***
মিস ওয়েনফ্লিটের সঙ্গে সাক্ষাৎকার
মিঃ ওয়েক বললেন–দেখা যাক আর কার নাম মনে পড়ে-মিসেস রোজ, বেচারা বুড়ো বেল আর এলকি এবং হ্যারি কার্টারের বাচ্চা।
ব্রিজেট বললো-অ্যামি গিব মারা গেল এপ্রিলে।
হ্যাঁ, একটা ভুলের ফলে বেচারার প্রাণ গেল।
লিউক দেখলো যে ব্রিজেট একটু বিরক্ত হলো–অ্যামি গিবসের প্রসঙ্গ উঠলেই ব্রিজেটের ভাবান্তর হয়, অথচ তার কারণটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না।
লিউক মিঃ ওয়েকের কাছে বিদায় নিয়ে বাইরে এসে প্রশ্ন করে–ঠিক করে বলতো এই অ্যামি গিবস্ মেয়েটি কে?
লিউক উত্তরে লক্ষ্য করলো ওর গলায় যেন একটা বাধো বাধো স্বর–অ্যামি ছিলো বাড়ির পরিচারিকা। এত বড় অপদার্থ আমি দুটি দেখিনি।
এই জন্যই কি ওর চাকরিটা গিয়েছিলো?
না। ও মাঝরাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাড়ির বাইরে একটি ছেলের সঙ্গে ফস্টিনস্টি করতে। গর্ডন এ সমস্ত ব্যাপার পছন্দ করতো না। তাই ওকে নোটিশ দেয় আর এই নিয়ে অ্যামি প্রচণ্ড সোরগোল করে।
ওকি দেখতে ভালো ছিলো?–প্রশ্ন করে লিউক।
খুবই সুন্দরী।
ওই কি সেই টুপির রং খেয়েছিলো ওষুধ মনে করে?
হ্যাঁ।
ওর সত্যিই কি বুদ্ধি কম ছিলো?
মোটেই না, বরঞ্চ-বেশি মাত্রায় বুদ্ধিমতী ছিলো।
আড়চোখে লিউক ব্রিজেটের দিকে তাকালো। প্রতিটি কথায় উত্তর দিচ্ছিলো ব্রিজেট অত্যন্ত একঘেয়ে স্বরে। ওর কোনো উৎসাহ ছিলো না।
ইতিমধ্যে একজন লোক ব্রিজেটকে টুপি তুলে অভিবাদন জানালো। ব্রিজেট তার সঙ্গে লিউকের পরিচয় করিয়ে দিলো।
এ হচ্ছে আমার এক দূর-সম্পর্কের ভাই–মিঃ ফিৎস্ উইলিয়াম। একটা বই লেখার জন্য এখানে এসেছে। আর ইনি হচ্ছেন মিঃ অ্যাবট।
ইনিই সেই উকিল, যিনি টমি পিয়ার্সকে চাকরি দিয়ে রেখেছিলেন। ভদ্রলোকের দিকে লিউক উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো।
কী বই লিখছেন? উপন্যাস?
গণগাঁথা।–ব্রিজেট বলে।
তা হলে তো বেছে বেছে ভালো জায়গাই এসেছেন। খুব উপযুক্ত জায়গা আমাদের এই গ্রাম।
লিউক বলে–আচ্ছা, এ ব্যাপারে আপনি কিছু সাহায্য করতে পারেন না?
নাঃ, তেমন কিছু তো মনে পড়ছে না। হয়তো শুনেছি–তবে
আচ্ছা, এখানে লোকজনেরা কি ভূতে বিশ্বাস করে?
সে ব্যাপারে আমি সত্যিই কিছু জানি না।–উত্তর দেন উকিলমশাই।
কোনো ভূতুড়ে বাড়ি নেই এখানে?
অন্ততঃ, আমার জানা নেই।
লিউক বললো–শুনেছি, এখানে টমি না কি যেন নামে একটি ছেলে ছিলো–আপনার অফিসে এক সময়ে কাজ করতো। লোকে বলে যে, ও নাকি এখনও এখানেই চলাফেরা করে।
মুখ সাদা হয়ে যায় মিঃ অ্যাবটের। উনি বলেন–টমি পিয়ার্স? সেই অতি নচ্ছার পাজি ছেলেটা?
এই ধরনের আত্মা সব সময়ই দুষ্ট প্রকৃতির হয়ে থাকে।
ওর ভূত কে দেখেছেন? ঘটনা কী?
এ ধরনের ঘটনার সাক্ষী হিসেবে বিশেষ কারো নাম বলা যায় না।
আমারও তাই বিশ্বাস।
চতুরতার সঙ্গে লিউক প্রসঙ্গান্তরে যায়।
তাহলে তো টমাসের সঙ্গে আপনার আলাপ হওয়ার দরকার। বেশ ভালো লোক এই টমাস। বৃদ্ধ আম্বলবির মত নয়।
উনি কি খুব প্রতিক্রিয়াশীল ছিলেন?
একেবারে মাথামোটা–একগুয়ের রাজা।
ব্রিজেট প্রশ্ন করে–জল সরবরাহের প্রশ্নে আপনার সঙ্গে শুনেছি দারুণ ঝগড়া ছিলো?
অ্যাবটের মুখ পিঙ্গলবর্ণ হয়ে ওঠে।
আম্বলবি সব সময়ে যে-কোনো প্রগতিমূলক কাজের একেবারে বিরোধী ছিলেন।–কর্কশ স্বরে মিঃ অ্যাবট জবাব দেন। তারপর বলেন যাকগে, এবার আমাকে বিদায় নিতে হচ্ছে। যদি আমাকে দিয়ে কোনো কাজ হয় বলবেন মিঃ–
ফিৎস্ উইলিয়াম।মনে করিয়ে দেয় লিউক।
ওরা এগিয়ে যায়। চলতে চলতে ব্রিজেট বলে আমি তোমার পদ্ধতিটা লক্ষ্য করলাম। তুমি নিজে থেকে যাহোক কিছু বলে লোককে উকে দিয়ে তাদের কাছ থেকে কথা টেনে বের করার চেষ্টা করছে।
লিউক অস্বস্তি বোধ করছিলো। ওর এরপর কী করা উচিত ভেবে ঠিক করার আগেই ব্রিজেট বলে–তুমি যদি অ্যামি গিবসের কথা আরও জানতে চাও তবে তোমায় আমি একজনের কাছে নিয়ে যেতে পারি।
সে কে?
মিস ওয়েনফ্লিট নামে এক ভদ্রমহিলা।
লিউক বলল–তাই নাকি? তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
লিউক যেতে যেতে দেখলো সেই প্রকাণ্ড জর্জিয়ান বাড়ি। ব্রিজেট বললো–এটা হচ্ছে। উইচ হল-এখন ওটাই লাইব্রেরি।
হলের গায়ে একটা ছোটো বাড়ি। ব্রিজেট ফটকের দরজা খুলতেই ভেতর থেকে এক বয়স্কা ভদ্রমহিলা বেরিয়ে এলেন।
ব্রিজেট বলে-নমস্কার মিস ওয়েনফ্লিট। ইনি মিঃ ফিৎস উইলিয়াম।–লিউক নমস্কার জানায়। ইনি মৃত্যু, গ্রাম্য সংস্কার আর নানা রকম সব বিরক্তিকর ব্যাপারের ওপর একটা বই লিখছেন।
ভদ্রমহিলা বললেন–তাই নাকি? খুব ভালো কথা।
আমি ভাবলাম যে আপনি অ্যামির ব্যাপারে কিছু তথ্য দিতে পারবেন। ব্রিজেট বলে।
ও, অ্যামি? হা হা অ্যামি গিবস্–মিস ওয়েনফ্লিট বলেন।
মহিলা এবার যেন লিউককে যাচাই করে নিতে চাইলেন।
দয়া করে ভেতরে আসুন, আমার পরে বেরোলেও চলবে। আমার তেমন কিছু দরকারী কাজ নেই, বাড়ির জন্য টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনতে যাচ্ছিলাম।
চেয়ার টেনে ওদের বসতে বলে মিস ওয়েনফ্লিট বললেন–আমি নিজে বিড়ি, সিগারেট খাই না, তাই তোমার কাছে সিগারেট নেই।
তারপর ওয়েনফ্লিট বললেন–আপনারা সেই দুর্ভাগিনী মেয়ে অ্যামির সম্পর্কে জানতে চান? মারাত্মক একটা ভুলের ফলে ওর মৃত্যু হলো।
আচ্ছা, এটা কি আত্মহত্যা হতে পারে না?–প্রশ্ন করে লিউক।