ওয়েনফ্লিট বলে ওঠেন–কখনোই না। অ্যামি সে ধরনের মেয়েই ছিলো না।
লিউক জিজ্ঞেস করে–ও কী ধরনের মেয়ে ছিলো?
মিস ওয়েনফ্লিট বলেন–ও বাড়ির পরিচারিকা হিসেবে মোটেই ভালো না। তবে আজকাল একজন কাউকে পেলেই বলতে হবে কপাল ভালো। ও অত্যন্ত একরোখা মেয়ে ছিলো। এ ধরনের মেয়ে আমি খুব একটা পছন্দ করি না; তবে মৃত লোকের নিন্দে মন্দ করা ঠিক নয়।
মাথা নেড়ে লিউক সম্মতি জানায়। মিস পিঙ্কারটনের কথা ওর মনে পড়ে।
মিস ওয়েনফ্লিট না থেমে সমানে বলে চলেন–অ্যামি নিজের প্রশংসা খুব পছন্দ করতো। এখানকার একটা অ্যান্টিক দোকানের মালিক মিঃ এলসওয়ার্দি। ভদ্রলোক জলরং দিয়ে মাঝে মাঝে ছবি আঁকেন। অ্যামির দুএকটা স্কেচ উনি করেছিলেন আর তাতেই নিজের সম্পর্কে ওর ধারণা আরও উঁচু হয়ে গেল। ও যে ছেলেটির বাগদত্তা ছিলো–জিম হারভে–একটা মোটর কারখানার মেকানিক, খুব ভালোবাসতো অ্যামিকে। কিন্তু বাসলে কী হবে, প্রায়ই হারভের সঙ্গে ও ঝগড়া করতো। সেই ভয়ঙ্কর রাত্রির কথা আমি কোনোদিন ভুলবো না। অ্যামি দারুণ ঠান্ডায় বাইরে গিয়ে বিশ্রী সর্দিকাশি বাধিয়ে ফিরলো; সেইদিন বিকেল বেলা ও ডাক্তার দেখালো।
লিউক জিজ্ঞেস করলো–কোনো ডাক্তারকে দেখালো?
ডাঃ টমাস, এবং তিনি ওকে সর্দির জন্য এক শিশি ওষুধ দিয়েছিলেন। ও সেটা কিনে বাড়ি ফিরলো। এই ওষুধে কোনো অনিষ্ট হবে না। ও সকাল সকাল শুতে চলে গেল। তারপর ভোর রাতে–প্রায় একটা নাগাদ গোঙানি আরম্ভ হলো। কিন্তু দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। তখন চিৎকার করে ডাকাডাকি করলাম কিন্তু কোনো উত্তর নেই। আমরা ডাকাডাকি করাতে রীড বাড়ির পেছনে গিয়ে দেওয়াল বেয়ে ওপরে ওঠে, ওর ঘরের খোলা জানলা দিয়ে ভেতরে ঢুকে দরজা খুলে দিলো। আহা বেচারী! কী মর্মান্তিক দৃশ্য! কেউ কিছু আর করতে পারলো না–হাসপাতালে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা গেলো।
কী ভাবে মারা গেল? টুপির পেইন্ট খেয়ে?
হা, ওরা কি একটা বললো, অক্সালিক অ্যাসিড নামে এক ধরনের বিষের ক্রিয়ার ফলে। বোতলটা দেখতে প্রায় সর্দির ওষুধের বোতলের মতোই ছিলো। মারা যাবার পর ওষুধের বোতলটা পাওয়া গেল ওর বেসিনের ওপর আর রঙের বোতলটা ছিলো ওর বিছানার পাশে।
আপনার কি একবারও মনে হয়নি যে এটা আত্মহত্যা?
একবারও না। ও যদি আত্মহত্যা করতে চাইতো, তাহলে আরও ভালো কোনো উপায় অবলম্বন করতে পারতো। ও আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে ছিলো না।
লিউক জিজ্ঞেস করলো–তাহলে আপনার কী মনে হয়?
ওয়েনফ্লিট বললেন–আমার মতে এটা একটা দুঃখজনক ঘটনা।
এমন সময় একটা বেড়াল ওয়েনফ্লিটের কাছে এলো। ওয়েনফ্লিট আদর করে বললো-কি রে ওয়াঙ্কিপু, সারাদিন কোথায় ছিলি?
লিউক বললো–ভারী সুন্দর বেড়াল তো। অনেক দিন যাবৎ পুষছেন না কি?
না না, এটা মিস পিঙ্কারটন নামে আমার এক বান্ধবীর বেড়াল। শয়তান ড্রাইভার ওকে চাপা দিয়ে মেরেছে।
গম্ভীর ভাবে লিউক বেড়ালটাকে একবার আদর করলো।
ব্রিজেট দাঁড়িয়ে পড়ে–এবার কিন্তু আমাদের যেতে হবে।
মিস ওয়েনফ্লিট ওদের বিদায় জানিয়ে বললেন–আশা করি আপনাদের সঙ্গে মাঝে মাঝেই দেখা হবে।
ওদের সঙ্গে বাইরে এলেন মিস ওয়েনফ্লিট। লিউক সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে সেই অক্ষত গ্রাম্য সৌন্দর্যের দিকে দৃষ্টি প্রসারিত করে বলল–অপূর্ব সুন্দর আপনাদের এই গ্রাম।
মিস ওয়েনফ্লিটের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।
যখন ওরা বাইরে এলো ব্রিজেট বললো–তুমি কি তোমার অনুসন্ধানের কাজ আরও চালাবে, না এবার আমরা নদীর পার দিয়ে হেঁটে বাড়ির দিকে যাবো? ঐ পথটা কিন্তু খুব সুন্দর।
হাইড স্ট্রীট ধরে ওরা হাঁটতে আরম্ভ করলো। রাস্তার সব শেষের বাড়িগুলোর একটার গায়ে সোনালী অক্ষরে লেখা রয়েছে–অ্যান্টিক।
লিউক সেই বাড়ির জানলা দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে বললো–খুব সুন্দর একটা রুপোর ডিস্ রয়েছে এখানে। আমার পিসিমার একটা এরকম ছিলো। ওরা এটার দাম কী রকম চাইবে?
ভেতরে গিয়ে জিজ্ঞেস করবো?
ব্রিজেট বললো-এখানে তেমন কিছু পাবে বলে আমার মনে হয় না। এলওয়ার্দি তার জিনিষের দাম খুব ভালো করেই জানে।
দরজা খোলাই ছিল। লিউক বাঁ-দিকের একটা ঘরে ঢুকে একটা রুপোর ডিস্ তুলতেই কুইন অ্যান্ ওয়লনাট ডেস্ক-এর আড়াল থেকে এক ভদ্রলোক ওর দিকে এগিয়ে এলেন।
ও, মিস কনওয়ে, কি ভাগ্য আপনি এসেছেন।
নমস্কার মিঃ এলসওয়ার্দি।
লিউকের সঙ্গে আলাপ হতেই ভদ্রলোক বললো–খাঁটি ইংলিশ রুপোর ডিস, খুব ভালো জিনিস। বিক্রি করতে ইচ্ছে করে না।
ব্রিজেট বললো-খাঁটি শিল্পীর মেজাজ।
এলসওয়ার্দি ব্রিজেটকে বললো–আমার শিল্পী খেতাব সহ্য হবে না। লিউক বলে–কিন্তু আপনি তো একজন শিল্পীও? শুনলাম আপনি জলরঙে ছবিও আঁকেন?
এলসওয়ার্দি জিজ্ঞেস করলো–এ কথা আপনাকে কে বললো? এ জায়গাটা সত্যিই অদ্ভুত-কারুর কিছু গোপন রাখার উপায় নেই এবং এই জন্যই এ জায়গাটা আমার এত পছন্দ।
লিউক এলসওয়ার্দির প্রতি প্রশ্ন করে–মিস ওয়েনফ্লিট আমাদের বললেন যে আপনি নাকি অ্যামি গিবসের কয়েকটি স্কেচ করেছেন?
এলসওয়ার্দি বলেন–ও, অ্যামি? করেছিলাম কি? তা হয়তো করে থাকতে পারি।–তাঁর ভাবভঙ্গির মধ্যে যেন একটা বিচলিত ভাব।
মেয়েটি কিন্তু খুব সুন্দরী ছিলো।–ব্রিজেট বললো।
তারপর এলসওয়ার্দি লিউকের দিকে ফিরে বললেন–আপনার যদি রুপোর তৈরি জিনিষপত্রে আগ্রহ থাকে তাহলে আপনাকে আমি অপূর্ব একজোড়া রূপোর পাখী দিতে পারি।