–ঠিকই বলেছো, প্রত্যাখ্যান করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাছাড়া এখন অস্বীকার করলে পরে আবার এই আমন্ত্রণ পুনরাবৃত্তি হতে পারে। বেশ ঠিক আছে, তোমাকে যেতে হবে না। তুমি কেন এটা সহ্য করতে যাবে। আমি একাই যাবো। গিয়ে বলবো
–না স্টিফেন, তুমি গেলে আমিও যাবো। সান্দ্রা তার নরম হাতটি স্বামীর হাতের ওপর রাখলো। আইনত আমরা স্বামী-স্ত্রী। পরস্পর পরস্পরের সুবিধা-অসুবিধা ভাগ করে নেওয়া হলো স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য।
সান্দ্রার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো স্টিফেন। কিন্তু সান্দ্রার কথার মধ্যে কোথায় যেন একটা প্রচ্ছন্ন অভিযোগ আছে। তাই সে বললো-তুমি ওকথা বলছো কেন, তুমি জানো না, তোমায় পেলে আমি যেন পৃথিবীটা হাতের মধ্যে পেয়ে যাই।
স্টিফেনের দুহাতের মধ্যে আবদ্ধ সান্দ্রার কাঁপা কাঁপা দেহ। বুকের আরো কাছে টেনে নেয় স্টিফেন। চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দেয় তার লাল ঠোঁট।
সান্দ্রা, তোমাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি প্রিয়তমা। কিন্তু তোমাকে হারাবার ভয় আমার ভীষণ!
-কেন, রোজমেরির জন্য।
স্টিফেন বিবর্ণ মুখে বলে-হা, তুমি রোজমেরির ব্যাপারটা জানো?
–সবটাই জানি। প্রথম থেকে।
–কি মনে হয়েছে?
–আমার কিছুই মনে হয়নি। কিছু বুঝিওনি। জানি না কখনো বুঝতে পারবো কিনা। তুমি তাকে ভালোবাসবে।
-না, আমি তোমাকেই শুধু ভালোবাসি।
অদ্ভুত তিক্ততায় ভরে গেল সান্দ্রার অন্তর। তুমি মিথ্যে বলল না। সেই প্রথম দেখার দিন থেকে তুমি আমায় এ ব্যাপারে মিথ্যে বলে এসেছে।
স্টিফেন কিন্তু একটুও না ঘাবড়ে সান্দ্রার কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করলো। তারপর অকপটে স্বীকার করলো এমন সন্দেহজনক পরিস্থিতিতেও আমি বলবো, ওটা মিথ্যে নয়। সান্দ্রা দয়া করে তুমি বোঝার চেষ্টা করো। ক্ষমতার লোভে সব মানুষই একসময় অন্ধ হয়ে যায়, সেটা আমি স্বীকার করছি। ক্ষমতার শিখরে উঠে তখন আর মানুষের নিচের দিকে তাকানোর অবসর থাকে না। এসব ক্ষেত্রে মানুষকে সময় সময় কঠিন হতে হয়, হয়তো কঠিনতার মুখোসের আড়ালে নিজেকে সে ঢেকে রাখতে চায়। কিন্তু আমার দিক থেকে আমি এটুকু বলতে পারি, তোমার মতো মেয়েকেই আমি সেই ছোটবেলা থেকে খুঁজেছি। আমি আন্তরিক ভাবে বিশ্বাস করি, অতীতের দিকে ফিরে তাকালে আমার মনে হয়, যদি সেটা সত্যি না হতো তাহলে সেই পথ দিয়ে আমি এতটা পথ উঠে আসতে পারতাম না, কিছুতেই না।
–আমাকে তুমি ভালোবাসোনি।
সান্দ্রার মনে তখনও তিক্ততা।
-না, প্রথমে আমি তোমার প্রেমে পড়িনি। আমি তখন সেই পুরুষ যে নিজের গর্বেই গর্ব অনুভব করে। তারপর একদিন ঘরের গণ্ডি পেরোতেই আমার দণ্ডশীল যুবকের লজ্জাকর সেই প্রেম আমায় ঘিরে ধরে। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো নিমেষের প্রেম।
তারপর এই ফেয়ারহেভেনে আমার সত্যিকারের জাগরণ হলো। উপলব্ধি করলাম আমার জীবনের যা কিছু সত্যি তা হলো তুমি, তোমার ভালোবাসার মর্যাদা দেওয়া, আর সব মিথ্যে।
-তুমি তাকে নিয়ে পালাবার কথা ভেবেছিলে না?
–রোজমেরির সঙ্গে, তাহলে সেটা অবশ্যই আমার জীবনে সান্দ্রার কারাদণ্ডের সামিল হতো।
–কেন তিনি চাননি, তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে?
চেয়েছিলেন।
–তাহলে কি হলো।
স্টিফেন বলে, তারপর লুক্সেমবার্গের সেই বেদানায়ক ঘটনা সব এলোমেলো করে দেয়।
তারপরের কথা না বললেও চলবে। সায়ানাইড বিষে নীল হয়ে গেছে রোজমেরির সুন্দর মুখ। তার চোখ দুটি তখনো জ্বলজ্বল করছিল। সে চোখে অনেক জিজ্ঞাসা অনেক প্রত্যাশা।
একটু থেমে স্টিফেন প্রশ্ন করলো, তাহলে আমাদের কি করা উচিত?
চলো, সেই পার্টিতে অংশ নেওয়া যাক, তার অন্তরালে যে কারণই থাক না কেন।
–জর্জ বারটন আইরিস সম্বন্ধে যা বলে গেলেন তা কি ঠিক? তোমার কি ধারণা?
–জানি না স্টিকেন, তবে আমার মনে হয় তিনি জানেন।
–কি জানেন? প্রশ্ন করে স্টিফেন।
ফিসফিস করে উঠলো সান্দ্রা।
–আমাদের ভয় পাওয়া উচিত নয়। সাহস সঞ্চয় করা দরকার। তুমি একজন বিরাট প্রতিভাবান পুরুষ হতে চলেছে। মানুষ যেমন চায়। তার জন্য কোনো কিছু বাধা হতে পারে না। স্টিফেন, আমি তোমার স্ত্রী, তোমায় আমি ভালোবাসি।
-ঐ পার্টির ব্যাপারে তোমার কি ধারণা, সান্দ্রা?
-ওটা একটা ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করছেন জর্জ বারটন। তবে আমরা যে ঐ ফাঁদের কথা জেনে গেছি–সেটা আমরা বুঝতে দেবো না।
-না, তা অবশ্য ঠিক।
সহসা সান্দ্রা হেসে ওঠে।
–তুমি জিততে পারো না, স্টিফেন। তোমার রোজমেরিই হবে তোমার সর্বনাশের মূল কারণ। স্টিফেন দুহাত দিয়ে সান্দ্রার কাধ আঁকড়ে ধরে।
সান্দ্রা দয়া করে থামো। তাছাড়া রোজমেরি মৃত।
–তিনি কি সত্যিই মারা গেছেন? সান্দ্রার কখনো কখনো মনে হয়, রোজমেরি বেঁচে আছেন।
.
২.৩
পার্কে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন জর্জ বারটন, সঙ্গে আইরিস। কিছুটা হাঁটার পর আইরিস বললো–জর্জ, কিছু মনে করো না। আমি একটু একা ঘুরতে চাই। মাথাটা ভীষণ ধরেছে।
-বেশ, আমি ফিরে যাচ্ছি।
জর্জকে বিদায় জানিয়ে আইরিস যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলল। অক্টোবরের শেষের দিক কিন্তু শীত ভালো পড়েনি।
একটা ঝড়ে পড়ে যাওয়া গাছের ওপর বসে আইরিস নিচে উপত্যকার দিকে তাকালো। গালে হাত দিয়ে বিষণ্ণ নেত্রে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করলো। হঠাৎ পাতার খসখস শব্দ। সে পেছন ফিরে তাকালো। গাছের ডালপালা সরিয়ে এ্যানথনি ব্রাউন তার দিকে উঠে আসছে।