অতীতের পৃষ্ঠা ওলটাতে লাগলেন জর্জ বারটন। চোখের পরদায় ফুটে উঠলো সেই ছবি। রোজমেরির বসার ঘরে একদিন হঠাৎ জর্জ ঢুকে পড়লেন। ভূত দেখার মতো তিনি চমকে উঠলেন। দ্রুত হাতে টেবিলের ওপর কোর প্যাড আড়াল করলেন। জর্জ বুঝতে পারলেন, রোজমেরি তার প্রেমিকাকে চিঠি লিখছেন।
খানিক বাদে রোজমেরি চিঠির প্যাড সঙ্গে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। জর্জ টেবিলের কাছে এগিয়ে এলেন। ব্লটারটা হাতে তুলে নিলেন। সদ্য পড়া কালির দাগ স্পষ্ট। তিনি নিজের ঘরে সেটি নিয়ে এলেন। চশমা চোখে পড়ে ব্লটারের ওপর নজর দিলেন–আমার প্রিয়তম…রোজমেরির হাতের লেখা স্পষ্ট ভেসে উঠলো।
তার চোখ লাল হয়ে উঠলো। ক্রোধে কান দিয়ে আগুন বেরোতে লাগলো। তিমি মনে মনে। স্থির করলেন, ঐ যুবকটিকে চিরদিনের মতো পৃথিবী থেকে বিদায় দেবেন। কিন্তু কে সেই যুবক? কে রোজমেরির প্রেমিক? ব্রাউন? না কি নাছোড়বান্দা স্টিফেন ফ্যারাডে। এই দুটি নাম জর্জের মনে পড়লো কারণ ওরা রোজমেরির দিকে অস্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকাতো। রোজমেরির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ওরা কেমন হাবা হয়ে যায়।
জর্জের সব মনে পড়ে। উত্তেজনার চোটে তার হাত থেকে চশমা নিচে পড়ে যায়। এমন কি এখনো
তিনি আজ সেই সব বেদনাদায়ক স্মৃতি রোমন্থন করতে চান না। কোন লাভ নেই ওসব ভেবে। কেবল মন ক্ষত-বিক্ষত হয়। বরং রোজমেরির মৃত্যু তার জীবনে এনেছে শান্তি। পরম শান্তি।
আশ্চর্য, রুথকে তো একথা বলা হয়নি যে রোজমেরি মরে গিয়ে তাকে শান্তি দিয়ে গেছে। রুথকে বিশ্বাস করে সব বলা যায়। ঐ মুহূর্তে তিনি একটা জিনিস উপলব্ধি করেন, রুথ না থাকলে তার দারুণ কষ্ট হবে। তার প্রতিটি কাজে সে সহযোগিতা করে প্রয়োজনে উপদেশ দেয়, এমন কি দুঃখজনক ব্যাপারে সে সহানুভূতি জানায়। রুথের অবর্তমানে তার কাছে সব কিছু ফাঁকা লাগবে। শূন্য হয়ে যাবে সব। রোজমেরি কেবল দিয়ে গেছে, কখনো কিছু নেয়নি। এমনকি কখনো কামনা বাসনার কোনো আভাস দেয়নি সে।
আবার স্মৃতি উঁকি দিলো জর্জের মনের কোণে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে ওঠার পর রোজমেরিকে যেন আরো বেশি সুন্দর লাগছিল। একটি রেস্তোরাঁর গোল টেবিলের সামনে সে বসেছিল, তার এক ঘণ্টা পরে
না, আর তিনি অতীতকে মনে করবেন না। অগে তিনি তার পরিকল্পনা ভেবে দেখবেন।
চিঠিগুলি রেসকে দেখাবেন তিনি। ঐ চিঠির ব্যাপারে আইরিসের যে বিন্দুমাত্র ধরাণা নেই সেটা তার বোবা মুখ দেখে বোঝা গেছে।
যা করার তিনি নিজেই করবেন।
দোসরা নভেম্বর, খ্রিস্টানদের পরবের দিন লুক্সেমবার্গে সেই টেবিলটা দখল করবেন তিনি।
এ্যানথনি ব্রাউন, স্টিফেন ফ্যারাডে, সান্দ্রা ফ্যারাডে আমন্ত্রিত হবেন এছাড়া থাকবেন রুথ, আইরিস এবং তিনি নিজে। সপ্তম অতিথি হবেন রেস। তারপরেও একটি চেয়ার খালি থেকে যায়। ব্যাপারটা অত্যন্ত নাটকীয় হবে। নতুন করে ফিরে আসবে সেই সব দৃশ্য।
রোজমেরির জন্মদিন, জর্জ বারটন উদাস হয়ে ভাবেন।
গোল টেবিলে ফুলের স্তূপ। হাত-পা ছড়ানো টানটান করে টেবিলের ওপর পড়ে আছে রোজমেরির-মৃত…
২. খ্রিস্টানদের পরবের দিন
২.১
আজ সকাল থেকেই লুসিলা ড্রেককে একটু মেজাজি মনে হচ্ছিল। এই বিশেষ দিনটিতে তার অনেক কাজ। কোন ব্যাপারে আগে মাথা গলাবেন সেটাই তিনি ভেবে পাচ্ছিলেন না। তবে সবচেয়ে জরুরী যে কাজ তার কাছে বিশেষ মনে হলো সেটা হচ্ছে আইরিসের ভালমন্দের প্রতি নজর রাখা।
প্রিয় আইরিস, তোমায় দেখে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে তোমার কতদিন যেন ঘুম হয়নি। তোমার এখন দরকার ইটনের সিরাপ। ছোটবেলায় আমাকেও ঐ টনিক খেতে দেওয়া হতো। আর শাক খাওয়া জরুরী। রাঁধুনিকে বলে দেবো, আজ দুপুরে খাওয়ার সময় যেন শাক ভাজা পরিবেশন করে।
মিসেস ড্রেকের যত্নের ঠেলায় আইরিস ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছে। তার কিছু ভালো লাগছিল না। কিন্তু বিরক্তি প্রকাশ না করে দৃঢ় কণ্ঠে বললো–লুসিলা পিসি, আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।
–কিন্তু মা, তোমার চোখের কোলে কালি পড়েছে। স্নেহার্দ্র কণ্ঠে মিসেস ড্রেক বললেন, তোমার বয়সের মেয়ের পক্ষে অতিরিক্ত টেনিস খেলা সহ্য হবে কেন? মনে হয়, এখানকার জল হাওয়া তোমার পক্ষে উপযুক্ত নয়। জর্জ যদি ঐ মেয়েটার সঙ্গে পরামর্শ না করে–
–কোন মেয়েটা?
—ঐ যে মিস লেসিং, যাকে নিয়ে জর্জের ভীষণ চিন্তা। মেয়েটিকে আমার মোটেও পছন্দ নয়। অফিসে তুমি যা খুশী করো তাই বলে বাইরে। এ ভাবা যায় না। আমাদের পরিবারের একজন ভাবতে দেওয়াটা মস্ত বড় ভুল।
-তুমি বোধ হয় জানো না, ও সত্যি আমাদের পরিবারের একজন হয়ে গেছে।
–সে তাই ভাবে নাকি? মিসেস ড্রেক জোরে নিঃশ্বাস নিলেন। এর থেকেই তার মনোভাব স্পষ্ট বোঝা যায়। জর্জের জন্য দুঃখ হয়। আইরিস, জর্জকে যেভাবেই হোক রক্ষা করতে হবে। মিস লেসিং সুন্দরী হতে পারে, তাই বলে জর্জ ওকে বিয়ে করার কথা ভাবতে পারে না।
আইরিস মিসেস ড্রেকের কথা শুনে থ হয়ে গেল।
–রুথকে জর্জ বিয়ে করবে এ তো আমার কল্পনার বাইরে।
-তুমি কি কিছু দেখতে পাও না বাছা। তোমার চোখের সামনে সব কিছু ঘটে যাচ্ছে। অবশ্য তোমার তো আমার মতো অভিজ্ঞতা নেই। তুমি জানো না, আইরিস, মেয়েটা জর্জকে বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।