প্রায় রেগে গিয়ে আইরিস চিৎকার করে বললো–তুমি সবসময় চোরের মতো চুপি চুপি আসো কেন টমি?
এ্যানথনি ওর পাশে মাটির ওপর বসে একটা সিগারেট ধরালো। একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে বললো আমার স্বভাব যেখানে সেখানে আবির্ভাব হওয়া। কাগজগুলো আমাকে রহস্যজনক মানুষ বলে ডাকে।
–বেশ বুঝলাম, কিন্তু তুমি কি করে জানলে, আমি এখানে আছি?
-তোমাকে পাহাড়ের ধারে আসতে দেখে আমি চুপি চুপি তোমার পেছন ধরি। কেন, এখানে এসে কোনো অন্যায় করেছি?
-অবশ্যই নয়। আইরিস একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, টমি, আমি এখানে থেকে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এ জায়গাটা আমার একদম পছন্দ হয় না। আমি লন্ডনে ফিরে যেতে চাই।
–তোমরা কয়েকদিনের মধ্যে ফিরে যাচ্ছো, তাই না?
–হ্যাঁ, আগামী সপ্তাহে।
–তাহলে ফ্যারাডেদের সঙ্গে এখানে এটাই শেষ বিদায়ের পার্টি।
–হ্যাঁ।
–আচ্ছা, ফ্যারাডেদের তুমি পছন্দ কর?
-আমার মনে হয় না খুব একটা পছন্দ হয়। কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করা যায় না। কারণ তারা আমাদের সঙ্গে চমৎকার ব্যবহার করেন।
–আচ্ছা আইরিস, তোমার কি মনে হয় ওঁরা তোমায় পছন্দ করে?
-মনে হয় পাশাপাশি প্রতিবেশী হিসেবে তারা আমাকে পছন্দ করেন। আসলে তারা ছিলেন রোজমেরির বন্ধু। বন্ধু বলতে যা বোঝায় আমরা তেমন ছিলাম না।
-ঠিক বলেছো তুমি। তবে আর একটা কথা, সান্দ্রা ফ্যারাডে আর রোজমেরির মধ্যে বন্ধুভাবাপন্ন অন্তরঙ্গতা ঠিক ছিল না।
একবার সিগারেট টান দিয়ে এ্যানথনি বললো–জানো, ফ্যারাডেদের সম্পর্কে আমার কি ধারণা?
কি?
–তারা যেন তোমাদের কাছে একটি অভিন্ন ফ্যারাডে পরিবার। তারা একই উদ্দেশ্য, একই মনোভাব, একই লক্ষ্য নিয়ে জীবনের পথে এগিয়ে চলেছে। এগুলো হলো তাদের বাইরের খোলস। আসলে তাদের দুজনের মনের দিক থেকে চরিত্রের দিক থেকে অনেক তফাৎ রয়েছে, এটা খুবই অদ্ভুত ব্যাপার। আমার মতে স্টিফেন ফ্যারাডে হলো অত্যন্ত বুদ্ধিমান, অন্যের মতামতের ওপর সহানুভূতিশীল। ওর চরিত্রের দোষ হলো, ভীষণ আত্মবিশ্বাসী এবং নৈতিকি সাহসের অভাব। অপর দিকে সান্দ্রা ফ্যারাডের মন ভীষণ সংকীর্ণ, ধর্মভীরু, মধ্যযুগীয় বেপরোয়া মনোভাব।
–তবে আমার মনে হয় স্টিফেন বোকা এবং ভীষণ অহঙ্কারী–আইরিস বলে।
–বোকা ঠিক নয়। তবে সাফল্যের দোড়গোড়ায় এসেও তিনি অসুখী।
–এর কারণ?
-তারা অবশ্য এ দিক থেকে সার্থক। কিন্তু তারা পরস্পরের মধ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই তাঁরা এমন একটা কিছু দেখাতে চান, যা দেখার জন্য সারা পৃথিবী উদ্বিগ্ন।
..আইরিস, তুমি একটু চিন্তা করলেই দেখবে, কথাগুলো সত্যি এবং খাঁটি। তুমি লক্ষ্য করে দেখবে, সুখী মানুষদের জীবনে ব্যর্থতা নেমে আসে। কারণ তাদের নিজেদের মধ্যে এমন বোঝাঁপড়া থাকে যে কেউ কারোর নিন্দে করতে পারে না। যেমন আমি।
–তোমার নিজের প্রশংসা তুমি নিজেই করছো?
হঠাৎ কি খেয়াল হতে আইরিস হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো।
–এসো, আমাদের বাড়িতে তোমার চায়ের নেমন্তন্ন রইলো।
–আজ নয়। এ্যানথনি মাথা নাড়লো। কাজ আছে, ফিরে যেতে হবে।
–কি ব্যাপার বলো তো?
আইরিস তার দিকে সরাসরি তাকিয়ে বললো–আমাদের বাড়িতে তুমি আমো না কেন? নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে?
তোমার জামাইবাবু আমাকে ঠিক পছন্দ করেন না, সেটা তার হাবভাবে পরিষ্কার বুঝেছি আমি।
-জামাইবাবুর কথা বাদ দাও। লুসিলা পিসি আর আমি যদি বলি তাহলে তোমার আপত্তি করার কিছু নেই বলো।
-তোমার ভালো লাগলেও আমার আপত্তি থেকেই যাচ্ছে।
–কিন্তু রোজমেরির সময় তো আসতে।
–সেটা আলাদা ব্যাপার।
এ্যানথনির এ ধরনের কথা শুনে আইরিস আহত স্বরে বলে–তুমি এখানে এসেছো কেন? এখানে কি তোমার অন্য কাজ ছিলো?
-হ্যাঁ তোমার সঙ্গে অত্যন্ত জরুরী প্রয়োজন আছে। তোমাকে একটা প্রশ্ন করতে এসেছি। আইরিস কৌতূহলী হয়ে ওঠে।
–কি কথা বলো?
–আমাকে তুমি বিশ্বাস করো, আইরিস? সত্যি করে বলবে?
এ ধরনের প্রশ্ন শুনে আইরিস চমকে উঠলো।
–এ প্রশ্ন তোমার ধারণার বাইরে তাই না? এ্যানথনি বলতে থাকে। এই একটা মাত্র জরুরী প্রশ্নের উত্তর তোমার কাছ থেকে শুনতে চাই আইরিস। বলল, আমাকে তুমি বিশ্বাস করো?
ক্ষণিকের জন্য আইরিস ইতস্ততঃ বোধ করে। তারপর ধীরে ধীরে বলে-হ্যাঁ।
–তাহলে লন্ডনে এসে কাউকে না জানিয়ে তুমি আমাকে বিয়ে করবে?
বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে আইরিস তাকালো–আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করতে আমি পারি না।
-তুমি তো আমাকে ভালোবাসো, কি ভালোবাসো না?
–হ্যাঁ, তোমায় আমি ভালোবাসি।
–তাহলে তুমি ব্লুমসবেরিলর সেন্ট এলফ্রিডা চার্চে গিয়ে আমাকে বিয়ে করতে পারো।
-কি করে সম্ভব হবে? এভাবে বিয়ে করলে জর্জ মনে কষ্ট পাবে, লুসিলা পিসিও আমাকে কোনোদিন ক্ষমা করবে না। তাছাড়া আমার বয়স মাত্র আঠারো। সেটাও একটা সমস্যা।
-বয়সের ব্যাপারে তোমাকে একটু মিথ্যা বলতে হবে। এর জন্য কত কাঠখড় পোড়াতে হবে আমাকে জানি না। তোমার অভিভাবক কে?
–জর্জ। উনি আমার ট্রাস্টিও বটে।
তবে বিয়েতে যত রকম ঝামেলা পোহাতে হোক না কেন, আমার আশা, আমাকে তুমি ফিরিয়ে দেবে না।
-আচ্ছা, তুমি এ ব্যাপারে আমাকে এতো চাপ দিচ্ছো কেন? তোমার মতলবটা কি?
-আমি বলতে চাই যে, আমার কাজের ওপর তোমাকে অবশ্যই আস্থা রাখতে হবে। তাই তো তোমাকে আগেই জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমাকে তুমি বিশ্বাস করো কিনা।