কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার যে রোজমেরির মধ্যে এমন কি আছে, যার জন্য স্টিফেন পাগলের মতো তাকে নিয়ে মেতে উঠেছে।
সান্দ্রার মতে, রোজমেরি একটা নিরেট বোকা। স্বীকার করতে হবে পুরুষদের ভোলানোর মতো রূপ আছে তার। বশ করার যাদুমন্ত্রও তার জানা আছে। কিন্তু একদিন না একদিন তার সেই রূপ ধসে যাবে। তখন তার সঙ্গের মধ্যে ক্লান্তি খুঁজে পাবে। তখন সে রোজমেরির প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসবে, এটা সান্দ্রার বিশ্বাস।
স্টিফেনের উচ্চাশাই সান্দ্রাকে বিশ্বাস করতে সাহায্য করেছে। স্টিফেন কখনো নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যত বিসর্জন দিয়ে চিরদিন একজন বিবাহিত মহিলাকে নিয়ে পড়ে থাকবে না। তাই সে হাজার দুঃখ-যন্ত্রণা নীরবে সহ্য করেছে।
তাই অন্তর থেকে নিজেকে বুঝিয়েছে, সে কেবল স্টিফেনের, স্টিফেন তার একার। সে তার দেহমন সব স্টিফেনকে সমর্পণ করেছে, এটা কখনো মিথ্যা হতে পারে না।
সেই আশাতে বুক বেঁধে একদিন স্টিফেনকে নিয়ে সে চলে আসে ফেয়ারহেভেনে। স্টিফেন আগের মতো তার সঙ্গে মেলামেশা শুরু করে। আবার আগের মানুষে সে ফিরে এলো। সব জ্বালা যন্ত্রণা ভুলে গিয়ে স্টিফেনের ভালোবাসায় সাড়া দিলো সে। বোধহয় এখানেই সান্দ্রার ভালোবাসার সার্থকতা লাভ করলো। ও ঠিক করলো, এই ভাবেই রোজমেরি আর স্টিফেনের মধ্যে ব্যবধান তৈরি করবে।
একদিন তারা লন্ডনে ফিরে এলো। স্টিফেন তখন আর সেই মানুষ রইল না। কেবল চঞ্চল মন। কাজে মন বসাতে পারে না। আগের মতো উন্মনা ভাব।
রোজমেরি তাকে নিয়ে কোথায় পালিয়ে যেতে চায়, তাই স্টিফেনের মন উতলা, এটা সান্দ্রার কাছে অজানা রইলো না।
একদিন এক ককটেল পার্টিতে দুজনের গোপন কথাবার্তা সান্দ্রা আড়াল থেকে শুনছিল। তবে টুকরো টুকরো।
–আমাদের ইচ্ছের কথা জর্জকে জানাচ্ছি।
এর কয়েকদিন পর রোজমেরি ফ্রতে পড়ে। নিউমোনিয়া তাকে শয্যাশায়ী করে দিলো। অনেকে এই অসুখে মারা যায়। সেদিন সান্দ্রাও তার মৃত্যু কামনা করেছিল ঈশ্বরের কাছে।
কিন্তু তার ইচ্ছা পূরণ হলো না।
লুক্সেমবার্গের সেই ক্লোক রুমে সেদিন রোজমেরিকে অপরূপ লাগছিল। পরনে শৃগালের চামড়ার লাল স্টোল এলোমলা ভাবে রয়েছে, ধবধবে সাদা কাধ দেখা যাচ্ছে। মুখটা বিষণ্ণ। কিন্তু তার সৌন্দর্যে এতুকু ভাটা পড়েনি। হাতে তার শূন্য গ্লাস, মনে হয় স্বর্গ থেকে কোনো দেবী পৃথিবীতে নেমে এসেছে।
সান্দ্রা ঠিক তার পেছনেই ছিল। তার চোখ পড়লো আয়নায়। এ কার মুখ দেখছে সান্দ্রা। নিজের মুখকে চিনতে কষ্ট হলো তার। চোখে একরাশ ঘৃণা, পাথরের মতো শক্ত চোয়াল।
ও সান্দ্রা, রোজমেরির ডাকে সান্দ্রা সচেতন হয়। আমি কি আজ খুব ড্রিঙ্ক করেছি? আমার গ্লাস যে খালি হয়ে গেল। আমার একটু মাথা ধরেছে জানো। ইনফ্লুয়েঞ্জার পর থেকে শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। তোমার কাছে অ্যাসপিরিন আছে?
-না, অ্যাসপিরিন নেই। তবে ক্যাচেট ফেভর আছে।
-তাই দাও। তারপর রোজমেরি সেটা সান্দ্রার কাছ থেকে নিয়ে হাত ব্যাগে রেখে বললো, এখন থাক, প্রয়োজনে খাবো।
ওরা ক্লোক রুম থেকে বেরিয়ে এলো। সান্দ্রার ঠোঁটে রূঢ় হাসি এবার আর স্টিফেন তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবে না।
হলঘরে ঢুকে সান্দ্রা স্টিফেনের দুর্দান্ত চোখের দৃষ্টি দেখে অবাক হয়ে গেল।
.
জর্জ বারটন
১.৬
রোজমেরি…
একটু ড্রিঙ্ক করে জর্জ বারটন আজ কেমন বিচলিত হয়ে পড়েছেন।
রোজমেরি জানতো, যে তার জন্য জর্জ পাগল ছিল। রোজমেরি সম্পর্কে কোনো চিন্তা ভাবনা, এমনকি বিয়ের প্রস্তাবের সময়েও তাকে কেন জানি না তার হাস্যকর বলে মনে হয়েছিল।
-রোজমেরি, আমি জানি এই বয়সে তুমি আমার দিকে তাকাবে না। সেটাই স্বাভাবিক। আমি বোকা বোকা ভাব নিয়ে সবসময় ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকবো। তবু তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই।
রোজমেরি সেদিন হেসে উঠেছিলেন। জর্জের কপালে একটা চুমু দিয়ে বলেছিলেন, তুমি অনেক সুন্দর জর্জ। তোমার প্রস্তাব আমি মনে রাখবো। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি বিয়ের কথা ভাবছি না।
–বেশ তো, ভালো করে ভেবে নিয়ে সিদ্ধান্ত জানিও।
জর্জ খুব ভালো করেই জানতেন যে রোজমেরি তাকে কোনোদিনই ভালোবাসতে পারেনি। সত্যি কথা বলতে কি রোজমেরি বলেছিলেন–তুমি কি আমার মনের কথা বুঝতে পারো না। এতটুকু ভালোবাসার জন্য আমি পাগল হয়ে আছি। তোমাকে বিয়ে করে সংসারী হতে চাই। আমি জানি, সব ভালোবাসারই পরিণতি সুখের হয় না। তুমি আমাকে ভালোবাসো, এটাই আমার কাছে যথেষ্ট।
বিয়ের পর প্রথম দিকে তাদের সুখ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। জর্জ জানতেন, এই সুখ নামে পাখিটা একদিন আকাশে উড়তে চাইবে। একদিন না একদিন অপ্রত্যাশিত বাধা আসবেই। ওদিকে তাঁর মতো নিরুত্তাপ পুরুষের সঙ্গ পেয়ে রোজমেরি তৃপ্ত হতে পারলেন না।
তাই তিনি নিজের মনকে তৈরি করছিলেন সেই অপ্রিয় ঘটনাকে গ্রহণ করে নেওয়ার জন্য। রোজমেরির একটা দুর্বলতা ছিলো স্বামীর প্রতি। জর্জের ভালোবাসা স্থায়ী এবং অপরিবর্তিত।
রোজমেরির অসাধারণ রূপ, তার সন্দেহজনক আচরণের ফলে একটা কিছু যে ঘটবে তা আর বিচিত্র কি। কিন্তু কখনো তিনি তার মনে প্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তা করেননি।
প্রথমদিকে জর্জ বিশেষ গুরুত্ব দেননি। একটি যুবকের সঙ্গে রোজমেরির প্রেমের ভাব হতে পারে। কিন্তু একদিন তিনি জানতে পারনে তার সন্দেহে কোনো ভেজাল নেই। সেটা যে কত নোংরা, জঘন্য বলে মনে হয়েছিল সেদিন জর্জের, তা বলার মতো নয়।