এই বিশিষ্ট অতিথিদের কাছে আমরা এখন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তারা দুজনে নীরবে সেই নৈশভোজের দৃশ্যটা চোখের আয়নায় দেখছিল। জর্জ বারটন ছিলেন উচ্ছ্বাসে ভরপুর, কথা-ব্যবহার বন্ধুত্বসুলভ আচরণ ছিল তার মধ্যে। কিন্তু ফ্যারাডে পরিবার তার মধ্যে সবসময় একটা চাপা উত্তেজনা দেখতে পায়। যেটা তাদের সর্বদাই ভীত করে রেখেছে। রোজমেরির মৃত্যুর পর থেকে জর্জকে কেমন অস্বাভাবিক মনে হয়। আগে জর্জ ছিলেন বোকা গোবেচারা গোছের সুন্দরী যুবতী স্ত্রীর বয়স্ক স্বামীর যেরকম অবস্থা হয় ঠিক সেইরকম। স্টিফেনের সেইসময় একবারও সন্দেহ হয়নি, জর্জ বারটন তার স্ত্রী রোজমেরির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন এবং বলা যেতে পারে জর্জের মতো স্বামীরদের জন্ম হয় বারবার প্রতারিত হওয়ার জন্য। স্ত্রীর থেকে তার বয়সের ফারাক ছিল যথেষ্ট, ঐ কারণে বা অন্য কোনো কারণে হোক খেয়ালী সুন্দরী যুবতীর মনোরঞ্জন করার মতো শক্তি তার ছিলো না। তাহলে কি জর্জ বারটন প্রতারিত? স্টিফেনের তা মনে হলো না। জর্জ রোজমেরিকে ভালোবাসতেন, তিনি তার ক্ষমতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিলেন, স্ত্রীর স্বার্থই তিনি বেশি করে দেখতেন।
রোজমেরির মৃত্যুতে জর্জের মনে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল? সেটা আন্দাজ করার চেষ্টা করে স্টিফেন।
রোজমেরির মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গে জর্জের খুব একটা দেখা হয়নি। তারপর হঠাৎ একদিন লিটল প্রায়রসে তাদের প্রতিবেশী হয়ে এলেন জর্জ।
আজ যেন জর্জকে বেশ বিচিত্র মনে হলো। হঠাৎ তাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বসলেন। অষ্টাদশী আইরিসের জন্মদিনের পার্টি। সেই পার্টিতে জর্জ তাদের কামনা করেন।
অনেক কাজ থাকা সত্ত্বেও সান্দ্রা এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলো।
নিশ্চয়ই যাবো, খুব আনন্দ হবে।
–তাহলে দিনটা ঠিক করে নেওয়া যাক।
উজ্জ্বল হাসিতে জর্জের মুখ ভরে গেল।
–ভাবছিলাম, আগামী সপ্তাহের বৃহস্পতিবার অর্থাৎ দোসরা নভেম্বর আপনাদের ঐদিন কোনো কাজ নেই তো? তা না হলে অন্য কোনোদিন ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
স্টিফেন আইরিস মারলের দিকে তাকালো। ওর মুখ কেমন লাল হয়ে উঠেছে। একটা অস্বস্তিবোধ ধরা পড়লো স্টিফেনের চোখে।
কিন্তু সান্দ্রার মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। ঐ দিনই উপযুক্ত বলে তার বিবেচনা করে জানালো।
কিন্তু স্টিফেন তীক্ষ্ণস্বরে বলে উঠলো–আমাদের যাওয়ার দরকার নেই।
সান্দ্রা তার দিকে ঘুরে তাকালো। সান্দ্রার চোখে প্রশ্ন লক্ষ্য করে স্টিফেন বলেনা যাওয়ার অজুহাত দেখানোটা কি খুব সহজ হবে?
-খুব হবে, বড় জোর অন্য আর একদিন যাওয়ার জন্য তিনি অনুরোধ করবেন। মনে হয় আমাদের যাওয়ার ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত আগ্রহী।
–এটা আমার মাথায় ঢুকছে না যে ওঁর অত আগ্রহ কেন? তাছাড়া আইরিসের জন্মদিনের পার্টি। অথচ আমাদের সঙ্গ পাওয়ার জন্য আইরিস যে খুব বেশি আগ্রহী তা তত মনে হয় না।
-না, তা মনে হয় না। আচ্ছা তুমি কি জানো, পার্টিটা ওঁরা কোথায় দিচ্ছেন?
–লুক্সেমবার্গে।
কথাটা শোনামাত্রই স্টিফেনের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। তার মুখ দিয়ে আর কথা বেরোলো না। নিজেকে সে গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো। সেই মুহূর্তে সান্দ্রার চোখে তার চোখ পড়লো।
–ভদ্রলোক নিশ্চয়ই পাগল হয়ে গেছেন। মনের অভিব্যক্তি চাপা রেখেই স্টিফেন জোরে কথা বলে উঠলো। লুক্সেমবার্গ। সেই পুরোনো স্মৃতি ঘেঁটে আর কি হবে?
সান্দ্রা স্বামীর কথায় সায় দিলো।
–তাহলে আমরা নিশ্চয়ই এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে অস্বীকার করবো। সমস্ত ব্যাপারটা অত্যন্ত অপ্রীতিকর। এক্ষেত্রে আমাদের রাজী হওয়া সম্ভব নয়।
-স্টিফেন, এ ব্যাপারে তিনি আমাকে একটা কারণ অবশ্য দেখিয়েছেন। সান্দ্রা বলে। নৈশভোজের পর তিনি আমাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে এই আমন্ত্রণের ব্যাখ্যা করে বলেন, আইরিস তার দিদির মৃত্যুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক হতে পারেনি।
-হ্যাঁ, নৈশভোজের পর আইরিসকে অসুস্থ দেখাচ্ছিল বটে।
–জর্জ বারটন আরো বলেছিলেন যে তার দিদির মৃত্যুর পর থেকে আইরিস লুক্সেমবার্গে যাওয়ার কথা হলে এড়িয়ে যায়।
তার কথা শুনে আমার মনে হয়, উনি কোনো নার্ভ স্পেশালিস্টের সঙ্গে আইরিসের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। আজকালের আধুনিক চিকিৎসকদের চিকিৎসার ওষুধ হলো যদি কোনো লোক অপ্রীতিকর ব্যাপারে মানসিক আঘাত পায় তাহলে তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য ঠিক সেইরকম অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে দেওয়া উচিত। এড়িয়ে যাওয়া নয়।
–সেই স্পেশালিস্ট কি আর একটি আত্মহত্যার পরামর্শ দিয়েছেন?
-না, তবে মিঃ বারটনের মতে, লুক্সেমবার্গে আবার সেই জমায়েতের ব্যবস্থা করলে আইরিস হয়তো কিছুটা স্বাভাবিকত্ব লাভ করবে। জর্জ চান, এক বছর আগে ঐ আসরে যারা এসেছিলেন তারা প্রত্যেকে যেন দোসরা নভেম্বর আসেন।
–আমার মনে হয়, এটা একটা জঘন্য চক্রান্ত। স্টিফেন বললো, অবশ্য ব্যক্তিগত ভাবে আমি কিছু বলতে চাই না। সত্যি কথা বলতে কি আমি তোমার কথাই ভাবছিলাম। তুমি যদি কিছু না মনে করো
কথার মাঝখানে সান্দ্রা বলে উঠলো–আমি মনে করি এবং খুব ভালোভাবে মনে করি। কিন্তু মিঃ বারটনের অনুরোধ অগ্রাহ্য করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। সেদিনের সেই ঘটনার পর আমরা লুক্সেমবার্গে অনেকবার গিয়েছি।