একটা গোপন ফ্ল্যাটে তাদের দেখা হতো। রোজমেরির রূপের মাধুর্য, তার প্রতি স্টিফেনের দুর্বার আকর্ষণ, তার আবেগভরা আলিঙ্গন-সব যেন স্বপ্ন। সাড়া জাগানো মন মাতানো স্বপ্ন।
কিন্তু প্রেমিকার বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠে স্টিফেন ভাবতো, সে আর রোজমেরির সঙ্গে দেখা করবে না। সে হচ্ছে সান্দ্রার স্বামী। যদি সান্দ্রা তাকে সন্দেহ করে বসে। এতখানি ঝুঁকি নেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু সান্দ্রা স্বামীর প্রতি কখনো সন্দেহ প্রকাশ করে না। রোজমেরির স্বামী বড় অদ্ভুত ধরনের ভদ্রলোক। স্ত্রীর ন্যায়-অন্যায়ের দিকে কি তার নজর পড়ে না? না কি বয়সে অনেক বড় বলে সে তার যুবতী স্ত্রীকে হারাবার ভয়ে কোনো খবরদারি করতে চায় না।
-ফেয়ারহেভনে গেলে কেমন হয়? স্টিফেন স্ত্রীকে কাছে টেনে নিয়ে বলে, গলফ খেলে একঘেয়েমিটা কাটাতে চাই।
-বেশ তো কালই চলে। তবে তোমার কয়েকটা মিটিং বাতিল করতে হবে।
–ওতে কিছু অসুবিধা হবে না। পরে উদ্যোক্তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেই হবে।
স্টিফেন মনে মনে ভাবে গলফ খেলার নাম করে রোজমেরির সঙ্গে তার দেখা হওয়াটাই বড় কথা।
রোজমেরি তাকে চিঠি লেখে। নিষেধ করেছে স্টিফেন। এ মারাত্মক খেলা। এ অন্যায়। সান্দ্রা অবশ্য কোনোদিন তাকে প্রশ্ন করেনি এ ব্যাপারে। কিন্তু এটা যে অন্যায় তা তো স্বীকার করতেই হবে। তাছাড়া চাকর-বাকরদের ওপর সবসময় বিশ্বাস করা যায় না।
খাম খুলে স্টিফেন তাজ্জব। পাতার পর পাতা প্রেমপত্র। রোজমেরি লিখেছে, স্টিফেনকে রোজ না দেখতে পেয়ে সে থাকতে পারে না। স্টিফেনেরও কি একই অবস্থা হয়? আদর করে রোজমেরি তাকে লিওপার্ড বলে ডাকতো এবং স্টিফেন তার নাম রেখেছিল ব্ল্যাক চিউটি।
এই চিঠি লেখালেখি তাদের জীবনে চরম বিপর্যয় ডেকে আনবে, রোজমেরিকে সেটা বোঝানো যাচ্ছে না।
ব্রেকফাস্টের টেবিলে আর একটা চিঠি এলো। খামের ওপরে সান্দ্রা চোখ বুলিয়ে নিলো। স্টিফেন ভয়ে সচকিত হয়ে রইলো। তবে অহেতুক প্রশ্ন করার স্বভাব নেই সান্দ্রার, সেটা স্টিফেন জানে। হলোও তাই। চিঠিটা দেখলো। কিন্তু কিছুই জানতে চাইলো না।
স্টিফেন গাড়ি নিয়ে বেরোলো! শহর থেকে আট মাইল দূরে একটা বাজার থেকে সে রোজমেরিকে ফোন করলো।
-হ্যালো রোজমেরি, তুমি আর চিঠি লিখো না।
প্রিয়তম স্টিফেন, আমার চিঠি কি তোমার পছন্দ হয়নি? আমার চিঠি পড়তে পড়তে তোমার কি মনে হয়নি যে আমি তোমারই পাশে আছি। তোমাকে আমি প্রতি মুহূর্তে কাছে পেতে চাই স্টিফেন। তোমারো কি তাই মনে হয়?
নিশ্চয়ই মনে হয় রোজমেরি। কিন্তু তোমার জন্য আমার চিন্তা হয়। আমার জন্য তুমি কষ্ট পাও তা আমি চাই না।
-ও সব আমি তোয়াক্কা করি না। ছাড়ো ওসব কথা। তুমি কবে আসছো?
মঙ্গলবার।
–অতোদিন অপেক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় প্রিয়তম। কিন্তু কি আমাকে..
স্টিফেনের কোনো কাজে রোজমেরির আগ্রহ নেই। সে কেবল শুনতে চায় যে স্টিফেন তাকে ভালোবাসে কি না। এই একটি কথাই সে বার বার জিজ্ঞেস করে।
ভালোবাসে ঠিকই। কিন্তু বিবাহিতদের পক্ষে ঘন ঘন ফোন করা, চিঠি দেওয়া, দেখা করতে বলা, এটা কি সম্ভব।
কিন্তু স্টিফেন যদি তার কথার সায় না দেয় তাহলেই রেগে যাবে। তখনই ঐ একই সুরে বলতে হবে তোমাকে আগের মতোই ভালোবাসি প্রিয়তমা। তবেই তার মন ভাঙবে।
তারপর হঠাৎ একদিন রোজমেরি এক অস্বাভাবিক দাবী নিয়ে হাজির হলো তার কাছে। স্টিফেনকে নিয়ে দক্ষিণ ফ্রান্সে যেতে চায়, নতুবা সিসিলি অথবা কোরসিকায় যেখানে তাদের কেউ চিনবে না, সেখানে তারা একসঙ্গে মিলিত হবে।
কিন্তু এই দাবী মেনে নিতে পারেনি স্টিফেন।
এরপর রোজমেরি হাসতে হাসতে আর একটি প্রস্তাব দিলো। সেটা যে কত ভয়ঙ্কর তা তার মাথায় এলো না।
–প্রিয়তম লিওপার্ড, এরকম ভাবে লুকোচুরি খেলা আর ভালো লাগছে না। আমি জর্জকে ডিভোর্স করি, তুমিও সান্দ্রাকে ডিভোর্স নোটিস দাও। তারপর আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করি।
স্টিফেন প্রবলভাবে ঘাড় নেড়ে জানালো, এ সম্ভব নয়। নিজের কবর নিজে খোঁড়ার মতো অবস্থা।
কিন্তু রোজমেরি বেপরোয়া।
-প্রেম মানুষের জীবনে এক অতি প্রয়োজনীয় বস্তু। লোকের কথায় কিছু যায় আসে না।
-না না, তা কখনো হয় না। আমার এতদিনের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠা নিমেষের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে। আমার রাজনৈতিক জীবন একেবারে ধুলোর সঙ্গে মিশে যাবে।
–তোমাকে আর কাজ করতে হবে না। আমার অনেক অর্থ আছে। আমরা পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে বেড়াবো। নতুবা কোনো দ্বীপে আমরা দুজনে বাস করবো। সেখানে কেবল তুমি আর আমি থাকবো।
এসবও ভেবেছে স্টিফেন। কিন্তু এসবই নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। সে উপলব্ধি করলো, এখনো সময় আছে রোজমেরির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার। নতুবা তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে। রোজমেরি কোনোরকম তার আপত্তি শুনবে না। অতএব তাকেই ওর কাছ থেকে সরে আসতে হবে।
তাকে ভালো করে বোঝাতে হবে, তাদের গোপন সম্পর্কের সমাপ্তি এখানেই।
রোজমেরির প্রেম যতই তাকে আকৃষ্ট করুক না কেন, সান্দ্রাকে হারানো তার চলবে না। সান্দ্রার ওপর অন্যায় করা হবে। তাহলে মস্ত অবিচার করা হবে। না সে কোনোমতেই সান্দ্রাকে হারাতে পারবে না। এর জন্য যদি রোজমেরির সঙ্গ ত্যাগ করতে হয়