
বারটনের কাকা ছিলেন রেসদের প্রতিবেশী। সেই সূত্রে কর্নেলের সঙ্গে জর্জের পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে বয়েসের ফারাক যথেষ্ট। কর্নেলের বয়স এখন ষাটের ওপর। রোদে পোড়া তামাটে গায়ের রঙ, কালো চোখে বুদ্ধিদীপ্ত চাহনি।
জীবনের বেশির ভাগ সময় কর্নেলের কেটেছে বিদেশে। জর্জ মূলতঃ কেতাদুরস্ত শহুরে মানুষ। কখনো সখনো তাদের মধ্যে দেখা হয়েছে। ভদ্রতার খাতিরে পরস্পরের মধ্যে মত বিনিময় করেছে, ছেলেবেলার কথা মনে করেছে। তারপর নীরব থেকেছে।
কর্নেল এই মুহূর্তে জর্জের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে, কেন যুবক জর্জ আজকের এই সাক্ষাতের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছে। জর্জকে সব সময় মনে হয়েছে অত্যন্ত সাবধানী, বাস্তববাদী, যার মধ্যে কল্পনার কোনো স্থান নেই। তার কথাবার্তার মধ্যে কোনো সঙ্গতি নেই। হাবভাবে একটা অদ্ভুত অস্থিরতা প্রকাশ পাচ্ছে। যে বারটন সিগারেট পছন্দ করতো না সে আজ অল্প সময়ের মধ্যে তিনটে সিগারেট ব্যবহার করেছে।
-বলো, যুবক জর্জ, তোমার কি সমস্যা?
–আমি তোমার পরামর্শ ও সাহায্য চাই কর্নেল। তোমার নিশ্চয়ই খেয়াল আছে, আজ থেকে এক বছর আগে আমাদের সঙ্গে এক নৈশভোজে তোমার যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তোমাকে বিদেশে চলে যেতে হয়। ঐ নৈশভোজের আসরে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়।
-খবরটা আমি কাগজে পড়েছিলাম। ঐ অপ্রীতিকর প্রসঙ্গের পুনরাবৃত্তি করার ইচ্ছা ছিল না বলেই তোমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলিনি। আমি তার জন্য দুঃখিত।
-ধরে নেওয়া যেতে পারে, আমার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছিলো?
–কেন একথা বলছো?
–এটা পড়ে দেখো, তাহলেই বুঝতে পারবে আমি একথা বলছি কেন?
দুটি চিঠি কর্নেলের হাতে তুলে দিতে ভ্রু কুঁচকে দেখে বললো–বেনামা চিঠি দেখছি।
-হ্যাঁ, বেনামা চিঠি। কিন্তু চিঠির লেখাগুলি আমি অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করি।
–সেটাই তো আরো বেশি বিপজ্জনক। ধীরে ধীরে রেস মাথা নাড়লো। শুনলে তুমি অবাক হবে, খবরের কাগজ প্রচারের জন্য এরকম কোনো ঘটনা ঘটে যাবার পর এ ধরনের অনেক চিঠি পাওয়া যায়।
-জানি। কিন্তু চিঠিগুলো সেই সময়কার লেখা নয়। আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে অন্তত ছমাস অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত লেখা হয়নি।
-হ্যাঁ, এটা একটা দিক বলতে পারো, কারা এই চিঠি লিখতে পারে বলে তোমার ধারণা হয়।
–জানি না, তবে আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, আমার স্ত্রী সেদিন খুন হয়েছিল।
–তোমার কি কোনো সন্দেহ হয়েছিল?
—আমার প্রিয়তমা স্ত্রীর আচমকা মৃত্যু আমাকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। তাই তদন্তের ফলাফল আমি যন্ত্রের মতো মেনে নিয়েছিলাম। সদ্য ফুঁ থেকে উঠে আমার স্ত্রীর শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য বলতে যা বোঝায় তা ছিলো না। তাই আমার মনে হয় সেই মুহূর্তে কোনো সন্দেহ জাগেনি। তাছাড়া তদন্ত করার সময় তার হাতের মুঠোর মধ্যে গুঁড়ো জাতীয় কিছু পদার্থ পাওয়া যায়, সেই গুঁড়ো হলো সায়ানাইড।
-শ্যাম্পেনের সঙ্গে সায়ানাইডের গুঁড়ো মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
–আমারও তাই মনে হয়। তাছাড়া রোজমেরি কখনো আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি পর্যন্ত দেয়নি। ওর বাঁচার ইচ্ছে ছিলো ভীষণ, জীবনকে উপলব্ধি করতে চেয়েছিল সে।
রোজমেরির সঙ্গে রেসের একবার সাক্ষাৎ হয়েছিল। তাকে দেখে তার মনে হয়েছিল, প্রেমিকা হিসাবে এই নারী হলেন অদ্বিতীয়া।
–মেডিক্যাল রিপোর্টে কি বলেছিল।
–মারলে পরিবারের বয়স্ক ডাক্তার তখন সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছিল। ছেলেবেলা থেকে সে-ই রোজমেরিকে চিকিৎসা করে আসছিল। তার অবর্তমানে তারই সহযোগী ডাক্তার রোজমেরির ফ্র হওয়ার সময় চিকিৎসা করেছিল। আমার যতদূর মনে আছে সে বলেছিল, ওই ধরনের ফ্লু থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর প্রায় প্রতিটি রুগী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে রোগভোগের যন্ত্রণায়।
জর্জ একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলেন–ঐ চিঠিগুলো পাওয়ার পর আমি রোজমেরির বয়স্ক ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করি। সবকিছু শুনে সে বিস্মিত হলো। তার কাছে এটি অবিশ্বাস্য ঘটনা। তার ব্যক্তিগত ধারণা, রোজমেরি আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে ছিলো না। আমারও মন সায় দিলো, জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার মেয়ে তো সে ছিল না। হয়তো কখনো রাগে চেঁচামেচি করেছে, বাড়ির সবাইকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে, ব্যস, এই পর্যন্ত।