তা অবশ্য ঠিক।
এবার লিউক অকুতোভয়ে বললো–আমি মিস কনওয়েকে বলেছিলাম যে, আপনাদের এখানে যারা সম্প্রতি মারা গেছেন তাদের নামের একটা তালিকা পেলে আমার কাজের খুব সুবিধে হতো। আপনি যদি তেমন একটা কিছু দিতে পারেন তবে তার থেকে বিচার করে আমি কাজ আরম্ভ করে দিতাম।
আমাদের এই চার্চের কর্মী গাই এ ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করতে পারতো, তবে ও কানে শুনতে পায় না। তাছাড়া, বেশ কিছু সংখ্যক দুর্ঘটনাও কয়েকটা প্রাণ নিয়েছে। আমাদের এই গ্রামটার খুবই দুঃসময় চলছে।
লিউক বললো–কেউ কেউ বলে যে কখনো কখনো কোনো ব্যক্তিবিশেষের উপস্থিতির ফলে দুঃসময় দেখা দেয়।
ঠিকই বলেছেন, জোনার সেই পুরাকথা। কিন্তু আমাদের এখানে কোনো বাইরের লোক এসেছে বলে আমার মনে হয় না। যাই হোক, অল্প কয়েকদিন আগেই গেলেন দুজন। ডাঃ আম্বলবি আর ল্যাভিনিয়া পিঙ্কারটন। ডাঃ আম্বলবি একজন সাচ্চা লোক ছিলেন–
শত্রুও নিশ্চয়ই ছিলো?–লিউক কথাটা বলেই যোগ করে–মানে, ওঁর বন্ধুদের কাছ থেকে যতটা শুনেছি তার ওপর নির্ভর করেই এ কথা বলছি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলেন মিঃ ওয়েক।
ভদ্রলোক একেবারে মনখোলা মানুষ ছিলেন। স্থানীয় গরীব মানুষদের মধ্যে খুবই সুনাম ছিলো। তবে এ কথা অস্বীকার করা চলে না যে, ডাঃ আম্বলবির মৃত্যুর ফলে ওঁর পেশাগত অংশীদার ডাঃ টমাসের বহুলাংশেই সুবিধে হবে।
কী রকম?
আমার মনে হয় টমাস খুবই বুদ্ধিমান লোক–ডাঃ আম্বলবিও এই কথাই বলতেন। কিন্তু ওঁদের দুজনের মধ্যে খুব একটা সদ্ভাব ছিলো না। এ নিয়ে হয়তো টমাসের দুশ্চিন্তাও ছিলো। আর এই দুশ্চিন্তাই ওকে আরও দুর্বল করে ফেলতো। মুখ দিয়ে কথাই বের হতো না। এই মাত্র অল্প কদিনেই ওর আচরণে একটা আশ্চর্যরকম পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি। যেন, অনেক সতেজ হয়ে উঠেছে–ব্যক্তিত্বও বেড়েছে, একটা আত্মবিশ্বাস খুঁজে পেয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিক মতবাদে টমাসের খুব ঝোঁক আর আম্বলবির ছিলো পুরানো পদ্ধতির প্রতি অবিচল নিষ্ঠা। এই নিয়ে এঁদের মধ্যে বেশ কয়েকবার ঝগড়াও হয়েছিলো। তা ছাড়া পারিবারিক ব্যাপার নিয়েও ঝগড়া হয়েছে।
লর্ড হুইটফিল্ড বলেছিলেন যে, ওঁর একরকম বিষাক্ত ঘা হয়েছিলো।
হ্যাঁ, সামান্য একটু ছড়ে গিয়েছিল মাত্র। সেটাই পরে বিষাক্ত হয়ে ওঠে। ডাক্তাররা তাদের পেশার খাতিরে অনেক সময় নানা রকম মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে থাকে।
তা তো নয়ই।–জবাব দেয় লিউক।
হঠাৎ সচেতন হয়ে ওঠেন মিঃ ওয়েক–আমি কিন্তু প্রসঙ্গ থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি। আমরা মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যত কুসংস্কার আছে, আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে এখানে যাদের মৃত্যু হয়েছে-এই নিয়ে আলোচনা আরম্ভ করেছিলাম। ল্যাভিনিয়া পিঙ্কারটন–আমাদের চার্চের একজন সেবিকা ছিলেন। খুবই নিষ্ঠাবতী মহিলা। আর ছিলো সেই হতভাগী মেয়ে আমি গিব। ওর মৃত্যুর মধ্যে আপনি হয়তো কিছু খুঁজে পেলেও পেতে পারেন মিঃ ফিস্ উইলিয়াম্ওঁর মৃত্যু আত্মহত্যা ঘটিত এমন কথা কেউ কেউ বলেছিলো আর এ ধরনের ঘটনায় ভৌতিক-সংস্কার থাকা বিচিত্র নয়।
মূল্যবান খবর দিলেন।–লিউক বলে।
এরপর গেল টমি পিয়ার্স–চার্চে যুগ্মসঙ্গীত করতো ছেলেটি। ছেলেটি ছিলো এক নম্বরের বিচ্ছু। শেষ পর্যন্ত ওকে চার্চ থেকে বিদায় করতে হয়েছিলো। আমরাও ওকে পোস্ট অফিসে টেলিগ্রাম বিলি করার একটা কাজ যোগাড় করে দিয়েছিলাম, কিন্তু সেটা ও রাখতে পারলো না। ওর মার জন্য দুঃখ হয়–মহিলা যেমন পরিশ্রমী তেমনি ভালো মনের মানুষ। মিস ওয়েনফ্লিট ছোকরাকে লাইব্রেরির জানলা-দরজা পরিষ্কার করার একটা কাজ যোগাড় করে দিয়েছিলেন। লর্ড হুইটফিল্ড কিন্তু প্রথমটায় আপত্তি করেছিলেন–সেই বাড়িতে ঢুকতে দিতেই চাননি। অবশ্য পরে রাজী হয়ে গেলেন–কিন্তু রাজী না হলেই ভালো ছিল।
কেন?
ছেলেটা ওই কাজ করতে গিয়েই তো মারা গেল। একেবারে ওপরতলার জানলা পরিষ্কার করছিলো। হয়তো মাথা ঘুরে ওই উঁচু থেকে পড়ে যায়, আর তারপরেই ছেলেটি মারা যায়।
কৌতূহলী হয়ে লিউক বললো–আচ্ছা, ওকে কি কেউ পড়ে যেতে দেখেছিলো?
নাঃ, বাড়ির পেছনে বাগানের দিকটায় পড়েছিলো। মনে হয়, অন্ততঃ আধঘণ্টা ওখানে অজ্ঞান অবস্থায় ছিলো।
প্রথম ওকে কে দেখে?
মিস পিঙ্কারটন। এই ভদ্রমহিলাও মাত্র কদিন আগে গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেলেন। টমি মারা যাবার দিন ইনি বাগানে এসেছিলেন কতকগুলো গাছের চারা নিতে। এসে দেখলেন এই কাণ্ড।
উনি নিশ্চয়ই খুব হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন?–লিউক বলে।
আপনি যতটা ভাবছেন, তার চেয়েও অনেক বেশি…
ব্রিজেট বলে–আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে মিঃ ওয়েক, ওর স্বভাবের মধ্যে একটা বিরক্তিকর নিষ্ঠুরতা ছিলো?
মিঃ ওয়েক বললেন–তা, আমি জানি মিস কনওয়ে কিন্তু ওর অল্প বুদ্ধিই তার জন্য দায়ী। এমন দেখা যায় যে, কোনো পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে শিশুর মস্তিষ্ক। তাদের মধ্যে যে নিষ্ঠুরতা বিরাজ করে, সে কথা তারা নিজেরাও বুঝতে পারে না।
ব্রিজেট বললো–আপনি ঠিক বলেছেন। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে শিশুর মস্তিষ্ক বোধহয় প্রকৃতির রাজ্যে দুনিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক দুর্ঘটনা..।
লিউকের মনে হলো যেন বিশেষ কারো কথা ভেবেই ব্রিজেট এ কথাগুলো বললো।
লিউক ফিৎস্ উইলিয়াম ভাবতে বসলো ব্রিজেট কাকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্যটা করলো।